সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |
বুধবার ● ১৬ নভেম্বর ২০১১
প্রথম পাতা » খোলা কলম » প্রযুক্তির জাদুকর স্টিভ জবস
প্রথম পাতা » খোলা কলম » প্রযুক্তির জাদুকর স্টিভ জবস
৫৯৩ বার পঠিত
বুধবার ● ১৬ নভেম্বর ২০১১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

প্রযুক্তির জাদুকর স্টিভ জবস

মো. মুজিবুর রহমান : মানুষ আপন ভুবনের নির্মাতা। আবার মানুষ সভ্যতার স্রষ্টা। মানুষ তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জন্য বিস্ময়কর কিছু উদ্ভাবন করেন। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আছে সুপ্ত প্রতিভা। পরিশ্রমের দ্বারাই সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগরিত করতে পারে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। মানুষই শ্রেষ্ঠ। কারণ মানুষই তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও মেধা দ্বারা ব্যতিক্রমী কিছু আবিষ্কার করে। অন্যদিকে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে। এরকম একজন শ্রেষ্ঠ ও বিস্ময়কর মানুষের বর্ণাঢ্য জীবন স্বল্প পরিসরে লিখছি। যিনি ছিলেন অসাধারণ একজন। যিনি মেধা, মনন ও কর্মদক্ষতার সম্মিলনে তাক লাগান সারাবিশ্বকে। সেই ব্যক্তিটির পুরো নাম স্টিভেন পল জবস। তিনি অ্যাপলের স্টিভ জবস নামে পরিচিত।

স্টিভ জবস ছিলেন মেধাবী একজন মানুষ। এই ব্যক্তিটি সিরিয়ান আর আমেরিকান দুই অবিবাহিত নারী-পুরুষের অমোঘ প্রেমের ফসল হয়ে এ পৃথিবীতে জন্ম নেন। ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সান ফ্রান্সিসকোতে জবসের জন্ম। তার বাবা আবদুল ফাত্তাহ জান্দালি সিরীয় বংশোদ্ভূত ও মা আমেরিকান জোয়ান সিবিল আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ভালবাসার নিদর্শনস্বরূপ এ সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর পিতা-মাতা পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাবা বা মা কেউ ওই সময় তাকে লালন পালনের দায়িত্ব নেননি। পল ও কারা নামে এক দম্পত্তি শিশু স্টিভ জবসকে দত্তক নেন। শুরু হয় তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী পথচলা ও বিপক্ষ পরিবেশের সাথে লড়াই। এদিকে দত্তক গ্রহণের সময় শর্ত দেয়া ছিল জবসকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট করতে হবে। কিন্তু তিনি গ্রাজুয়েট হতে পারেননি। সৃষ্টিশীল প্রতিভাকে কাজে লাগানোর জন্য স্টিখ জবস আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন।

বিশ্লেষণে দেখা যায় প্রযুক্তিবিদদের রেখে যাওয়া কর্ম ও অবদানকে অধিকতর বিকশিত করবে ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রযুক্তিবিদগণ। পথ পরিক্রমায় আজকের প্রজন্মের অনুপ্রেরণার শীর্য ভূমিকায় থাকা স্টিভ জবস চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন। রেখে গেলেন তাঁর উদ্ভাবনী শক্তির সৃষ্ট বিস্ময়কর প্রযুক্তি। মেধা, মনন আর পরিশ্রম-এই তিনটির অপূর্ব মিলনে সৃষ্ট শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ স্টিভ জবস গত ৫ অক্টোবর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার প্যালো আলতোয় মৃত্যুবরণ করেছেন । পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন। দীর্ঘদিন ধরে অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারে ভুগছিলেন এই প্রযুক্তি জাদুকর । বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিস্ময়ের উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান অ্যাপেল ইনকর্পোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা, সাবেক প্রধান নিবার্হী ও আমৃত্যু চেয়ারম্যান ছিলেন স্টিভ জবস।

