সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
ICT NEWS (আইসিটি নিউজ) | Online Newspaper of Bangladesh |
সোমবার ● ১ জুলাই ২০১৩
প্রথম পাতা » আলোচিত সংবাদ » ।।কোম্পানীর মালিকদের অসাধু তৎপরতায় ৪৪ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।। গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড জালিয়াতি পর্ব-৯
প্রথম পাতা » আলোচিত সংবাদ » ।।কোম্পানীর মালিকদের অসাধু তৎপরতায় ৪৪ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।। গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড জালিয়াতি পর্ব-৯
৮৪৮ বার পঠিত
সোমবার ● ১ জুলাই ২০১৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

।।কোম্পানীর মালিকদের অসাধু তৎপরতায় ৪৪ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।। গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেড জালিয়াতি পর্ব-৯

mbari-1.jpg

** মূল সমস্যা-

গোল্ডেন লাইফ ইনসিওরেন্স লিমিটেডের কয়েকজন মালিকের অসাধু তৎপরতায় ৪৪ হাজার কর্মী কর্মকর্তার ভাগ্য-ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। থেমে যাচ্ছে এই ৪৪ হাজার কর্মীর পরিবারের কয়েক লক্ষ মানুষের রুটি রুজগারের ব্যবস্থা। হুমকির মুখে আছে সাড়ে ৮ লাখ গ্রাহকের ৯শ কোটি টাকার আমানত। নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা আইডিআরএ নিশ্চুপ। বীমা জগৎ স্তম্ভিত। গ্রাহক-কর্মীরা প্রতিকারের আশায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও মিলছেনা আশ্বাসের নূন্যতম প্রতিশ্রুতি। জানা যায়, ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে  সি-৩৯৩১৪(১২৭২)৯৯ নং লাইসেন্সের মাধ্যমে কোম্পানীটি অনুমোদন প্রাপ্ত হয়। প্রতিষ্ঠা কালিন নানান চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে ২০০৫/২০০৬ সালের দিকে কোম্পানীটি স্থিতিশীল অবস্থায় আসে। তখন থেকেই শুরু হয় মালিকদের টাকা খাওয়ার প্রক্রিয়া। ভূয়া বিল, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, মাঠ পর্যায়ের নবায়ন কমিশন গলাধকরনসহ বিভিন্ন অবৈধ খরচ দেখিয়ে তৎকালীন এমডি তৌহিদুল আলমকে চাপে রেখে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা তারা আত্মসাৎ করা শুরু করে। অপার সম্ভাবনাময় কোম্পানীটির উন্নয়ন পিছু হটতে শুরু করে। কোম্পানীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ২০০৯ সালের দিকে তৌহিদুল আলম অবৈধ পথে টাকা দেয়া কিছুটা কমিয়ে আনতে চাইলে মালিকদের সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে এবং ২০১০ সালে তাকে কোম্পানী ছেড়ে চলে যেতে হয়। মালিকরা ২টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গ্রুপ চেয়েছে গরীব, দঃখি, ভিখারীর আমানত আমরা হেফাজত করবো-যার নের্তৃত্বে আছেন মোঃ মুসা মিয়া এবং অন্য গ্রুপটি চেয়েছে-আমরা মালিক, সকল কিছু করার রাইট আমাদের আছে-আমাদের আরও টাকা দেও-এই গ্রুপের নের্তৃত্বে আছে আজিজুর রহমান খান এবং সৈয়দ মুনসিফ আলী। শুরু হয় সৎ এবং অসৎ গ্রুপের ক্ষমতা-দাপটের লড়াই। আজিজুর রহমান ও মুনসিফ আলী অত্যন্ত দুরন্ধর, শঠ ও প্রতারক শ্রেণির মানুষ। তারা সৎ গ্রুপের মুসা মিয়াকে দাবিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন পন্থায় ৭ জন মালিকের মধ্যে ৫ জনই তাদের গ্রুপে নিয়ে যায়। এরা হলো-১। আজিজুর রহমান খান ২। ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুনসিফ আলী ৩। মোঃ শামসুর রহমান ৪। আতিয়ার রহমান লস্কর এবং ৫। আহমেদ ইউছুফ ওয়ালিদ। এদিকে মুসা মিয়া এবং সুলতান আহমেদ ২ জনে গ্রাহক ও কর্মীর পক্ষে যুদ্ধে নামেন। পরবর্তীতে মালিকদের অসৎ গ্রুপ আরও বেপরোয়া হয়। বোর্ড মিটিংয়ের সংখ্যা ঘরিষ্টের ক্ষমতায় নিয়োগ দেয় এম.এ. আজিজ নামক এক বীমা ব্যক্তিত্বকে। মুফতি এম.এ. আজিজ ২০১০ সালের ০১ জুন  কোম্পানীতে যোগদান করে এবং ২০১১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। আজিজুর রহমান ও মুনসিফ আলী গ্রুপকে কোটি কোটি টাকা দেয়ার কারনে সেও ২০১১ সালে খরচ করে মোট ব্যবসার ১৭০%। ১৬৫ কোটি টাকা ব্যবসা করেও ১ টাকার এফডিআর হয়নি ঐবছর। এই অসৎ গ্রুপ সিএফও, চীপ অডিট এবং কোম্পানী সেক্রেটারী এদের নিয়োগ দিয়ে পূর্নাঙ্গ একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে। এই সিন্ডিকেট চক্র কোম্পানীকে লুটে পুটে খাওয়ার প্রমান সারা দেশের বিভাগীয় প্রধান কর্মকর্তারা জানতে পারে এবং গ্রাহকসহ তাদের গনধোলাই দিয়ে আইনের হাতে তুলে দেয়। তেজগাও শিল্পাঞ্চল থানায় তাদের নামে মামলা হয়। মামলা নং ১৭, তারিখ ১৬-০৫-২০১২ইং। মামলার কারনে প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরীচ্যুত হয়ে বিতারিত হয় তারা। ঐ সিন্ডিকেট চক্রটি ২০ কোটি টাকা নবায়ন ব্যবসাকে ১মবর্ষ ব্যবসায় রুপান্তর করে তার ১৭০% কষ্টিং দেখিয়ে ৩৪ কোটি টাকা এবং সারা দেশের বিভাগীয় প্রধানদের প্রজেক্টে জমাকৃত প্রায় ১০ কোটি টাকার বিল প্রজেক্ট থেকে সরিয়ে, উন্নয়ন কর্মকর্তাদের নামে ডেভিট দেখিয়ে সেন্ট্রাল একাউন্টস থেকে ক্যাশ পরিশোধ দেখিয়ে উক্ত ১০ কোটি টাকাসহ মোট ৪৪/৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ২০১১ সালে। ৩০ জুন ২০১১ তারিখে এম.এ. আজিজকে ও চলে যেতে হয়েছে। মালিকদের টাকা আত্মসাৎ, বিভিন্ন ভূয়া বোর্ড মিটিং করা, বিরোধী গ্রুপের কর্মকর্তাদের বহিস্কার করা এসকল কারনে মুসা মিয়া গ্রুপ ২০১১/১২ সালে হাই কোর্টে ৮/১০টি রিট করেছে। এবং সবগুলো রিটেই গ্রাহকের পক্ষে, কোম্পানীর পক্ষে মুসা মিয়া রায় পেয়েছে। সরাসরি দন্ধের জের ধরে মুসা মিয়া গ্রুপ বোর্ড মিটিংয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। কোনঠাসা হয়ে অসৎ গ্রুপ প্রায় ১ বছর চুপচাপ থাকে।

