শুক্রবার ● ৯ ডিসেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ভূমি নিবন্ধন পদ্ধতি ডিজিটাল হচ্ছে
ভূমি নিবন্ধন পদ্ধতি ডিজিটাল হচ্ছে
ভূমি নিবন্ধন পদ্ধতি ডিজিটাল হচ্ছে। ঢাকার তেজগাঁও নিবন্ধন কমপ্লেক্সের পাঁচটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং ঢাকার সদর রেকর্ডরুমকে (মহাফেজখানা) প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল কর্মসূচির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।
এর পর পর্যায়ক্রমে সারা দেশের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোকে ডিজিটাল করা হবে। এ পদ্ধতি চালু হলে সব ধরণের নিবন্ধন ফরম, ধরণভেদে জমি নিবন্ধন করতে কত টাকা লাগবে এবং এ-সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য নিবন্ধন বিভাগের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে। এ জন্য সাধারণ মানুষকে দলিল লেখক, নকলনবিশ বা দালালদের ওপর নির্ভর করতে হবে না।
আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ এ বিষয়ে জানান, চলতি ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারির মধ্যে সফটওয়্যার কেনার জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে দরপত্র আহ্বান করা হবে। এরপর ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধনের কাজ শুরু হবে। ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হলে জমিজমাসংক্রান্ত জাল-জালিয়াতি অনেকাংশে লোপ পাবে।
আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জামাদার জানান, ভূমি নিবন্ধনব্যবস্থা ডিজিটাল করার বিষয়টি ৭ ডিসেম্বর জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়। সভায় ভূমি নিবন্ধন পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল করার লক্ষ্যে গঠিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির প্রতিবেদন এবং দরপত্র নিয়ে আলোচনা হয়।
স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের সভাপতিত্বে এই সভায় আইন, ভূমি, তথ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিটির সুপারিশ: কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ভূমি নিবন্ধন পদ্ধতি ডিজিটাল করার জন্য বিদ্যমান ভূমি নিবন্ধন আইন (১৯০৮), নিবন্ধন বিধিমালা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইনে সংশোধনী আনতে হবে। কর্মসূচির প্রথম বছরে ঢাকা শহরের ছয়টি অফিসে ভূমি নিবন্ধন পদ্ধতি ডিজিটাল করার কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে ঢাকা জেলার সদর রেকর্ডরুম এবং তেজগাঁও নিবন্ধন কমপ্লেক্সের ঢাকা সদর, খিলগাঁও, তেজগাঁও, বাড্ডা, উত্তরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর আওতায় মহাফেজখানার ৩০ হাজার নিবন্ধন বই (বালাম) ও সূচি বই স্ক্যান করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হবে। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে। দ্বিতীয় বছরে ঢাকার অবশিষ্ট ১২টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং তৃতীয় বছরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে এর আওতায় আনা হবে। এরপর আওতায় আসবে সারা দেশের অন্যান্য জেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস।
কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও ঢাকার সদর রেকর্ডরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্বীপক কুমার সরকার প্রথম আলোকে জানান, নিবন্ধন পদ্ধতি ডিজিটাল করা হলে নিবন্ধনের সময় একজন সাব-রেজিস্ট্রার প্রয়োজন অনুযায়ী রেকর্ডরুমে তাৎক্ষণিক তল্লাশি চালাতে পারবেন। জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিলে সাব-রেজিস্ট্রার তাৎক্ষণিক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের তথ্যভান্ডারে (ডেটাসেন্টার) গিয়ে তা যাচাই করতে পারবেন। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং জরিপ বিভাগের নথিপত্র ডিজিটাল করা হলে সাব-রেজিস্ট্রার তাঁর দপ্তরে বসেই জমির নামজারিসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। ফলে ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াতি অনেকাংশে কমে যাবে। কমে যাবে দলিল লেখক, দালাল, নকলনবিশ ও তল্লাশিকারকদের দৌরাত্ম্য।
নিবন্ধন পদ্ধতি: ভূমি নিবন্ধনের জন্য কমিটির সুপারিশ করা কর্মপদ্ধতিতে বলা হয়েছে, নিবন্ধনসংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও নির্ধারিত ফরম ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। কোন ধরনের জমি নিবন্ধন করতে কত টাকা ফি লাগবে বা জমির এলাকা, মৌজা ও পরিমাণভেদে নিবন্ধন ফি কত টাকা হবে, তা ওয়েব ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যাবে। যাঁদের ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তাঁরা ভূমি নিবন্ধন অফিসের তথ্যকেন্দ্র থেকে এই স্লিপ সংগ্রহ করতে পারবেন। গ্রামের মানুষ ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যকেন্দ্র থেকে এ সেবা নিতে পারবেন।
কমিটির সুপারিশ করা পদ্ধতি অনুযায়ী, এরপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে পে-অর্ডার সংগ্রহ করে দলিল লেখকের মাধ্যমে দলিল তৈরি করতে হবে। নিবন্ধনের সময় ওয়েব ক্যামেরায় ক্রেতা ও বিক্রেতার ছবি সংগ্রহ করা হবে। সবশেষে কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাব-রেজিস্ট্রার জমি নিবন্ধন করবেন। আর নিবন্ধন করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জমির মূল দলিল দেওয়া হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিবন্ধনের পর দলিল স্ক্যান করে তা তথ্যভান্ডারে সংরক্ষণ করা হবে। জমিসংক্রান্ত তথ্যের প্রয়োজন হলে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে প্রিন্ট আকারে দলিলের অবিকল নকল সরবরাহ করা হবে। এ কাজে দালাল বা নকলনবিশের সহযোগিতা নিতে হবে না। তবে আপাতত নকলনবিশদের চাকরি বহাল রাখার জন্য তাঁদের মাধ্যমে দলিলের আরও একটি নকল সেট তৈরি করে তা সংরক্ষণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এই নকলনবিশদের পদ এবং তাঁদের মাধ্যমে নকল দলিল তৈরির কাজ বিলোপ করা হবে।