শিক্ষা জীবনের এক পর্যায়ে ভর্তি হয়েছিলেন রিড কলেজে। সেখান থেকে গ্রাজুয়েট হওয়ার কথা। কিন্তু বেশী দিন পড়া হলো না রিড কলেজে। ছয় মাসের মাথায় আনুষ্ঠানিক পড়া ছেড়ে দেন। তবে রিড কলেজে ক্যালিগ্রাফি কোর্সে ভর্তি হন। জবস দশ বছর পর ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটারের ফন্ট ডিজাইন করতে এই ক্যালিগ্রাফি কোর্সের জ্ঞান কাজে লাগান। রিড কলেজে ছেড়ে দেওয়ার পর জবস তাঁর জীবনের কষ্টকর সময় পার করেন। রাত্রে বন্ধুদের রুমের ফোরে ঘুমাতেন। ব্যবহৃত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে যে অর্থ পেতেন তা দিয়ে খাবার কিনে খেতেন। আবার দূরের মন্দিরে যেতেন প্রতি রবিবারের রাত্রে একবেলা ভাল খাওয়ার আশায়। এ রকম সংকটময় জীবন দেখে কেউ কি ভাবতে পেরেছিল এই ছেলেটি বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন হবেন? তবে এটা সত্য স্টিভ জবস শৈশব ও কৈশোরকালের পথচলার সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পেরেছিলেন বলে পরবর্তী জীবনে নানা সংকটময় সময়কে সহজে কিংবা অনায়াসে পার করতে পেরেছিলেন।

স্টিভ জবস তার শিশুকাল কাটিয়েছেন দক্ষিণ উপসাগরীয় অঞ্চলে, যে অঞ্চলটি পরবর্তীতে সিলিকন ভ্যালি নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭১ সালে হাইস্কুল শেষ পর্যায়ে অধ্যয়নকালে হিউলেট-প্যাকার্ডের (এইচপি) একটি কারখানায় গ্রীষ্মকালীন কর্মচারী হিসেবে কাজ নেন তরুন স্টিভ জবস। কারখানায় আরেক কর্মী স্টিভ ওজনিয়াকের সাথে কারখানায় বন্ধুত্ব হয় তাঁর। স্টিভ ওজনিয়াকের সাথে জবস হোমব্রি কম্পিউটার কাবের সভায় অংশগ্রহণ করতেন। স্টিভ জবস ছোটবেলা থেকে প্রযুক্তির প্রতি গভীর অনুরক্ত ছিলেন। তারই পথ ধরে ১৯৭৪ সালে তিনি আটারি ইনকর্পোরেশনে চাকরি নেন। এই প্রতিষ্ঠ্নাটি ছিল ভিডিও গেমস তৈরির স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি বেশিদিন চাকরি করেননি সেখানে। স্টিভ জবস চাকরির বেতন থেকে অর্থ সঞ্চয় করে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অনুসন্ধানে কলেজ বন্ধুকে সাথে নিয়ে ভারতের নিম করোলি বাবার আশ্রমে বেড়াতে আসেন। ন্যাড়া মাথায় ও ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত অবস্থায় একজন বৌদ্ধের বেশে তিনি ফিরে যান। ফিরে গিয়ে আবার আটারি ইনকর্পোরেশনে যোগাদান করেন এবং ভিডিও গেমসের জন্য সার্কিট বোর্ড তৈরির কাজ করেন।

১৯৭৫ সালে স্টিভ জবস বন্ধু ওজনিয়াক ও রোনাল্ড ওয়েনকে সঙ্গী করে পারিবারিক গ্যারেজে মেশিনপত্র বিক্রয় প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৬ সালে ১ এপ্রিল অ্যাপেল ইনকর্পোরেশন নামে আত্মপ্রকাশ করে। এবছরেই প্রথম অ্যাপল-১ কম্পিউটারটি পরিচিতি পায়। অ্যাপলের জন্মের পর বিশ্ব দেখলো এক নতুন যুগ, যে যুগের মূল ভূমিকায় ছিল স্টিভ জবস। নতুন যুগের উন্নয়ন ও উত্তরণে তাঁর অসামান্য মেধা, দূরদর্শিতা এবং সৃজনশীলতা প্রতিফলিত হয়।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে বর্তমানে বিশ্ব অগ্রসরমান হওয়ার ক্ষেত্রে যে পারসোনাল কম্পিউটারের (পিসি) অবদান অনস্বীকার্য, তার সূত্রপাত ঘটায় স্টিভ জবস ও ওজনিয়াকের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। প্রথম পার্সোনাল কম্পিউটার অ্যাপল-১ তৈরির ১২ মাসের মাথায় ১৯৭৭ সালে বাজারে আসে অ্যাপল-২। এরই পথ ধরে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কস্পিউটারের ধারণা বিস্তার লাভ করে। উদ্ভাবিত পার্সোনাল কম্পিউটারের পূর্বে কম্পিউটার গবেষণার কাজে ব্যবহার হতো। ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীদের নিকট অ্যাপল-২ বেশ জনপ্রিয়তা পায়। পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার হিসেবে যাত্রা শুরুর দুই বছরের মাথায় অ্যাপল-২ থেকে আয় হয় প্রায় সাত কোটি নব্বই লাখ ডলার।