অতঃপর বোর্ড মিটিংয়ের কোরামের ক্ষমতায় আজিজুর রহমান ও সৈয়দ মুনসিফ আলী ০৮ অগাষ্ট ২০১২ সালে এম. মাহফুজুল বারীকে এমডি ও সিইও হিসেবে তাদের পালিত ক্যাডার স্বরূপ তাদের সকল হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য  নিয়োগ দেয়। নিয়োগ দিয়েই মাহফুজুল বারীকে একক স্বাক্ষরে (এক লাখ টাকা পর্যন্ত) কোম্পানীর সকল আর্থিক লেনদেন করার ক্ষমতা প্রদান করে অসৎ গ্রুপ। শুরু হয় তার রাজত্ব। গ্রাহকের অনুমোদিত পাওনা ৪০/৫০ কোটি টাকা পরিশোধ না করে একক স্বাক্ষরে কোটি কোটি টাকা মালিকদের দেয়া শুরু করে মাহফুজুল বারী। বাংলাদেশের কোন ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং লিজিং কোম্পানী, এমনকি কোন ধরনের কোম্পানীতে একজনের স্বাক্ষরে হিসাব নিকাশ নিয়ন্ত্রনের কোন আইন না থাকলেও আইডিআরএর চেয়ারম্যানের সাথে আত্মীয়তার কারনে মাহফুজুল বারী এই ক্ষমতা পেয়েছে বলে সে দাবী করে। বোর্ড রেজুলেশনে ১ লাখ টাকার উপরে সকল চেকে এমডি ও চেয়ারম্যান যৌথ স্বাক্ষর করার কথা কিন্তÍ ১০ লাখ টাকার একটি চেককে সে ভেঙ্গে ভেঙ্গে এক লাখ করে একক স্বাক্ষরে ১০টি চেক ইস্যু করে। এভাবে কোম্পানীর একাউন্ট থেকে একক স্বাক্ষরে এযাবৎ কোটি কোটি টাকা আজিজুর রহমান ও সৈয়দ মুনসিফ আলীকে প্রদান করেছে এবং নিজেও তছরুপ করেছে।

