সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা, নভেম্বর ২৯, ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১
ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |
শুক্রবার ● ৩ জানুয়ারী ২০১৪
প্রথম পাতা » নিউজ আপডেট » পানির চেয়েও দুধের দাম কম !!!
প্রথম পাতা » নিউজ আপডেট » পানির চেয়েও দুধের দাম কম !!!
৯৬৪ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৩ জানুয়ারী ২০১৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পানির চেয়েও দুধের দাম কম !!!

আশীষ-উর-রহমান ও মাহাবুুবুল হক, ঈশ্বরদী থেকে

যারপরনাই সস্তার তুলনা দিতে লোকে বলে ‘পানির দাম’। পাবনার ঈশ্বরদীতে এখন বোতলজাত পানির দামের চেয়েও দুধের দাম কম। এক লিটার পানির দাম ৩০ টাকা (এখানে আধা লিটারের বোতল ১৫ টাকা) আর খামারিরা দুধ বিক্রি করছেন ২৫ টাকা লিটার। কিন্তু প্রতি লিটার দুধ উৎপাদনে তাঁদের খরচ পড়ছে ৪৬ টাকার বেশি।
হরতাল-অবরোধের কারণে পাবনার বাইরে দুধ পাঠানো প্রায় বন্ধ। তাই দাম পড়ে গেছে। প্রতিদিন ৩০০ লিটারের বেশি দুধ হয়-এমন একটি খামারের মালিক জানালেন, এখন তাঁর দৈনিক ক্ষতি প্রায় ছয় হাজার ৩০০ টাকা। এই পরিস্থিতিতে এখানকার দুধ উৎপাদনকারীরা বাস্তবিকই চোখে সরষে ফুল দেখছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার আমরা ঈশ্বরদী সদরের লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের বরমপুর গ্রামের একটি দুগ্ধ খামারে গিয়েছিলাম। ‘তন্ময় ডেয়ারী ফার্ম’ নামের এই খামার চালু হয়েছে ১৯৯৪ সালে। এখন গাভি ৫০টি, বকনা বাছুর ২০টি ও এঁড়ে ১২টি। সব মিলিয়ে গৃহপালিত চতুষ্পদ ৮২টি। এগুলো সংকর জাতের। প্রতিটি গাভি দুধ দেয় ১৫ থেকে ২৭ লিটার পর্যন্ত। খামারের মালিক আমিরুল ইসলাম খামারের আয়-ব্যয়ের যে হিসাব দিলেন, তা রীতিমতো ভয়ানক।

দুগ্ধ খামারিদের যে কী দুর্দিন যাচ্ছে, একটু ধৈর্য ধরে এই হিসাবে চোখ বোলালেই সবাই তা বুঝবেন। প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধ হয়-এমন খামারের জন্য অন্তত ৫০টি গাভি প্রয়োজন। এর মধ্যে ২৫-৩০টির নিয়মিত দুধ হবে। বাছুর থাকবে ৩২টি। এখানকার খামারিরা মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণ-এমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেই তাঁরা দুধ দেন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দুধের দাম থাকে ৩৮ থেকে ৪২ টাকা লিটার। সারা বছরের গড় ৪০ টাকা। এতে প্রতিদিন ৩০০ লিটার দুধের দাম আসে ১২ হাজার টাকা। হরতাল-অবরোধের কারণে এখন আয় হচ্ছে সাড়ে সাত হাজার টাকা।

এবার খরচের পর্ব। এসব গরুকে তৈরি করা দানাদার খাবার এবং সঙ্গে খড় বা ঘাস খাওয়াতে হয়। দানাদার খাবার ৩৫ টাকা কেজি। তবে খরচ কমানোর জন্য এই খাবারের সঙ্গে ভুসি মেশানো হয়। দাম পড়ে ২৫ টাকা। গাভিগুলোর দৈনিক খোরাক ছয় কেজি। ৫০টি গাভির খোরাকি ব্যয় সাড়ে সাত হাজার টাকা। প্রতিটি বাছুরের তিন কেজি খোরাকি হিসেবে ৩২টির দৈনিক খাবারের ব্যয় দুই হাজার ৪০০ টাকা। দানাদার খাবারের সঙ্গে দৈনিক এক হাজার ২০০ আঁটি খড় (অথবা তাজা ঘাস, এর দাম আরও বেশি) লাগে। প্রতি আঁটি আড়াই টাকা করে খড় বাবদ লাগে তিন হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন এই খামারে খাদ্য লাগে ১২ হাজার ৯০০ টাকার।
খামারে শ্রমিক চারজন। তাঁদের দৈনিক মোট বেতন ৮০০ টাকা। বিদ্যুৎ ও আনুষঙ্গিক আরও ১০০ টাকা। ওষুধ ও চিকিৎসক বাবদ গড়ে দৈনিক খরচ ১০০ টাকা। সাকল্যে প্রতিদিন খামারের পেছনে খরচ হচ্ছে ১৩ হাজার ৯০০ টাকা। দুধ বিক্রি করে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন আয় ১২ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিদিন লোকসান এক হাজার ৯০০ টাকা। বার্ষিক লোকসান দাঁড়ায় প্রায় ছয় লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