১৯৮৩ সালে বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই লিসা নামক পার্সোনাল কম্পিউটার উদ্ভাবন করা হয়। এতেই প্রথমবারের মতো আইকন, মাউস-নিয়ন্ত্রিত কারসর ও গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে আমরা যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তার ধারণা এই লিসা থেকে উৎসারিত। ১৯৮৪ সালে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করে ম্যাকিনটোশ তৈরি করা হয়। যদিও ১৯৮৩ সালে স্টিভ জবস এর উদ্ভাবনের ঘোষণা দেন। তুলনার দিক থেকে লিসার চেয়ে ম্যাকিনটোশ ছিল সস্তা ও দ্রুত গতির। ব্যাপক বিপণন ও প্রচারণার মধ্য দিয়ে ম্যাকিনটোশ বিশ্বজুড়ে বাজারজাত করা হয়। ম্যাকিনটোশ বাজারে আসার পর ব্যব্হারকারী অনুধাবন করতে পারে, বিভিন্ন অলংকরণের জন্য ইউজার ইন্টারফেস কতটা জরুরী। লক্ষণীয় ডেস্কটপ প্রকাশনার জগতেও নতুন বিপ্লব ঘটায় ম্যাকিনটোশ। স্টিভ জবস দুনিয়ার সকল মাতৃভাষা যাতে কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায় তার ভিত্তিটা তৈরি করেন। ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে মাল্টিপল ও নন রোমান ফন্ট ব্যবহারসহ অপারেটিং সিস্টেমের অনুবাদ করার করার সুযোগ তৈরি করেন তিনি। ফলে কম্পিউটার দিয়ে সকল মাতৃভাষার চর্চার জন্য ডিজিটাল যাত্রা সূচিত হয়। প্রত্যেক মানুষের মাতৃভাষার জন্য অভিন্ন এনকোডিং ব্যবস্থা ও ইউনিকোড পদ্ধতি গড়ে তোলার সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেয় তাঁর প্রতিষ্ঠিত অ্যাপল ইনকর্পোরেশন।

১৯৮৫ সালে অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার হয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল স্টিভ জবসের প্রাণপ্রিয় এই প্রতিষ্ঠান থেকে। অ্যাপলও হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন। এই একই বছরে স্টিভ জবস ৭ কোটি ডলার মূলধন নিয়ে কম্পিউটার প্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক নেক্সট ইনকর্পোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৮ সালে এই কোম্পানী নেক্সট কম্পিউটার উৎপাদন করে। ১৯৯০ সালে ক্ষুদ্রাকার নেক্সটস্টেশন উৎপাদন করে। এতে স্টিভ জবস আর্থিক লাভবান হননি। তখন মাত্র ৫০,০০০ নেক্সট কম্পিউটার বিক্রয় হয়।

অ্যাপলের ইনকর্পোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ১৯৮৬ সালে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। যার সংক্ষিপ্ত নাম পিক্সার। এই প্রতিষ্ঠানটি মূলত লুকাস ফিল্ম লিমিটেডের অধীনে গ্রাফিক্স শাখা হিসেবে কাজ করেছে ১৯৭৯ সাল থেকে। ১৯৯৫ সালে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও থেকে স্টিভ জবসের প্রধান নির্বাহী থাকাকালে টয় স্টোরি বের হয়। টয় স্টোরি কম্পিউটারে অ্যানিমেশন করা পূর্ণদৈর্ঘ্যরে ছবি। চলচ্চিত্রটি বিশ্বের প্রায় সর্বত্র সাড়া জাগায়। এদিকে মাইক্রোসফট ইনকপোরেশনের উদ্ভাবিত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কাছে অ্যাপলের জনপ্রিয়তা হারিয়ে গিয়ে প্রায় ধ্বংসের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়। অথচ উদ্ভাবনের দিক থেকে কম্পিউটারের অন্যতম অনুষঙ্গ মাউস ও আলাদা আইকনের ব্যবহার ছিল স্টিভ জবসের নিপুূণ হাতের তৈরি। ১৯৯৬ সালে অ্যাপল ক্রয় করে নেক্সট ইনকর্পোরেশনকে । স্টিভ জবস ফিরে আসে অ্যাপল ইনকর্পোরেশনে। ১৯৯৭ সালে জবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কমৃকর্তার দায়িত্ব পান। নতুন উদ্দীপনায় অ্যাপল উদ্ভাবন করে আই-ম্যাক।