মাহফুজুল বারী নিয়োগ পেয়ে ১০ মাসে ১টি ক্লোজিং করেনি, ২০ লাখ টাকারও নতুন ব্যবসা করেনি; বরং প্রতি মাসে স্ট্যাফ স্যালারী এবং ঘর ভাড়া বাবদ ২ কোটি টাকা করে খরচ করে চলছে। সারা দেশের প্রায় ১ হাজার এ্যাডমিন স্ট্যাফরা গত ৪ মাস যাবৎ বেতন পাচ্ছেনা, সারা দেশে ৭ শত কার্যালয়ের মাসিক ভাড়াও ৫/৬ মাস বাকী। সর্বোপরি গ্রাহকের অনুমোদিত ৪০ কোটি টাকার এসবি, ম্যাচুইরিটি, মৃত্যুদাবী ও সমর্পন পরিশোধ না করে বিভিন্ন পায়তারা করে যাচ্ছে। সে  দেড় / ২ বছর কোনঠাসা হয়ে থাকা আজিজুর রহমান ও সৈয়দ মুনসিফ আলী গ্রুপের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে গ্রাহকের ৪০ কোটি টাকা বিভিন্ন দাবী অপরিশোধিত রেখে গ্রাহক দ্বারা সারা দেশের কর্মীদের লাঞ্চনা, বাড়িঘর ভাংচুর, রাস্তাঘাটে মারধর এবং গাড়ি ছিনিয়ে নেয়ার মত ঘটনা ঘটতে সহায়তা করেছে। আইডিআরের দোহাই দিয়ে উন্নয়ন বিভাগের কর্মীদের গত ১ বছরে কোন কমিশন সমন্বয় করতে না দিয়ে রেখেছে আয়হীন অবস্থায়। গত ৮ এপ্রিল ২০১৩ থেকে অফিসে না এসে সে প্রচার করে বেড়াচ্ছে- মুসা মিয়া গ্রুপের ভয়ে অফিস করিনা। অথচ সে প্রথমে কিছুদিন ১২৫ মগ বাজার রমনা টাওয়ারস্থ ৮ম তলার বাসায় বসে বসে মুসা মিয়ার লোক বেছে বেছে এডিশনাল এমডি. ডিএমডি, প্রকল্প ইনচার্জ, এক্সিকিউটিভ অফিসার, পিয়ন, ড্রাইভার এবং ঝাড়–দারসহ এ যাবৎ ৫৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে বরখাস্থ করেছে। পরবর্তীতে ৮ পান্থপথ, ইউটিসি ভবন, ১৫ তলায় ১ কোটি টাকা অগ্রিম এবং মাসিক ৬ লাখ টাকা ভাড়ায় অফিস নিয়েছে যা আইডিআরএ কর্তৃক অনুমোদন মেলেনি। গোপনসূত্রে জানা গেছে ৮০ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ স্মরনীর ৩০ কাঠা জায়গার উপর নির্মিত নিজস্ব ভবনের প্রতি আজিজুর রহমান ও সৈয়দ মুনসিফ আলীর নজর পড়ার কারনে তারা পায়তারা স্বরূপ উছিলা দেখিয়ে ইউটিসি ভবনে অফিস নিয়েছে। ২০০৯ সালে তৌহিদুল আলম ১ মাসে ফিল্ড থেকে কালেকশন করে ২৫ কোটি টাকা দিয়ে এই ভবনটি ক্রয় করে যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৫০ কোটি টাকা। জানা যায় আজিজুর রহমান ও সৈয়দ মুনসিফ আলী এই ভবনে নিরাপত্তা নেই বলে ভবনটি বিক্রির চেষ্ঠা চালাচ্ছে এবং এখান থেকেও কোটি কোটি টাকা খাওয়ার গভীর প্লানে আছে তারা। এমডি’র অফিসে না আসা, পান্থপথে নতুন অফিস নেয়া এবং সেখানে শতাধিক স্ট্যাফ নিয়োগ দেয়ায় এবং কাজ না থাকায় তেজগাওস্থ ভবনের প্রায় ৪শত এ্যাডমিন স্ট্যাফরা গত ৪ মাস পর্যন্ত বসে বসে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে