শুক্রবার ● ২১ জুন ২০১৩
প্রথম পাতা » আলোচিত সংবাদ » ।। অনিশ্চিত গোল্ডেন লাইফ ।। আজকের ধ্বংসে যারা যারা অগ্রপথিক- গোল্ডেন লাইফ জালিয়াতি পর্ব-৪
।। অনিশ্চিত গোল্ডেন লাইফ ।। আজকের ধ্বংসে যারা যারা অগ্রপথিক- গোল্ডেন লাইফ জালিয়াতি পর্ব-৪
এক গ্রাহকের নমিনি বলেন ‘আজিজুর রহমান খান অর্থলোভী, দুরন্ধর, শঠ ও নিচুপ্রকৃতির মানুষ। অর্থের ঘ্রান তাকে তাড়িত করে।’ ০২০০০১০৮৩-৪ নং পলিসিধারী গ্রাহক মারা গেলে তার নমিনি লুক্কু মিয়া ৩ বছর ঘুরেও আজ পর্যন্ত কোন মৃতুদাবী পাচ্ছেনা।
১৯ জুন’২০১৩ প্রকাশিত ৩য় পর্বের পর——
গোল্ডেন লাইফের ৭ জন পরিচালকই সমাজে বর্তমান উচ্চবিত্ত পর্যায়ের। ৩য় পর্বে আজিজুর রহমান খানের কিছু চিত্র আমরা তুলে ধরেছিলাম। আমাদের অনুসন্ধানী কার্যক্রম আরও চলছে। এক গ্রাহকের নমিনি বলেন ‘আজিজুর রহমান খান অর্থলোভী, দুরন্ধর, শঠ ও নিচুপ্রকৃতির মানুষ। অর্থের ঘ্রান তাকে তাড়িত করে।’ ০২০০০১০৮৩-৪ নং পলিসিধারী গ্রাহক মারা গেলে তার নমিনি লুক্কু মিয়া ৩ বছর ঘুরেও আজ পর্যন্ত কোন মৃতুদাবী পাচ্ছেনা। এরকম শুধু মরনদাবীই ১ হাজারের অধিক পেইনডিং আছে। সে অভিযোগ কর বলেন, আমরা জানতে পেরেছি আমাদের টাকা আজিজ ও মুনসেফ এর কাছে। এই আজিজ ও মুনসেফ ডেসটিনির হারুন ও হলমার্কের তানভির এর চেয়েও খারাপ ও অর্থলোভী। আমি পত্রিকায় পড়েছি- আমাদের ৯শত কোটি টাকার মধ্যে ১৫০ কোটি টাকাও নাকী নেই এই টাকা আজিজ ও মুনসেফ আলী খেয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য আইটির প্রধানকে পাওয়া যায়নি। আইটির চাকুরী ছেড়ে দেয়া এক কর্মকর্তা জানান, কোম্পানীতে কোটি কোটি টাকা যারা আইটি ফাঁকি দিয়েছে; তারা কিন্ত বোর্ডের কাছে চিহ্নিত। কারা কারা কোম্পানীর চরম ক্ষতি করছে তাও মালিকরা জানে; তারপরও এই লোকদের সাথেই আজিজ স্যার ও চেয়ারম্যান স্যার আতত করে আজ কোম্পানীর সকল ভাল ও পরিশ্রমী কর্মকর্তা যারা কোটি কোটি টাকা কালেকশন করেছে তাদের অন্যায়ভাবে বরখাস্থ করছে। কারা, কি অপরাধী? জানতে চাইলে সূত্রটি ৮ লাখ গ্রাহকের স্বার্থে নাম প্রকাশে অনিচ্ছা শর্তে জানায়, ডিএমডি মোস্তাফিজুর রহমান এবং এএমডি সামসুল আলম।
বিবরনে মোস্তাফিজুর রহমান-
“সাবেক এমডি’র একটি কম্পিউটার চুরি করে নিয়েছে এই মোস্তাফিজ এবং সে কোম্পানী টাকায় কেনা বহু টুকিটাকি জিনিসপত্র প্রায় বাসায় নিয়ে যেত। কোম্পানীর কয়েক হাজার পিআর বই হলগ্রাম ছাড়া তার নিজস্ব প্রেসে ছাপিয়ে প্রতিটিতে ২২৫ টাকা করে বিল করে কিন্ত প্রকৃতপক্ষে খরচ হয় ১৩০ টাকা। এভাবে এক এক লটে ১০ হাজার বই ছাপিয়ে প্রতিলটে কমপক্ষে ১০ লাখ করে টাকা আত্মসাৎ করে। কোম্পানীতে তার নিজের কমপক্ষে ১০০ জন উচ্চ বেতনধারী এ্যাডমিন স্ট্যাফ আছে যারা প্রতি মাসের বেতনের একটি অংশ ডিএমডি মোস্তাফিজকে দিতে হয়। চাকুরী দেয়ার সময় এককালীন টাকা খায় এবং চিরস্থায়ীভাবেও বেতনের টাকা খায়। জানা গেছে এই