স্টিভ জবসের প্রচ্ছন্ন উৎসাহ ও ভাবনার ফসল এই আই-ম্যাক কম্পিউটার। পুরো কম্পিউটারের সিস্টেম মনিটরটি ছিল একটি প্লাস্টিক বাবলের ভেতর। রং-বেরঙের বাহারি আই-ম্যাক ছিল বাজারে। কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা পেয়েছিল তাদের পছন্দের ভিন্নমাত্রার কম্পিউটার ক্রয় করার সুযোগ। আই-ম্যাক উদ্ভাবনের পর অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা পেছনে পড়ে যায়। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো আইপড বাজোরে আসে। এটা হার্ড-ড্রাইভ সমৃদ্ধ একটি ডিজিটাল মিউজিক প্লেয়ার। এতে ব্যাপক সাফলতা লাভ করে। স্টিভ জবস। ও তাঁর প্রতিষ্ঠান ২০০৩ সালে আইটিউনস গানের ডিভাইস বাজারজাত করে। ২০০৭ সালে স্টিভ জবসের প্রতিষ্ঠান অ্যাপল বাজারে ছাড়ে আইফোন। টাচস্ক্রিনের হাত ধরেই মোবাইল প্রযুক্তি অনাগত ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে স্টিভ জবস ও তাঁর প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের ভূমিকা অপরিসীম। মোবাইল ফোনে সহজ উপায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার কৌশল আইফোনের মাধ্যমে মানুষের হাতে পৌঁছে দেন তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠান। ম্যাকিনটোশ যেমন পার্সোনাল কম্পিউটারের বিপ্লব ছিল, ঠিক তেমনি আইফোন হলো মোবাইল ফোনের একধরনের বিপ্লব। ল্যাপটপের পর কম্পিউটারের অবয়ব বা চেহারা কেমন হবে সেটাও ২০১০ সালে আইপ্যাড উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেখিয়ে গেছেন স্টিভ জবস। এই আইপ্যাড ট্যাবলেট পিসির ধারণাই বদলে দেয়। তাছাড়া বদলে দেয় কম্পিউটিং এর ইতিহাস। স্টিভ জবসের উদ্ভাবনী স্বাক্ষরের তালিকায় আরো রয়েছে প্রযুক্তি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কোনো প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় থাকা প্রায় ৩০০ প্রযুক্তি পেটেন্টের উদ্ভাবক অথবা সহ-উদ্ভাবক হিসেবে জবসের নাম জড়িয়ে রয়েছে। তিনি কম্পিউটারে গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস প্রবর্তক ছিলেন। স্টিভ জবসের হাত ধরে পিক্সার থেকে সূচিত হয় অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় আজ সাধারণ মানুষ যে কম্পিউটার ব্যবহার করছে তাঁর শুরু হয় স্টিভ জবসের হাত ধরেই। অপারেটিং সিস্টেম, নেটওয়ার্কিং, ইউজার ইন্টারফেসসহ উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে সহজে ব্যবহারের যোগ্য হিসেবে তৈরি করতে স্টিভ জবসের তুলনা নেই। অসুস্থতার কারণে স্টিভ জবস ২৪ আগস্ট ২০১১ অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান হিসেবে থাকেন। ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর আইফোন ৪ এস আত্মপ্রকাশ ঘটলো। স্টিভ জবস নামক ক্যারিশমার অনুপস্থিতিতে নিছকই একটি অনুষ্ঠান হলো আইফোন ৪ এস-এর আত্মপ্রকাশ। এই অনুষ্ঠানেই জবসের ভক্ত-অনুরাগীগণ ১৪ অক্টোবর ‘স্টিভ জবস ডে’ পালন করার জন্য অ্যাপল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল। আর ৫ অক্টোবরই মারা যান স্টিভ জবস। ৭ অক্টোবর তাঁর মরদেহের শেষকৃত্য খুব গোপনে সম্পন্ন হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেরে উজ্জ্বল নক্ষত্র স্টভি জবস। স্টভি জবসরে দক্ষতা এবং তার উদ্ভাবনী শক্তকে ছড়িয়ে দিতে ভারতরে ব্যাঙ্গালোররে ইনস্টটিউস্টি অব ফিন্যান্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ম্যানজেমন্টে নামক প্রতিষ্ঠানেরে পাঠ্যবইয়ে স্থান পয়েছেনে স্টভি জবস। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদরে চর্তুথ সেমিস্টারে স্টভি জবসরে জীবনি পড়বেন।