দিন পার করছে। নিয়মিত বেতন নেই, চাকুরী নিয়ে শংকা, পরিবার পরিজন নিয়ে ভবিষ্যৎ অন্ধকার-অনিশ্চিত দেখছে তারা। তাদের অনেকেরই অভিযোগ মাহফুজুল বারী অবৈধ এমডি, তার নিয়োগপত্র আমরা দেখিনি, সারা দেশে তার নিয়োগের কোন সার্কূলার যায়নি, তার পিএস ও পিয়নের নিয়োগ হয়নি সর্বোপরি তার ভাগিনা আমজাদকে কথিত ডিএমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে মাসে ২ লাখ টাকার উপরে বেতন দিচ্ছে। সে এবং তার পরিবার ভাগিনা আমজাদসহ অবৈধভাবে কোম্পানী থেকে মাসে ২০ লাখেরও বেশী অবৈধ সুবিধা গ্রহন করে। আজিজুর রহমান ও সৈয়দ মুনসিফ আলী এতে সহায়তা করে। আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, ‘আইডিআরএ’র এমডি নিয়োগের নতুন সার্কূলার মোতাবেক বর্তমানে বিরাজিত প্রত্যেক কোম্পানীর এমডিকে আইডিআরএ থেকে তাদের পূনঃ নিয়োগ করাতে হবে। উক্ত সার্কূলার মোতাবেক এম. মাহফুজুল বারী চৌধুরী তার নিয়োগ নবায়ন করেনি বিধায় সে অবৈধভাবে গোল্ডেন লাইফে চাকরী করছে।’ আরও জানা যায় ২০১০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা আতিয়ার রহমান লস্কর শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে যা কর্মীদের তৎপরতায় ধরা পরার আশংকায় সে প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত বিদেশে আত্মগোপনে আছে।
মাহফুজুল বারী সকল কর্মে এক পক্ষকে অন্ধকারে রেখে বোর্ডের দোহাই দিয়ে সকল অপকর্ম করে যাচ্ছে। অথচ মুসা মিয়ার রির্টের কারনে হাইকোর্ট থেকে সকল বোর্ড মিটিং এবং এজিএম বন্ধ করা রয়েছে। এছাড়াও আইডিআরএর নির্দেশ ছিল সকল ক্ষেত্রে ৭ জনের মতামতে এবং উপস্থিতিতে সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা তোয়াক্কা না করে আজিজুর রহমান ও সৈয়দ মুনসিফ আলী চক্র খেয়াল খুশি মত গনতান্ত্রিক দেশের সাড়ে ৮ লাখ গ্রাহকের ৯শত কোটি টাকার কোম্পানীকে চালাচ্ছে। এছাড়াও কোম্পানীর রেজুলেশন মোতাবেক ৫ জনের উপস্থিতিতে কোরাম হবে এবং বোর্ড মিটিং করা যাবে। গত এক বছর ধরে মুসা মিয়া ও সুলতান আহমেদ বোর্ড মিটিংয়ে যাননা, আতিয়ার রহমান লস্কর বিদেশে আর আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ১ বছর ধরে কোম্পানীর কোন কাজে নাক গলাননা; তাহলে মিটিং করার মত পরিচালক থাকে ৩ জন। তাদেরও একত্রে হওয়া হয়না অধিকাংশ সময়ে। তার পরও মাহফুজুল বারী মিটিং দেখিয়ে, রেজুলেশন করে মালিকদের বাসায় পাঠিয়ে স্বাক্ষর আনিয়ে অবৈধভাবে পাশ করিয়ে রাখে যা আইডিআরএ নিয়ম ও নির্দেশ লঙ্গন এবং কোর্ট অবমাননা স্বরূপ।

