শনিবার ● ২৫ জানুয়ারী ২০১৪
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » মোবাইল ব্যাংকিং-এ শীর্ষে আফ্রিকা, গ্রাহক হারাচ্ছে ভারত
মোবাইল ব্যাংকিং-এ শীর্ষে আফ্রিকা, গ্রাহক হারাচ্ছে ভারত
বিশ্বজুড়ে ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বর্ধনশীল শাখা হলো এখন মোবাইল ব্যাংকিং । বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই এখন এই ব্যাংকিং সেবা চালু রয়েছে। সমগ্র বিশ্বেই এই সেবার গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সম্প্রতি মোবাইল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন এমইএফ ১৩ দেশের ১০ হাজার গ্রাহকের ওপর এক জরিপ চালায়। জরিপের প্রতিবেদনে দেখা যায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকার নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়া। বিজনেস টেক গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয়।
এমন এক সময় ছিল যখন ব্যাংকে গিয়ে টাকা ওঠানো থেকে শুরু করে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন করতে হতো। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবাদে এখন ঘরে বসেই প্রায় সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে।
সবসময় ব্যাংকে গিয়ে অর্থ লেনদেনের বেশকিছু অসুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- যখন-তখন প্রয়োজনমতো অর্থ পাওয়া যায় না। রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে তত্ক্ষণাত্ হাসপাতালে নিতে অর্থের প্রয়োজন পড়ে। আবার কোনো দুর্গম এলাকায় গিয়েও ব্যাংক পাওয়া যায় না। তখন মোবাইল ব্যাংকিংই মূল ভরসা।
সমগ্র বিশ্বে এ খাতে আফ্রিকা সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে। এমইএফ তাদের প্রতিবেদনে জানায়, আফ্রিকায়ই সবচেয়ে বেশি মোবাইল ব্যাংকিং-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি একটি জরিপের মাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশ করে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ১৫ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৭ শতাংশ বিশেষায়িত বিভিন্ন সেবা ব্যবহার করেন।
খুব নিয়মিতই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করছে। কিন্তু বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো এ সেবার বাইরে রয়ে গেছে। এ গ্রাহকদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেবা চালু করেছে।
আফ্রিকার অঞ্চলে এ সেবার প্রসারের বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেছেন বিশ্লেষকরা। স্বাভাবিকভাবেই আফ্রিকার অনেক অঞ্চল এখনো দুর্গম। এ কারণে এ অঞ্চলের ব্যাংকগুলোর অবস্থানও একটু দূরে দূরে। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হওয়ার পর দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অনেক আফ্রিকানকেই এখন ব্যাংকে আসতে হয় না। এছাড়া এ অঞ্চলের ব্যাংকগুলো মোবাইল ব্যাংকিং খাতের প্রসারে বেশকিছু কার্যকরী সেবা চালু করেছে। যেগুলোর গ্রাহকসংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে।
এদিকে ভারত, মেক্সিকো ও ব্রাজিলে মোবাইল ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা এ দেশগুলোর অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, দেশগুলোর গ্রাহকরা এখনো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি।
কিন্তু আফ্রিকার প্রেক্ষাপট একদমই বিপরীত। বিশ্বের ব্যাংকিং লেনদেনের ৬৬ শতাংশই এখন মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে হচ্ছে । এ খাতে আফ্রিকার নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়া শীর্ষস্থান দখল করে আছে। এ খাতে নাইজেরিয়ার গড় ৭৬, দক্ষিণ আফ্রিকার ৭৮ ও কেনিয়ার ৯২ শতাংশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন উন্নত বাজার ও উন্নয়নশীল বাজারের মধ্যে মিল বন্ধ রাখার চেষ্টা করছে। এতে করে তাদের গ্রাহকসংখ্যা উন্নত বাজারগুলোয় যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে উদীয়মান বাজারগুলোয় একই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ৪৩ শতাংশ গ্রাহক তাদের ব্যাংক ব্যালান্স সেলফোনের মাধ্যমে চেক করেন। এক্ষেত্রে কেনিয়ার গ্রাহকদের সেলফোন ব্যবহারের হার তুলনামূলক কম।
কেনিয়ার ১৫ শতাংশ গ্রাহক সেলফোনে তাদের ব্যালান্স চেক করেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের গ্রাহকরা সেলফোনে অল্পই তাদের ব্যালান্স চেক করেন।
কেনিয়ার প্রায় ৪৫ শতাংশ গ্রাহক সেলফোনের মাধ্যমে তাদের অর্থ লেনদেন করেন। এ হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটিতে এ ধরনের লেনদেনের প্রবণতা বর্তমানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকদের মধ্যেও লক্ষ করা যাচ্ছে কলে এমইএফ তাদের প্রতিবেদনে জানায়। কেনিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নাম হচ্ছে এম পেসা।
বর্তমানে দেশটির প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহক এ সেবা ব্যবহার করছেন। প্রতিদিন এ সেবার মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটিবার অর্থের লেনদেন হয়ে থাকে। এ সেবার মাধ্যমে গ্রাহকরা অর্থ পরিশোধ, উত্তোলন ও লেনদেনের মতো সেবা পান। ২০১০ সালে এ সেবা চালু করে নিডব্যাংক ও ভোডাকম। চালু করার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এ সেবার গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখে।
নিডব্যাংকের ডিজিটাল ইনোভেশন ও পেমেন্ট বিভাগের প্রধান ইলজি ওয়েজনার বলেন, ‘আমরা এম পেসার মাধ্যমে কেনিয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং খাতে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। গ্রাহকসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির মাধ্যমে কেনিয়ার অধিকাংশ মানুষকে এ সেবার আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
এম পেসার মতো অনেক সেবা রয়েছে, যা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের অভিমত আগামীতে আফ্রিকার মোবাইল ব্যাংকিং খাত আরো শক্তিশালী হবে।