আই-ম্যাক, আইফোন, আইপড, আইপ্যাডের মতো নানান প্রযুক্তিগত বিস্ময়ের উদ্ভাবক, স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রযুক্তির জাদুকর ও মননশীল উদ্যোক্তা ছিলেন স্টিভ জবস। পারস্পারিক যোগাযোগ ও তথ্য সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে স্টিভ জবসের অবদান এই বিশ্বের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শুধুমাত্র কম্পিউটার প্রযুক্তির জগতে নয় মোবাইল ফোন প্রযুক্তির জগতে তিনি বিশাল ভ ূমিকা রেখেছেন। সে জন্য তাঁর অবদান অপরিসীম। সর্বোপরি তাঁর উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে আধুনিক মানুষকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন অনেক দূর। আমাদের জীবনযাত্রার পরিবেশকে করেছেন উন্নত। তাই বলতে হচ্ছে স্টিভ জবসের জন্যই বিশ্ব আজ অনেক উন্নত। তিনি বদলে দিয়েছেন বিশ্ব জীবনধারা।

আমাদের জীবনধারায় এনে দিয়েছেন বৈচিত্র্যময়তা। মানুষের অপরিসীম চাহিদা এবং তা পূরণের প্রচেষ্টা থেকেই মূলত শুরু হয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। আর সেই অর্থনীতিতে নতুন কিছু সংযোজন করার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার ভূমিকা রয়েছে অনেক। একজন উদ্যোক্তা হচ্ছেন একজন উদ্ভাবক যিনি উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে সাহায্য করে থাকেন। সে বিবেচনায় স্টিভ জবস ছিলেন একজন সফল উদ্যোক্তা ও তথ্য প্রযুক্তির দিকপাল। তিনি উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তিবিদ ছাড়াও রেকর্ড সংখ্যক পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ের মডেল ব্যক্তিত্ব। স্টিভ জবসের দক্ষতা এবং উদ্ভোবনী শক্তিকে ছড়িয়ে দিতে ভারতের ব্যাঙ্গালোরের ইনস্টিটিউট অব ফিন্যান্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট (আইএফআইএম) নামক প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যবইয়ে ‘দশকের সেরা প্রধান নির্বাহী’ হিসেবে স্থান পেয়েছেন স্টিভ জবস। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় অনুষদের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ সেমিস্টারে লিডারশীপ শীর্ষক বিষয়ে তাঁর বিস্তারিত জীবন সম্পর্কে পড়ানো হবে। প্রাপ্তুু তথ্য অনুযায়ী অ্যাপলের পাইপ লাইনে চার বছরের প্রযুক্তি স্টিভ জবস ডিজাইন বা নকশা করে গেছেন। শেষদিকে তিনি ধরেছিলেন আইকাইডের কার্যক্রমও। স্টিভ জবস মৃত্যুর সময় রেখে গেছেন প্রায় সাত বিলিয়ন ডলারের বিশাল সম্পত্তি, প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ইনকর্পোরেশন, বন্ধুবান্ধবসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী এবং তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তানকে।

একেবারে পুরোটাই সাফল্য ও আর সার্থকতায় মোড়া একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো মাত্র ৫৬ বছব বয়সেই, এই সুন্দর পৃথিবীর জন্য স্টিভ জবসের রেখে যাওয়া সেই অধ্যায়ের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি আছে আমাদের মাঝে, কেবল তিনি আমাদের মাঝে নেই। ম্যাকিন্টোস কম্পিউটার, আই-ম্যাক, আইপড, আইফোন, আইপ্যাড প্রভৃতি প্রযুক্তির নির্মাতা অ্যাপলের কর্ণধার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ) জগতে প্রযুক্তির জাদুকর হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। সাধারণ মানুষের জন্য কম্পিউটার প্রযুক্তি ও মোবাইল ফোনের প্রযুক্তি ব্যবহারবান্ধব করে নব নব উদ্ভাবনার মাধ্যমে আইসিটি (তথ্য প্রযুক্তি) অঙ্গনে বিপ্লব ঘটান তিনি। ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা স্টিভ জবসকে মানুষ ভুলবে না, ইতিহাস স্মরণে রাখবে তাঁকে।


লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ।
কাজী আজিমউদ্দিন কলেজ, গাজীপুর।



পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে টেন মিনিট স্কুল ও বিকাশের উদ্যোগ
কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে অপো বাংলাদেশ
মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বিকাশ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৪ হাজার শিক্ষার্থী পেল নতুন ল্যাপটপ
এনাবলার অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলো মাস্টারকার্ড
জাইকার সহযোগিতায় বি-জেট ও বি-মিট প্রোগ্রামের সমাপনী প্রতিবেদন প্রকাশ
দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা সম্প্রসারণে ‘বেসিস জাপান ডে ২০২৪’
এআই অলিম্পিয়াডের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য হলেন বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন
সিআইপি সম্মাননা পেলেন উল্কাসেমির সিইও মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান
রিয়েলমি সি৭৫ পানির নিচে সচল থাকবে ১০ দিন