** কর্তৃপক্ষ যেভাবে প্রতারনা করছে-

২০০৫/২০০৬ সাল থেকে আজিজুর রহমান ও সৈয়দ মুনসিফ আলী অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকা কোম্পানী থেকে আত্মসাৎ করেছে। উক্ত সময়ের সিএফও এবং এমডিদের জিজ্ঞাসাবাদে সকল সত্যতা পাওয়া যাবে বলে স্বীকার করে হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা। ২৬ জুন’২০১৩ তারিখে www.dailyictnews.com এ প্রকাশিত, “গোল্ডেন লাইফ এর ৯শত কোটি টাকা কোথায়? এই প্রশ্ন নিয়ে আমাদরে অনুসন্ধানী রির্পোটারের কাছে হিসাব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত র্কমর্কতা পুনরায় বলনে, দেখুন এফডিআর আছে ৭০ কোটি টাকা, গাড়ি আছে শতাধিক যার র্বতমান মূল্য ১০/১২ কোটি টাকা, ৩০ কাঠা জায়গার উপর যে ভবন তার র্বতমান মূল্য সর্বাধিক ১০০ কোটি টাকা, কুমিল্লায় একটি নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে যার র্বতমান মূল্য হতে পারে ১ কোটি টাকা কিন্তু উক্ত এফডিআরের বিপরীতে লোন নেয়া আছে অনেক টাকা। সর্বসাকূল্যে কোম্পানীর সম্পদ আছে ২শত কোটি টাকার মত। আর বাকী ৭শত কোটি টাকা কোথায় জানতে চাইলে সে বলতে গড়মিসি করে এবং যার জবাব আন্দোলনরত বিভাগীয় প্রধান র্কমর্কতারা জানায়।” তারা বলে এই টাকা আজিজুর রহমান ও মুনসিফ আলী আত্মসাৎ করেছে। কর্তৃপক্ষ সারা দেশে ২ হাজারের উপরে মৃত্যুবরন করা গ্রাহকদের নমিনিকে ২/৩ বছর যাবৎ মৃত্যুদাবী পরিশোধ করছেনা। ৫০ সহাস্রাধিক পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাদের ম্যাচুইরিটি দাবী পরিশোধ করছেনা, ৪ থেকে ৫ লাখ গ্রাহকের টাকা সফটওয়ারে এন্টি নাই, এছাড়া গত ১ বছর পর্যন্ত ৬০/৭০ কোটি টাকার ডিসিএস সফটওয়ারে পুষ্টিং হয়নি, ৬০/৭০ কোটি টাকার পাকা রশিদ এবং লক্ষাধিক গ্রাহকের দলিল দেয়া হচ্ছেনা, হিসাব বিভাগের কোন লেনদেন সফটওয়ারে নাই, এ্যাডমিন স্ট্যাফ এবং উন্নয়ন কর্মীসহ সারাদেশে প্রায় ৪৪ হাজার কর্মী কর্মকর্তার কোন সার্ভিস রুল নাই, নিজস্ব সার্কূলার মোতাবেক পিএফ কেটে রাখে কিন্তÍ চাকুরী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় অধিকাংশ জনই পিএফএর টাকা পায়না, মালিকদের আত্মসাৎকৃত টাকা উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তাদের নামে ডেভিট দেখিয়ে মামলা করে তাদের হয়রানি করা, ১০ থেকে ১২ বছর পলিসি চালিয়ে মেয়াদ শেষে জমাকৃত টাকার চেয়ে কম পরিশোধ করা সহ আরও অনেক ভাবে গোল্ডেন লাইফ তাদের গ্রাহক ও কর্মীদের প্রতারনা করে যাচ্ছে। প্রতারনার ফল স্বরূপ গ্রাহক কর্তৃক লাঞ্চিত হয়ে গত ১৭ জানুয়ারি’২০১৩ তারিখ বরিশালে মিলন হালদার নামে বন্ধুবীমার এক উন্নয়ন কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছে।