স্বাভাবিক সময়ে খামারি এই লোকসান মেটান বাছুর বিক্রি করে। গড়পড়তা প্রতিটি বাছুর বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকায়। এই খাত থেকে নয় থেকে দশ লাখ টাকা আসে।
‘তাহলে এত খেটে লাভ কী দাঁড়াল? আয়-ব্যয় তো সমান’-এ কথায় আমিরুল ইসলাম হেসে বললেন, ‘লাভটি হলো গোবর।’ ‘কী রকম?’ তিনি ব্যাখ্যা করলেন, এই ৮২টি গরু বছরে যে গোবর ত্যাগ করে, তা আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বিক্রি করা যায়। দুগ্ধ খামারের গোবরটিই হলো লাভ। তিনি দুঃখ করে বললেন, ‘দুধের নয়, আসলে নাম হওয়া উচিত গোবরের খামার।’ হরতাল-অবরোধের কারণে লোকসান আরও বেড়েছে। দুধের দাম নেমে এসেছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা লিটার।

আমিরুল জানালেন, তিনি খামারটি চালাতে পারছেন; কারণ, এই গরুগুলো তাঁর কেনা নয়। ১৯৯৪ সালে ১৪ হাজার ৬০০ টাকায় তিনি একটি গাভি কিনেছিলেন। সেই গাভির বাচ্চা, তাদের বাচ্চা-এভাবে এখন চতুর্থ প্রজন্মে এই ৮২টি গরু হয়েছে খামারে। এখন এসব গাভির বাজারমূল্য প্রতিটি কমপক্ষে এক লাখ ১০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।
কেউ যদি এমন একটি খামার নগদ টাকায় করতে যান তবে লোকসান অনিবার্য। এমন বাস্তব উদাহরণ আশপাশেই রয়েছে। জাতীয় পদকপ্রাপ্ত ঈশ্বরদীর কৃষক সিদ্দিকুর রহমান ২০০৮ সালে ১৬টি গরু কিনে খামার শুরু করেছিলেন। তিনি ব্যাংকঋণ নিয়ে ক্রমান্বয়ে গরু কিনে ২৭৫টি গরুর খামার করেছিলেন। তিনি জানালেন, দুই কোটি তিন লাখ টাকা লোকসান দিয়ে ২০১২ সালে খামার বন্ধ করে দিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। এখন ব্যাংকের ঋণের বোঝা হালকা করার চেষ্টা করছেন চাষাবাদের আয় থেকে। ছলিমপুর ভারইমারির আরেক জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক আবদুল মোত্তালিব কিতাব মণ্ডল ২০০ গরুর খামার করে লোকসান গুনেছেন ২০ লাখ টাকা। এখন গরু আছে ৫০টি। ভাবছেন, খামার বন্ধ করে দেবেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মহির উদ্দিন জানালেন, ঈশ্বরদীতে ছোট-বড় মিলিয়ে দুগ্ধ খামার আছে ২৮২টি। বার্ষিক দুধ উৎপাদন ২৫ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে খামার লাভজনক হয়ে উঠতে পারছে না। দুধ বিক্রিতে কোনো লাভ নেই। জৈবসার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির মতো বিকল্প ব্যবস্থা না করলে দুগ্ধ খামার লাভজনক হবে না। এর মধ্যে এই হরতাল-অবরোধ খামারিদের অস্তিত্ব সত্যিই বিপন্ন করে তুলেছে।- পি এ



পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
আইটি দক্ষতা উন্নয়নে বেসিস ও সিসিপ এর মধ্যে চুক্তি
নারী সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মীদের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ
অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপে ক্যাসপারস্কি’র নতুন ফিচার
‘সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ও ডাটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্তি’ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত
যাত্রা শুরু করলো তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্লাটফর্ম ‘ইউনেট’
সপ্তাহব্যাপী ‘পিক-আপ’ ক্যাম্পেইনে ফুডপ্যান্ডা দিচ্ছে বিশেষ ছাড় ও ভাউচার
ফ্যাশন ও স্থায়িত্বে জেন-জি দের পছন্দ ইনফিনিক্স হট ৫০সিরিজ
স্পার্ক গো ওয়ানের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এলো টেকনো
প্রিয়শপ কো-ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড জিতলো মাস্টারকার্ড এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪
এআই ও অটোমেশনের অগ্রগতিতে একসাথে কাজ করবে গ্রামীণফোন ও এরিকসন