মঙ্গলবার ● ১৬ জুলাই ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » লন্ডনে বসছে ‘যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ ই-বাণিজ্য মেলা ২০১৩’
লন্ডনে বসছে ‘যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ ই-বাণিজ্য মেলা ২০১৩’
বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র লন্ডনের গ্লুচেস্টার মিলিনিয়াম হোটেলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ ই-বাণিজ্য মেলা ২০১৩’। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং কমপিউটার জগৎ যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করছে। এ উপলক্ষে ১৬ জুলাই ২০১৩ (মঙ্গলবার) বেলা ১১টায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের সুরমা হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে ই-বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে কমপিউটার জগৎ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বছরের প্রথম দিকে একটি কর্মসূচি হাতে নেয়। এ কর্মসূচির আওতায় ধারাবাহিকভাবে দেশের ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন শহরে ই-বাণিজ্য মেলার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ ই-বাণিজ্য মেলা ২০১৩’।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব জনাব মো. নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনিন সুলতানা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আসাদ আলম সিয়াম ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান কমপিউটার জগৎ এর কারিগরি সম্পাদক ও কমজগৎ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবদুল ওয়াহেদ তমাল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস- বেসিসের সাবেক সভাপতি মাহবুব জামান।
প্রধান অতিথি জনাব হাসানুল হক ইনু বলেন, দেশে তিনটি সফল ই-বাণিজ্য মেলার পর বিদেশের মাটিতে ই-বাণিজ্য মেলার আয়োজন এটাই প্রমাণ করে, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ঘোষণা দিয়েছিল তা অনেকাংশে বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশে ই-বাণিজ্য চালু হওয়ার পরপরই এই সেবাগ্রহীতাদের সময়, শ্রম, ভোগান্তি কমেছে। ঘরে বসে স্বল্প সময়ে দেখে শুনে পণ্য কেনার সুযোগ হয়েছে। বিদেশে প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছে। শুধুমাত্র লন্ডনেই ৫ লাখের অধিক প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছে। এদের অনেকেই দক্ষ প্রযুক্তিবিদ হয়ে উঠেছে। সেখানেই অনেক ক্রেতা, ভোক্তা রয়েছেন যারা বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা ব্যবহার করতে ভালবাসেন। লন্ডনে ই-বাণিজ্য মেলার মাধ্যমে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। তারা বিদেশ থেকেই দেশের পণ্য কিনে প্রিয়জনকে পাঠাতে ও নিজে ব্যবহার করতে পারবেন। ই-বাণিজ্যকে সম্প্রসারিত করতে পারলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে, নতুন মাত্রা, নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। যত বাধাই আসুক না কেনো, তথ্যপ্রযুক্তির বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই।
আইসিটি সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, ভারত, পাকিস্থান চীনের তুলনায় বাংলাদেশ ই-বাণিজ্যে অনেকাংশে পিছিয়ে। এই বিষয়টি জানার পর আমরা কমপিউটার জগৎ এর সাথে প্রথমে ঢাকা ও পরে সিলেট এবং চট্রগ্রামে ই-বাণিজ্য মেলার আয়োজন করি। সিলেটের অনেক প্রবাসী লন্ডনে বসবাস করেন। এরা প্রতিনিয়ত প্রিয়জনদের বিভিন্ন পণ্য পাঠান। তাই সিলেটের মেলার পর আমরা লন্ডনে মেলা করার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের লক্ষ্য হলো ই-বাণিজ্যের গ্রোথ নূন্যতম ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ও সচেতনতা তৈরি করা। লন্ডনে ই-বাণিজ্য মেলার পর নিউ-ইয়র্ক ও মধ্যপ্রাচ্যে ই-বাণিজ্য মেলা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনিন সুলতানা বলেন, ই-বাণিজ্যের প্রসারে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের ৮০ শতাংশ ব্যাংক অনলাইন সেবা দিচ্ছে। ৬০ লাখের অধিক গ্রাহক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে। খুব শিগগিরই যেকেনো ব্যাংকের গ্রাহক যাতে অন্য ব্যাংকে সহজে লেনদেন করতে পারে ও যেকোনো এটিএম বুথ থেকে যেকেনো ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করতে পারে সে ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে চালু হবে। নীতিমালা পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে সেটি করা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আসাদ আলম সিয়াম বলেন, ই-বাণিজ্য মেলা একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ। প্রবাসীদের সাথে দেশের সম্পৃক্ততা জোরালো রাখতে এই ই-বাণিজ্য মেলা অগ্রণী ভ’মিকা পালন করবে। এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইসিটি মন্ত্রণালয় ও কমপিউটার জগৎকে ধন্যবাদ।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন মন্ত্রণালয় দেশব্যাপি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র, দেশের তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি নির্ভর পেশায় সম্পৃক্ত করতে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটা ই-বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্ভব হবে। তাই এ মেলা দেশের অর্থনীতিতে নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে।
কমপিউটার জগৎ-এর কারিগরি সম্পাদক ও কমজগৎ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এটি নিছক একটি ই-বাণিজ্য মেলাই নয়। এটি হবে লন্ডনে ডিজিটাল বাংলাদেশেরই আংশিক উপস্থাপন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ই-বাণিজ্য সম্পর্কে প্রবাসী বাংলাদেশীরা যেমনি করে জানার সুযোগ পাবেন, তেমনি মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানও তাদের পণ্য এবং সেবা বৃহত্তর পরিবেশে প্রদর্শন ও প্রচারের সুযোগ পাবে। প্রদর্শক ও দর্শকদের সাগ্রহ অংশগ্রহণে লন্ডন ই-বাণিজ্য মেলা আগের তিনটি মেলার মতোই পরিপূর্ণ সফলতা পাবে।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে এ কর্মসূচির আওতায় প্রথমবারের মতো ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হয় গত ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর সিলেট ও চট্টগ্রামে তিন দিনব্যাপী ই-বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হয় যথাক্রমে এপ্রিল ও জুনে। এসব মেলা আয়োজনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসন কার্যালয়। মেলায় ই-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করে। ই-বাণিজ্য মেলা প্রসারের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সেমিনার। মেলায় প্রচুর দর্শক সমাগম হয়। এসব মেলা আয়োজনের সাফল্যসূত্রেই এবার উদ্যোগ নেয়া হয় লন্ডনে ‘যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ ই-বাণিজ্য মেলা ২০১৩’ আয়োজনের। এ মেলার প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।