বুধবার ● ১৯ জুন ২০১৩
প্রথম পাতা » আলোচিত সংবাদ » ।। নেপথ্যের নায়ক - পরিচালক আজিজুর রহমান খান।।গোল্ডেন লাইফ জালিয়াতি পর্ব-৩
।। নেপথ্যের নায়ক - পরিচালক আজিজুর রহমান খান।।গোল্ডেন লাইফ জালিয়াতি পর্ব-৩
১৮ জুন’২০১৩ এর পর প্রকাশিত ৩য় পর্ব–-
আমাদের গ্রাহকের টাকা দিয়ে মালিকরা বিশেষত ২জন এবং মাহফুজুল বারী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মাহফুজুল বারী শুধুমাত্র একার স্বাক্ষরে কোম্পানীর সকল লেনদেন করে। ব্যাংক হিসাব তদন্ত করলেই জানা যাবে কত কোটি টাকা সে নিয়েছে এবং কত কোটি আজিজ ও মুনসিফ আলীকে দিয়েছে। বাংলাদেশের কোন ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানী বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একজনের স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন হয় আইনে নেই; অথচ মাহফুজুল বারী দিব্যি তা করে যাচ্ছে। আইডিআরএ’কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি- তাও তারা দেখেনা। দেখবে আর এক হলমার্ক বা ডেসটিনি হলে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, গোল্ডেন লাইফের এক বিগত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “একটি বীমা প্রতিষ্ঠান তার জন্মের ৩ বছরের মধ্যে আইপিও’তে যাওয়ার কথা। নির্দিষ্ট এই সময়ের মধ্যে অনেকেই আইপিওভূক্ত হতে পারেনা; কিন্তÍ গোল্ডেন লাইফ ২০০৫/২০০৬ সালের দিকে আইপিওতে যাওয়ার মত উপযুক্ত ছিল। শুধুমাত্র একজন পরিচালক, বিশেষ করে খান সাহেবের কারনে তা হয়নি। খান সাহেবের ইচ্ছা এবং গভীর কারসাজিতে গোল্ডেন লাইফের আইটি বিভাগকে জোড়ালো করা হয়নি। সকল বিভাগকে সফটওয়ারভূক্ত করা হয়নি। যাতে করে তার সকল কূকীর্তির চিত্র ধরা না পরে। তার নির্দেশে বিশেষত সে যখন চেয়ারম্যান ছিল তখন তার নির্দেশে কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই ফাঁকিকৃত ট্যাক্স এর টাকা সে প্রতিষ্ঠানে না রেখে নিজেই বড় অংকের দাগ মেরেছে। এক সময়ে অনায়াসে আইপিওতে যাওয়ার উপযুক্ত কোম্পানীটি আজ ধ্বংশের মুখোমুখি। দীর্ঘ ৭/৮ বছর কোম্পনীটি বীমা অধিদপ্তর ও পরে আইডিআরএ’র আইন মোতাবেক দৈনিক হারে জরিমানা দিয়ে আসছে।” গোল্ডেন লাইফের কর্পোরেট হিসাবের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, গোল্ডেন লাইফ বিগত ২ বছর দৈনিক ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দেয়। নিয়োগ বা ক্লিয়ারেন্স বানিজ্যেও আজিজুর রহমানের নাম প্রতিষ্ঠানের সবার আগে। কোন কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় অব্যহতি দিলে বা কাউকে অব্যহতি দেয়া হলে কোন না কোন অজুহাতে ঝুলিয়ে রেখে আজিজুর রহমান তার নিজ দপ্তরে তাকে ডেকে আনান এবং বড় অংকের টাকার বিনিময়ে অবশেষে ক্লিয়ারেন্স দেন। প্রকল্প পরিচালক, এএমডি, ডিএমডি, প্রধান