রবিবার ● ১ জানুয়ারী ২০১২
প্রথম পাতা » বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি » আজ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মদিন
আজ বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মদিন
বাঙালী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মদিন আজ রবিবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন। সত্যেন বোস থেকেই ‘বোসন’ নামের উৎপত্তি। চলতি বছর সার্নের বিজ্ঞানীদের ‘হিগস বোসন’ শনাক্ত করা নিয়ে বিজ্ঞান বিশ্বে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল উত্তেজনা। বলা হচ্ছে, হিগস বোসন শনাক্ত হলে সমাধান হবে বস্তুর ‘ভর’ রহস্যের। বিজ্ঞান বিশ্বের এই উত্তেজনার সঙ্গে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গৌরবময় অধ্যায় জড়িত। ‘বোসন’ নামটি এসেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক সময়ের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম থেকে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার লগ্ন ১৯২১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা সূত্রে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক থাকা অবস্থায় তাঁর এক গবেষণার সূত্র ধরে পদার্থবিজ্ঞানে পরিসংখ্যান বলবিদ্যার সূচনা হয়। পদার্থবিদ্যায় বসু প্রবর্তিত পরিসংখ্যানের নাম তাই ‘বসু পরিসংখ্যান।’ এই পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে জগত বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন একক পরমাণুযুক্ত গ্যাসের একটি নতুন সংখ্যাতত্ত্ব প্রকাশ করেন, যার নাম দেয়া হয় ‘বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন।’ যে সব মৌলিক কণা তথা প্রাথমিক কণার ক্ষেত্রে এই সংখ্যায়ন কাজ করে তাদের বোসন বলে। ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি কণাকে বলে প্রাথমিক কণা। আমাদের বিশ্বের সমসত্ম প্রাথমিক কণাকে এদের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে দুটি দলে ভাগ করা হয়। একটি ভাগকে বলা হয় বোসন ও অপর ভাগকে বলা হয় ফার্মিয়ন। বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে হয় ‘বোসন’ আর ইতালির বিজ্ঞানী এনরিকো ফামির্র নামে ‘ফার্মিয়ন।’ সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন বাংলার আরও দুই বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুলস্ন চন্দ্র রায়।
তিনি ছিলেন অসাধারণ শিক্ষক। ছাত্রদের পড়াতে গিয়েই তিনি কোয়ন্টাম পদার্থবিজ্ঞানের জনক ম্যাঙ্ পস্নাঙ্কের সূত্রের অসঙ্গতি টের পান। আর এ নিয়ে তাঁর গবেষণার ফলই ‘বসু পরিসংখ্যান।’
দেশ বিভাগের প্রাক্কালে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। যোগ দেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজে। সেখানে ১৯৫৬ সাল পর্যনত্ম অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন দুই বছর। তারপর অবসর নেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বিশ্ব পরিচয়’ বইটি সত্যেন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন। ভারত সরকার ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাব দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করে। আজীবন মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রসারের জন্য কাজ করে গেছেন তিনি। বাংলা ও বাংলাভাষার প্রতি তাঁর ছিল অগাধ ভালবাসা। ১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রম্নয়ারি কলকাতায় নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।