** কর্মীদের বক্তব্য-

গৃহকল্যান-০১ এর মাঠ কর্মকর্তা (ইভিপি) নিউটন বলেন,“আইটিসিএল, যুবক এবং ডেসটিনি-২০০০ এর মত আমাদের প্রানপ্রিয় কোম্পানীটি ধংসের দিকে যাচ্ছে। ১৩ বছরে আমরা ৯শত কোটি টাকা কালেকশন করেছি আর এখন হদিস আছে ২শত কোটি টাকার। বাকী ৭শত কোটি টাকা মালিকরা বিশেষ করে আজিজুর রহমান ও মুনসিফ আলী আত্মসাৎ করেছে। পেপার পত্রিকা ও টিভিতে খবর দেখার কারনে আমরা এলাকায় থাকতে পারিনা। গ্রাহক আমাদের রাস্তা-ঘাটে আপমান করে, মারধর করে, অফিসে এসে অফিস ভাংচুর করে। আমার এলাকার ৪/৫টি অফিসে গ্রাহক তালা মেরে দিয়েছে।”

শরিয়তপুর গোসাইরহাট কার্যালয়ের ডিজিএম হাজী বাদশা মিয়া বলেন, “আমাকে গত ২৬ জুন’২০১৩ তারিখ কোদালপুর এলাকায় ডেকে নিয়ে ১০/১২ জন গ্রাহক ব্রিজের উপর বসে আমাকে বেদম মারে। আমাকে বলে তোর কোম্পানী চিনিনা, যে টাকা নিয়েছ তা লাভসহ ১ সপ্তাহের মধ্যে ফেরৎ দিবি নতুবা তোকে  মেরে ফেলব। আমার বাড়ির পাশে বাড়ি কোম্পানীর চেয়ারম্যান শামসুর রহমান সাহাজাদা স্যারের কাছে আমি গেলে সে বলে এ ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। টাকা আমি নেইনি, যারা নিয়েছ তারা এনে দাও। আমার জীবন হুমকির মুখে। আমাকে বাঁচান।”

খুলনা এককবীমার ইনচার্জ শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, “গ্রাহকের মেয়াদ উত্তীর্ন দাবীর প্রায় ১২০ টির মত ফাইল বিগত ২ বছর যাবৎ হেড অফিসে দেয়া। হাজার কান্নাকাটি করেও চেক পাইনা। এব্যাপারে আমার পিডি জসিম স্যার, এমডি মাহফুজুল বারী স্যার এবং ফ্লোর ইনচার্জ মোর্শেদাকে প্রতিদিন ফোন করি কিন্তÍ কোন সমাধান পাই না। এই ২ বছরে আমি নূন্যতম ৫০ বার হেড অফিসে গেছি। একবার ৫/৬টি চেক পেয়েছি তাও জমাকৃত টাকার চেয়ে অনেক কম। গ্রাহক আজও সেই চেক নেয়নি। গত ২০/২৫ দিন পূর্বে এক গ্রাহক লোকজনসহ এসে আমার অফিস ভাংচুর করেছে এবং বিভিন্ন রেজিষ্ঠার সহ সার্ভিসিং সেলের কম্পিউটার নিয়ে গেছে। আমি বিষয়টি হেড অফিসকে জানিয়েছি কিন্তÍ কোন প্রতিকার পাইনি।”