সকল স্ট্যাফদের অনেকেরই মূল ফাইলে সার্টিফিকেট নাই। কোম্পানীর কারপুল বিভাগ তার অধীনে ছিলনা। মোস্তাফিজ পরিচালক আজিজ সাহেবকে ম্যানেজ করে কারপুলের দায়িত্ব নেয় এবং জয়ন্ত নামক তার নিজস্ব লোক দিয়ে ১২৫টি গাড়ির বিভিন্ন বিল বেশী বেশী দেখিয়ে মাসে নূন্যতম ১০ থেকে ১২ লাখ চুরি করে। বিষয়টি হাতে নাতে ধরা পড়লে জয়ন্তকে সে অন্যত্র চাকুরী দেয়ার কথা বলে চাকুরী ছাড়ায়। ন্যাশনাল লাইফে জায়গা ক্রয় ও মামলার টাকা আত্মসাতের দায়ে এই মোস্তাফিজ চাকুরী থেকে বরখাস্ত হয়। এই চুরি প্রবনতার কারনে কোন ব্যাংকে সে বেশী দিন চাকুরী করতে পারে নাই। কয়েকটি ব্যাংক থেকে তাকে টাকা আত্মসাতের জন্য চাকুরী হারাতে হয় এবং একটি ব্যাংক চুরির দায়ে বরখাস্ত এবং মামলা করে তাকে জেল খাটায়। গোল্ডেন লাইফে চাকুরিতে আসার পূর্বে ডিএমডি মোস্তাফিজ তার বন্ধুর ফার্মে কর্মরত ছিল। সেখানে বিভিন্ন ভাবে আর্থিক দুর্নীতি করে। ঐ প্রতিষ্ঠানের দুটি গাড়ি ক্রয় করার জন্য মালিক টাকা দিলে একটি গাড়ী প্রতিষ্ঠানের নামে এবং একটি গোপনে তার নিজ নামে রেজিষ্ট্রেশন করে নেয়। বিষয়টি মালিক এর ছেলে জানতে পেরে গাড়ী সহ তাকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়। কোম্পানীর সকল কর্মকর্তা ডিএমডি সাহেবকে একজন প্রতারক, স্বার্থপর এবং টাকা আত্মসাৎ কারী দূর্নীতিবাজ হিসেবে চিনে। সে গোল্ডেন লাইফের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর এক মানুষ।” এই মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য কোম্পানীতে গেলে সে অফিসে অনেকদিন অনুপস্থিত বলে দারোয়ান জানায়। সূত্রটি আরও জানায় এই জগন্য খারাপ লোকটির গড-ফাদার আজিজ ও সুলতান আহমেদ; এই ২ জনই হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপী। এই রিপোর্টারকে ৯শত কোটি টাকার কোম্পানীকে বাঁচাতে অনুরাধ করে আজিজ ও সুলতান সাহেবের ব্যাপারে জানতে।
বিবরনে সামছুল আলম-
“সামছুল আলম লেখা-পড়া জানেনা। তবে সে নিজেকে বিএসসি পাস বলে দাবী করে। কোম্পানীতে যারা উচ্চ শিক্ষিত; কোম্পানীর প্রান তাদেরকে সার্টিফিকেট জাল বলে চাকুরীচ্যুত করেছে আর যার সার্টিফিকেটই নাই সে বহাল তবিয়তে চাকুরী করে। কোম্পানীর সংঘবিধি এবং সংঘস্মারকে কি নিয়ম আছে জানতে চাইলে-জানা নেই মর্মে বলে ‘আজিজ খান, এম. বারী, এইচআর ডিএমডি যেখানে খুশি সেখানে হয়ত সার্টিফিকেট লাগেনা।’ তাকেও অফিসে পাওয়া যায়নি। ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকুরী করে সামছু সাহেব গোল্ডেনের ৭ বছরে নূন্যতম ১০ কোটি টাকার মালিক। চাকুরী হারানো এক ড্রাইভার জানালো- সামছুর পূর্বের ড্রাইভার টাকা আত্মসাতের অনেক কিছু জানে। কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের কাহিনী জানে বলেই সেই ড্রাইভারকে চাকুরী হারাতে হয়েছে। তাৎক্ষনিক তাকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি। (আমাদের