বৃহস্পতিবার ● ১ ডিসেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ঢাকায় ই-এশিয়া ২০১১
ঢাকায় ই-এশিয়া ২০১১
সকল জল্পনা-কল্পনার অবশান ঘটিয়ে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র্রে শুরু হলো এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি খাত, প্রযুক্তিগত সেবা ও কর্মকান্ড তুলে ধরার অন্যতম বড় আয়োজন ‘ই-এশিয়া ২০১১’। ই-এশিয়া’র এটি পঞ্চম আয়োজন। আর বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মত এত বড় কোনো তথ্যপ্রযুক্তির আয়োজন করলো। ৩ ডিসেম্বর এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসাবে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন। ৩ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। ৩০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র্রে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। দেশের সবকটি জেলায় ই-সেবা কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। সারা দেশের ৪৫০১টি ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বিগত দুই বছরে প্রায় তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব চালু করা হয়েছে। তিনি জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে আমাদের এই উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ প্রযুক্তির ব্যবহারে জনগণের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে সাউথ সাউথ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। বিশ্বখ্যাত গবেষনা প্রতিষ্ঠান গার্টনার তাদের রিপোর্টে বাংলাদেশকে আউটসোর্সিং এর ৩০টি গন্তব্যের একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তরুন ফ্রিল্যান্সারদের কাজের স্বীকৃতি হিসাবে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং-এর কাজের ক্ষেত্র ওডেক্স ঢাকা শহরকে পছন্দের শহর তালিকার তৃতীয় নম্বরে রেখেছে।
তিনি বলেন, বহির্বিশ্বের সামনে আমাদের এ সকল অর্জন এবং এর পাশাপাশি অন্যান্যদের সাফল্যের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য আমরা এবার ই-এশিয়া ২০১১ আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি। এর আগে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলংকাতে এর চারটি আয়োজন হয়েছে। এবারের আয়োজনটি ই-এশিয়ার ৫ম আয়োজন। তিনি জানান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ, দেশ ও বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আইসিটি প্রতিষ্ঠান এবং বরেণ্য আইসিটি নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৪০০-৫০০ প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, জিপিআইটি’র প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা রনি রিয়াদ রশিদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের পলিসি এডভাইজার আনির চৌধুরী এবং বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক মুনির হাসান।
এবারের ই-এশিয়া ২০১১ এর মূল আয়োজক হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) এবং ইলেটস। সহযোগিতায় রয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটর অফ বাংলাদেশ (অ্যামটব), এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অরগানাইজেশন (অ্যাসোসিও), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কল সেন্টার এন্ড আউটসোর্সিং (বিএসিসি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) প্রভৃতি সংগঠন।
৩ দিনের এ আয়োজনে রয়েছে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে ৩০টি সেমিনার ও কর্মশালা। এই সেমিনারগুলো ভাগ করা হয়েছে চারটি বিভাগে। বিভাগগুলো হলো- বিল্ডিং ক্যাপাসিটি, কানেক্টিং পিপল, সার্ভিং সিটিজেন এবং ড্রাইভিং ইকোনমি। এসব সেমিনারের মাধ্যমে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সক্ষমতা বৃদ্ধি করে কীভাবে সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা তৈরি করা যায়, তারই প্রতিফলন ঘটবে। সেমিনারের পাশাপাশি রয়েছে ছয়টি কারিগরি সেশন। এই সেশনগুলোর বিষয় হচ্ছে- ‘আইসিটি অ্যাজ আ ক্যারিয়ার পাথ ফর উইমেন: অপরচুনিটিস এন্ড চ্যালেঞ্জ’, ‘মেকিং লাইফ প্রোডাক্টিভ ফর পারসন উইথ ডিজ্যাবিলিটিস ইউজিং আইসিটি’, ‘বিল্ডিং ন্যাশনাল ই-গভর্নেন্স আর্কিটেকচার ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ’, ‘অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল প্লাটফর্ম’, ‘প্রিপেয়ারিং ফর আইপিভি৬’ এবং ‘বিল্ডিং ইওর ওন ক-াউড’।
প্রদর্শনীতে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে উপস্থিত থাকছেন বিশ্বের শীর্ষ কম্পিউটার চিপ ও প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইন্টেল ওয়ার্ল্ড অ্যাহেড প্রকল্পের প্রধান জন ই-ডেভিস এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রিল্যান্স কাজ করার ওয়েবসাইট ওডেস্ক ডটকম’র প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা ম্যাট কুপার।
ই-এশিয়া’র পঞ্চম এই আয়োজনে প্রথমবারের মত প্রবর্তন করা হয়েছে ‘ই-এশিয়া ২০১১ পুরস্কার’। পুরস্কারের চূড়ান্ত পর্বের জন্য ৩৭টি উদ্যোগকে ফাইনালিষ্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। চারটি বিভাগে সর্বমোট ২০৭টি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান থেকে এই মনোনয়ন বাছাই করা হয়েছে। ২ ডিসেম্বর ই-এশিয়া সম্মেলনে মনোনীত ৩৭টি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১৭টি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানকে ‘ই-এশিয়া পুরস্কার ২০১১’ প্রদান করা হবে।
পাশাপাশি এবারের প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, জাপান, থাইল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড এই ৫টি দেশের কান্ট্রি প্যাভিলিয়ন থাকবে। এছাড়াও ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড, নরডিক চেম্বার, অ্যানটিএফ-২ এর প্রজেক্টের স্টল রয়েছে ।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলছে। মেলার সাধারণ টিকেট ১০ টাকা। শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে এবং অন্যান্য পেশাজীবিরা ভিজিটিং কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন। এ আয়োজনের প্লাটিনাম স্পন্সর জিপিআইটি, গোল্ড স্পন্সর হুওয়ায়ে, গোল্ড ইন্টারনেট স্পন্সর কিউবি, সিলভার স্পন্সর সিসকো, ট্র্যাক স্পন্সর স্যামসাং ও ক্যাটালিস্ট, নলেজ পার্টনার ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলো টেলিভিশন ও ওয়েবে সরাসরি সম্প্র্রচার করা হবে।