গৃহকল্যান-০১ প্রজেক্ট ইনচার্জ শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, “এমডি মাহফুজুল বারীর নিয়োগ অবৈধ হয়েছে। আইডিআরের নতুন নীতিমালা মোতাবেক মাহফুজুল বারীর নিয়োগ নবায়ন হয়নি। ৩ দিনের বৈরাগী ১৩ বছরের কর্মকর্তারা যারা ৫/৬ বার স্বর্ণপদক পেয়েছে তাদের মিথ্যাভাবে বরখাস্ত করছে। একক স্বাক্ষরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভাই এবং ভাগিনাকে কথিত নিয়োগ দেখিয়ে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছে। ব্যবসার নামে কোন পরিকল্পনা নেই; অথচ মুসা স্যারের সাথে আমরা বৈধ দলে ছিলাম বলে এযাবৎ ৫৫ জনকে অন্যায়ভাবে চাকুরীচ্যুত করেছে। যাদের টাকায় এই ভবন কেনা তাদের গুনে গুনে বরখাস্ত করেছে। দুস্কৃতিকারী কিছু বেইমান মোনাফেককে মাহফুজুল বারী লোভ দেখিয়ে তার দলে নিয়ে আজ আমাদের বৈধ আন্দোলনকে অন্যপথে ধাবিত করার চেষ্ঠা করছে। আমরা অযোগ্য, গ্রাহকের টাকা তছরূপকারী এমডি মাহফুজুল বারীর অপসারন চাই।”

আইডপিএস -০২ প্রজেক্ট ইনচার্জ মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, “গত ৪/৫ মাস পর্যন্ত কোন বেতন পাইনা। ঘরভাড়া দিতে পারিনা। মুদি দোকানে বাকী পরেছে তা পরিশোধ করতে পারিনা। একদিকে গ্রাহকের জ্বালা অন্যদিকে পেটে ভাতনাই; কি করবো আমরা? আমার মত হাজার হাজার কর্মীর একই অবস্থা। অথচ মাহফুজুল বারী ১ কোটি টাকা অগ্রিমে ৬ লাখ টাকা মাসিক ভাড়ায় অফিস নিয়ে গ্রাহকের টাকার উপরে শুয়ে-ঘুমিয়ে রাজার হালে আছেন। আমার মত লাখ লাখ পরিবার না খেয়ে আছে। সরকারের কাছে প্রতিকার চেয়েছি; পাইনি। আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।”

** কর্মীদের পরিবারের অসহায়ত্ব-

গ্রাহক কর্তৃক লাঞ্চিত হয়ে বরিশালে মিলন হালদার নামে কর্মকর্তা স্ত্রী ছেলে মেয়ে রেখে আত্মহত্যা করে গত ১৭ জানুয়ারি’ ২০১৩ তারিখ। মাহফুজুল বারী একদিন তার স্ত্রী অথবা ছেলে মেয়ের কাছে ফোনও করেনি। বরিশালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এর দায় মাহফুজুল বারী এরাতে পারেনা। অর্থ থাকলে আমি বাদী হয়ে এমডি মাহফুজুল বারীকে আসামী করে মামলা করতাম।’ সারাদেশে হাজার কর্মী আয়হীন বেকার জীবন যাপন করছে। গ্রাহকরা তারা দিচ্ছে। ঘরে চাল নেই, ছেলে মেয়ে স্কুলে যেতে পারেনা। যে যেভাবে পারছে জীবন যাপন করছে। কেউ বেছে নিচ্ছে অন্য পেশা। নাখেয়ে ধারে দেনায় জর্জরিত হয়ে গোল্ডেন লাইফের কর্মী কর্মকর্তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