সাথে যোগাযোগের অনুরোধ রইল) বিভাগীয় কর্মকর্তা কারো সাথেই তার সম্পর্ক নেই। সে কখনও মাঠ পর্যায়ে যায়না। নোংড়া পলিটিকসে সে পাকা। মোস্তাফিজের সকল অপকর্মের/ টাকা আত্মসাতের সাথে সে জড়িত। তার ‘বন্ধু ইন্স্যুরেন্স’ কুমিল্লা অফিসের ২০ লাখ টাকার অধিক কালেকশন ব্যাংকে টাকা জমা না করে এমনকি কোম্পানীতে কোন ভাবে টাকা জমা না করে আইটির এক অসাধু কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে শুক্রবার ও শনিবার কোম্পানীর সফটওয়ারে এন্ট্রি করেন। তৎকালিন সিএফও বিষয়টি ধরতে পারে এবং বোর্ডকে জানায়। আরও জানা যায় ৭/৮ বছরে সে মাঠ থেকে গ্রাহকের টাকা এনে কোম্পানীতে জমা না করে প্রায় বছরই ২/৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টোটাল কোম্পানীতে সামছুর বিভাগে একটি সিন্ডিকেট আছে যারা এই কাজ করে। তার বিভাগে সবচেয়ে বেশী টাকা ফিল্ড থেকে আসে কিন্ত সবচেয়ে কম টাকা কোম্পানীতে জমা হয়। সারাদেশে বন্ধ ইন্স্যুরেন্সের লক্ষ লক্ষ গ্রাহক কোটি কোটি টাকা দিয়েছে কিন্ত সে টাকার কোন হিসেব নেই, রেজিস্টারে নেই, কম্পিউটারে নেই বিধায় সে টাকা গ্রাহক পাবেনা। সামছু চায়- অচিরেই কোম্পানী বন্ধ হয়ে যাক; নতুবা তাকে হিসেব দিতে হবে। গভীরভাবে নীরিক্ষা করলে সকল কিছুর সত্যতা পাওয়া যাবে।”
বীমা কোম্পানীদের অভিভাবক আইডিআরএ’র চেয়ানম্যানকে ১ সপ্তাহেও পাওয়া যায়নি। তাকে পাওয়া গেলে আমাদের প্রশ্ন থাকতো তার প্রতি-
১। বীমা কোম্পানীর অভিভাবক হিসেবে দূর্নীতিকারী কোম্পানী গোল্ডেন লাইফ এর গ্রাহক আমানত ৯ শত কোটি টাকার দায়ভার কার? আপনার? নাকী সেখানের মালিকদের?
২। ৯শত কোটি টাকার আমানত বাঁচাতে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন? সকলে আশংকা করছে; এখনই কিছু না করলে এটি ডেসটিনি-২০০০ এর মত হবে। তখন কি এর দায়-ভার আপনি অন্যের উপর চাপাবেন?
৩। স্ট্যাফরা ৩ মাস বেতন পায়না, ৫৫ জন কর্মকর্তাকে চাকুরীচ্যুত করেছে, অফিস বন্ধ, গ্রাহকদের ৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করছেনা সর্বপরি ৯শত কোটি টাকা হুমকির মুখে- এব্যাপরে আপনার জবাব কি?
৪। গোল্ডেন লাইফের এমডি নাকী আপনার আত্মীয়? এমডি’র একক স্বাক্ষরে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করে যা আপনার সংস্থার বিধানে আছে কি?
৫। আপনি নাকী মৌখিক অর্ডার দিয়েছেন, যার সার্টিফিকেট জাল তাকে বরখাস্ত করতে? (এমডি’র ভাষ্য) কিন্তÍ যে মাষ্টারস করেছে তাকে এইচএসসি সার্টিফিকেট জাল বলে বরখাস্ত করেছে, তাকি আপনি জানেন?
৬। আপনার ফিল্ড অফিসার নিয়োগে কোন পদে কি শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন?
আমরা আশা করি এই প্রশ্ন গুলো নিয়ে অচিরেই মাননীয় চেয়ারম্যানের কাছে আমরা যেতে পারবো। তখন হয়ত কোথাও প্রতিকার না পাওয়া ৮ লাখ গ্রাহক ও ২০ হাজার কর্মীর জন্য প্রতিকারের পথ বের হবে।
চলবে————