শনিবার ● ৬ জুলাই ২০১৩
প্রথম পাতা » নিউজ আপডেট » দুই মায়ের এক সন্তান!
দুই মায়ের এক সন্তান!
শুধু মানুষ কেন, পৃথিবীর সব প্রাণীই একজন মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়। কিন্তু এবার একটি সন্তানের মা হবেন দুইজন। অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি সম্ভব হবে আইভিএফ বা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতির (গবেষণাগারে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষিক্ত করে সৃষ্ট ভ্রুণ গর্ভে প্রতিস্থাপন করা) মাধ্যমে। শুক্রবার যুক্তরাজ্য সরকার এই পদ্ধতিকে সমর্থন জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর এখন তিনজন ব্যক্তির ডিএনএ ব্যবহার করে একটি শিশু জন্ম দেয়া হবে।
এবছর শেষে এ ব্যাপারে একটি খসড়া নীতিমালা করবে যুক্তরাজ্য সরকার তবে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে আরো দুই বছর সময় লাগবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মায়ের শরীর থেকে শিশুর দেহে যে দুর্বল এবং প্রাণঘাতী মাইট্রোকন্ডিয়াল ব্যাধি সঞ্চালিত হয় সেটি বন্ধ করা যাবে।
পদ্ধতিটি হলো, একজন পুরুষের শুক্রাণু দিয়ে দুইজন নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত করা হবে (এখানে একজন পিতা, একজন মা এবং তৃতীয় জন দাতা। এতে দুটি ভ্রুণ তৈরি হবে। এরপর ভ্রুণে জিনগত তথ্য ধারণ করা যে ‘প্রনোকলি’ সেটি দুটি ভ্রুণ থেকেই পৃথক করা হবে। এরপর দাতার ডিম্বাণু থেকে সৃষ্ট ভ্রুণের প্রোনোকলিটি সরিয়ে দিয়ে পিতা-মাতার প্রোনোকলিটি দাতার ভ্রুণে প্রবেশ করানো হবে। পরে ওই ভ্রুণটি গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হবে।
অর্থাৎ মায়ের ডিম্বাণুর মাইটোকন্ডিয়ায় যদি কোনো সমস্যা থাকে একজন দাতার ডিম্বাণু থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া নিয়ে সেটি সমাধান করা সম্ভব। যদিও এর ফলে একটি শিশু আসলে তিনজনের ডিএনএ থেকে জন্ম নেবে।
মাইট্রোকন্ড্রিয়া একটি অতি ক্ষুদ্র কোষীয় অঙ্গানু যা আমাদের দেহে শক্তির জোগান দেয়। তাই এটি ‘পাওয়ার হাউস’ বলা হয়। ডিম্বাণুর মাধ্যমে মাইটোকন্ড্রিয়া মায়ের শরীর থেকে সন্তানের দেহে সঞ্চালিত হয়।
অপরিপক্ক মাইটোকন্ড্রিয়ার সঞ্চালিত হওয়ায় ৬ হাজার ৫শ শিশুর মধ্যে একজনের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এতে ওই শিশুর নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন: দুর্বল পেশী, অন্ধত্ব, হার্ট ফেইলিওর এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যু। এই চিকিৎসার ফলে যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ জন উপকৃত হবে।
শ্যারন বার্নাডি যুক্তরাজ্যের একজন নারী। বিয়ের পর আর দশটা নারীর মতো তিনিও একটি সুস্থ সন্তান কামনা করেছিলেন। কিন্তু পরপর তার সাতটি শিশু জিনগত ত্রুটি নিয়ে জন্মের পর মারা যায়। এর মধ্যে তিনজন জন্মের মাত্র এক ঘণ্টা পরেই মারা যায়।
যখন শ্যারনের চতুর্থ শিশু এডওয়ার্ড জন্ম নেয় তখন চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন শ্যারনের মাইটোকন্ড্রিয়ায় সমস্যার কারণেই তার শিশুরা মারা যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা এডওয়ার্ডের বাঁচানোর সব চেষ্টা করেন কিন্তু ২০১১ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে এডওয়ার্ডও মারা যায়।
নতুন এই পদ্ধতিতে শ্যারনের মতো নারীও সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারবেন। শ্যারন নিজেও শুরু থেকেই এই গবেষণায় সহযোগিতা করছেন।বাংলামেইল।