বুধবার ● ২ অক্টোবর ২০১৩
প্রথম পাতা » আলোচিত সংবাদ » অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল সম্প্রচারে আসবে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল গুলো
অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল সম্প্রচারে আসবে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল গুলো
দেশের সব স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলকে টিরেস্ট্রিয়াল সম্প্রচার সুবিধা দিতে তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) নির্দেশনার আলোকে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সম্প্রচারের মানোন্নয়নের পাশাপাশি বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৫ সালের মধ্যে প্রচলিত অ্যানালগ পদ্ধতি পরিবর্তন করে ডিজিটাল সম্প্রচারব্যবস্থা চালুর জন্য সদস্য দেশগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে আইটিইউ। এ সময়ের মধ্যে যেসব দেশ এটি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হবে, সেসব দেশে টেলিভিশন দেখতে হবে ডিজিটাল টু অ্যানালগ কনভার্টার কিনে। এতে ছবি ও শব্দের মান তুলনামূলক খারাপ হবে।
আইটিইউর নির্দেশনা অনুসরণ করে এরই মধ্যে ২৯টির বেশি দেশ অ্যানালগ সম্প্রচারব্যবস্থা পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ ডিজিটাল সম্প্রচারব্যবস্থা চালু করেছে। এ ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে আরো ১২টি দেশ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব দেশকেই এ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ফলে কয়েক বছরের মধ্যে অ্যানালগ সম্প্রচারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ ধরনের সম্প্রচারব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও পরবর্তী সময়ে সহজলভ্য থাকবে না।
বর্তমানে দেশে অনুমোদন পাওয়া স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের সংখ্যা ২৮। সম্প্রচারের জন্য বিদেশী স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে চ্যানেলগুলো। প্রতিটি টিভি চ্যানেল স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ পরিশোধ করছে বছরে প্রায় ২ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতি বছর ৫০ লাখ ডলারের বেশি দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ভাড়া বেড়ে ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে পৌঁছবে বলে খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিটিআরসির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (এটকো) সভাপতি ও এনটিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী। তিনি বলেন, দেশের অনেক এলাকায়ই ক্যাবল টিভির নেটওয়ার্ক নেই। ফলে এসব এলাকার দর্শক বর্তমানে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার হওয়া টিভি চ্যানেলগুলো দেখতে পান না। টিরেস্ট্রিয়াল সুবিধা দেয়া হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দর্শকদের কাছেও নিজেদের অনুষ্ঠান পৌঁছে দিতে পারবে দেশী চ্যানেলগুলো।
সরকারের কাছ থেকে এখনো এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা পাননি উল্লেখ করে মোসাদ্দেক আলী বলেন, এর সঙ্গে বিনিয়োগের বিষয় জড়িত। তবে কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবনা এলে সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের টিরেস্ট্রিয়াল সম্প্রচারব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর মাধ্যমে ক্যাবল নেটওয়ার্কের সংযোগ ছাড়াই বিটিভির অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে দর্শক। একুশে টেলিভিশনকেও আগে একই সুবিধা দেয়া হয়েছিল। যদিও পরে এ অনুমোদন বাতিল করা হয়।
বিটিভির বিদ্যমান টিরেট্রিয়াল সম্প্রচারব্যবস্থার সঙ্গে ডিজিটাল টিরেস্ট্রিয়াল সম্প্রচারব্যবস্থার কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। প্রস্তাবিত সম্প্রচারব্যবস্থা ডিজিটাল হওয়ায় এর জন্য দর্শকদের সেটটপ বক্স নামের একটি বিশেষ যন্ত্র কিনতে হবে। ডিজিটাল সিগনাল গ্রহণের জন্য ব্যবহার করতে হবে এটি। সাধারণত প্রতিটি সেটটপ বক্সের দাম ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। তবে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চাইলে দর্শকদের এটি বিনামূল্যে বা স্বল্পমূলে দিতে পারে। কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে তহবিল গঠন করেও এ ব্যবস্থা চালু করতে পারে তারা।
বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ডিজিটাল সম্প্রচারব্যবস্থা চালু হলে আরো ভালো মানের ছবি দেখতে ও শব্দ শুনতে পারবে দর্শক। ব্যবস্থাটি চালু করতে যে ব্যয় হবে, স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো কনসোর্টিয়াম গঠনের মাধ্যমে সহজেই তা বহন করতে পারবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সুপারিশেও এ ধরনের সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে।
ডিজিটাল টিরেস্ট্রিয়াল সম্প্রচারব্যবস্থা চালু করা দেশগুলোর বেশির ভাগই এজন্য আল্ট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সি (ইউএইচএফ) ব্যান্ড ব্যবহার করছে। বিটিভির টিরেস্ট্রিয়াল সম্প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি (ভিএইচএফ) ব্যান্ডে ১৭৪-২৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে ভিএইচএফের তুলনায় ইউএইচএফ ব্যান্ডে ব্যান্ডউইডথ বেশি থাকায় অধিকসংখ্যক চ্যানেলের সম্প্রচার সম্ভব। এছাড়া বর্তমানে দেশে ইউএইচএফ ব্যান্ডের ৫২২-৬৯৮ মেগাহার্টজ তরঙ্গ অব্যবহার রয়েছে। এজন্য ইউএইচএফ ব্যান্ডের এ তরঙ্গ ডিজিটাল সম্প্রচারব্যবস্থার জন্য ব্যবহার করার সুপারিশ করেছে বিটিআরসি। এ সম্প্রচারের জন্য ডিজিটাল ভিডিও ব্রডকাস্টিং-টিরেস্ট্রিয়াল (ডিভিবি-টি) মান নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল সম্প্রচারব্যবস্থা চালুর রোডম্যাপসহ এটি কার্যকর করার নির্দিষ্ট সময়সীমা আইটিইউকে জানাতে হবে। বিটিআরসি এ রোডম্যাপ তৈরির কাজ করছে।
উল্লেখ্য, তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলকে তরঙ্গ বরাদ্দ ও প্রয়োজনীয় সম্প্রচার যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য বিটিআরসির অনুমতি নিতে হয়।