** গ্রাহকদের পরিবারের অসহায়ত্ব-

সারা দেশের সাড়ে ৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে নূন্যতম ১ লাখ গ্রাহক প্রতিদিন প্রধান কার্যালয়সহ দেশের আনাচে কানাচের কার্যালয়ে ভিড় করছে। বছরকে বছর ধরে তারা তাদের কষ্ঠার্জিত জমানো টাকা পাচ্ছেনা। মুনশিগঞ্জের এক বিধবা বলেন, “আমার স্বামী মারা যাওয়ার সময় যে টাকা রেখে গিয়েছিল তা খান সাহেবের কথায় গোল্ডেন লাইফে এককালীন জমা রেখেছিলাম কিন্তÍ মেয়ের বিয়ের জন্য ৮ মাস পর্যন্ত ঘুরেও সেই জমানো টাকা পাইনি। মেয়ের বিয়ে ২ বার পিছিয়েছি। আর মনে হয় বিয়ে দেয়া যাবেনা।” দিনমজুর, কৃষক, ভিক্ষুকসহ লাখ লাখ গ্রাহক কর্মীদের আশ্বাসে পলিসি করে আজ প্রয়োজনে টাকা তুলতে না পেরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। খেয়ে না খেয়ে আছে অনেক গ্রাহকের পরিবার। নরসিংদিতে এক স্ত্রীকে স্বামী বীমা করে টাকা না পাওয়ার কারনে তালাক দিয়েছে।

** সরকার উদ্যোগ নিতে পারে কিনা-

বাংলাদেশের বীমা কোম্পানী সমূহের অভিবাবক হলো- বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। প্রকল্প ইনচার্জ মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা আইডিআরএ ২২ মে’২০১২, ২৩ মে’২০১২, ১৯ মে’২০১৩, ২০ মে ২০১৩, ২৬ মে’২০১৩ এবং ১৭ জুন’২০১৩ তারিখ মোট ৬ বার আবেদন করেছি। কিন্তÍ তারা কোন ভাবে কোন কর্নপাত করছেননা। বরং এক পরিচালক বলেছেন, “চেয়ারম্যান স্যার গোল্ডেন লাইফের কোন দরখাস্ত বা কোন লোককে তার সামনে নিতে নিষেধ করেছেন। গোল্ডেন লাইফের ব্যাপারে তার কাছে কোন কথা বলতেও নিষেধ করেছেন তিনি।”
“আমরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মাননীয় সচিব ড. এম. আসলাম এর বরাবরে লিখিত আবেদন করেছি। এছাড়াও আমরা সরকারের নূন্যতম ১০টি দপ্তরে ঘুরেছি, আবেদন করেছি, প্রতিকার চেয়েছি-কিন্তÍ পাইনি।”

** দুদকে দরখাস্ত-

গৃহকল্যান প্রজেক্ট ইনচার্জ শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা ০২-০৬-২০১৩ ইং তারিখ দুদকের মাননীয় চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন করেছি। চেষ্ঠা করেছিলাম সরাসরি কথা বলার কিন্তÍ পারিনি এবং এ পর্যন্ত কোন প্রতিকারও পাইনি। তবে সরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় এবং এসবি থেকে আমাদের ডেকেছিল, আমরা মাহফুজুল বারীর সকল কর্মচিত্র সেখানে বলে এসেছি। প্রতিকার হয়কিনা জানিনা।”

৫৫ জন চাকুরী হারানো কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে একজন বলেন, “এই বয়সে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব কি করবো কিছু জানিনা। তাছাড়া হাজার হাজার গ্রাহক প্রতিদিন ফোন করে, বাসায় আসে, লাঞ্চিত হই। চাকুরী চাইনা প্রয়োজনে সাড়ে ৮ লাখ গ্রাহকেরে বাঁচান, বাঁচান দিনমজুর, কৃষক, ভিখারীর আমানতের ৯শত কোটি টাকার কোম্পানী।”

চলবে——–



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে টেন মিনিট স্কুল ও বিকাশের উদ্যোগ
কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে অপো বাংলাদেশ
মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বিকাশ
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৪ হাজার শিক্ষার্থী পেল নতুন ল্যাপটপ
এনাবলার অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলো মাস্টারকার্ড
জাইকার সহযোগিতায় বি-জেট ও বি-মিট প্রোগ্রামের সমাপনী প্রতিবেদন প্রকাশ
দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা সম্প্রসারণে ‘বেসিস জাপান ডে ২০২৪’
এআই অলিম্পিয়াডের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য হলেন বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন
সিআইপি সম্মাননা পেলেন উল্কাসেমির সিইও মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমান
রিয়েলমি সি৭৫ পানির নিচে সচল থাকবে ১০ দিন