হিসাব কর্মকর্তা এবং এমডি এই লেভেলে তার এই ক্লিয়ারেন্স বানিজ্য চলে। প্রকল্প ইনচার্জ শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, “২৬ ডিসেম্বর’ ১৯৯৯ সালের একই দিনে ১১টি কোম্পানী অনুমোদন দেয়; যার মধ্যে গোল্ডেন লাইফ বর্তমানে সবার নিচে অবস্থান করছে। একই দিনের প্রতিষ্ঠানে পপুলার লাইফের লাইফ ফান্ড ২ হাজার কোটি টাকারও বেশী অথচ আমাদের নেই ৬০ কোটি টাকাও। গ্রাহকের ৯ শত কোটি টাকা কোথায় গেল? কোম্পানী উইংডিংআপ হলে কে দেবে গ্রাহকের টাকা?। ভবন, গাড়ি, লাইফ ফান্ড সব মিলে কোম্পানীর ১৫০ কোটি টাকাও নেই। অথচ ৯ শত কোটি টাকার লায়বিলিটি শোধ করবে কি দিয়ে? এর জন্য সম্পূর্নভাবে মালিকরা দায়ি। বিশেষত আজিজুর রহমান খান এবং মুনসিফ আলী স্যার দায়ি।”
প্রধান কার্যালয়ে পলিসি সার্ভিসিং করতে আসা এবং গ্রাহক থেকে ধাওয়া খেয়ে আসা শতাধিত মাঠকর্মী জানান, “২০০০ সাল থেকেই আজিজুর রহমান এবং মুনসিফ আলী কোম্পানী পরিচালনার নেপথ্যে ছিলেন। তাদের কূকীর্তি আমাদের কাছে ধরা পরে ২০১০ সালে। কিভাবে জানতে চাইলে তারা বলে, এই ২ জন পরিচালক তাদের ১০ বছরের সকল দুর্নীতি ধুয়ে মুছে ফেলার জন্য এবং আরও ষ্ট্রংলি (গভীরভাবে) কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার জন্য ২০১০ সালে সিএফও উজ্জ্বল কুমার নন্দী, অডিট মোস্তাফিজুর রহমান এবং সেক্রেটারি জাকারিয়াকে নিয়োগ দেয়। সারা বাংলাদেশের ক্যাশিয়ারদেরকে সরাসরি উজ্জ্বল নন্দীর নিয়ন্ত্রনে করে দিয়ে শুক্রবার শনিবার অফিস খোলা রেখে আমাদের থেকে কোটি কোটি টাকা ক্যাশ গ্রহন করে ব্যাংকে জমা না করে আজিজ ও মুনসিফ আলী স্যার খেয়েছে। তাদের ২ নাম্বারী বুঝতে পেরে সিএফও ও কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই বিষয়ে ২০১২ সালে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা লেখি হয়েছে। সর্বশেষ তারা যখন ২০ কোটি টাকা নবায়ন ব্যবসাকে ১মবর্ষ ব্যবসায় রুপান্তর করে ১৭০% কষ্টিং দেখিয়ে ৩৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তখন আমরা বিষয়টি জানতে পারি এবং গ্রাহকদের সহায়তায় তাদের গনধোলাই দিয়ে আইনে সোপর্দ্দ করি। এই নবায়নকে ১মবর্ষ করার প্রমান্য চিত্র আমাদের কাছে আছে; যা কিছুদিন পূর্বে করা অডিট রিপোর্টে ধরা পরেছে। আমরা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে আবারও আবেদন করছি, তিনি তদন্ত পূর্বক হস্থক্ষেপ করুক, আমাদের কথার প্রমান স্বরূপ ডেসটিনির হারুন আর রশিদ এবং রফিকুল আমিনের মত গোল্ডেনের রাঘব বোয়াল হবে এই আজিজ ও মুনসিফ আলী। আমাদের আহাজারি- মায়ের মত আমাদের এই কোম্পানীকে বাঁচান, কোম্পানীকে বাঁচান।”
উক্ত বিষয় নিয়ে জানার জন্য এমডি মাহফুজুল বারীকে ফোন করলে সে রিসিব করেনি।
কোম্পানীকে বাঁচানোর কথা বলে প্রকল্প ইনচার্জ শাহাদাত হোসেন বলেন “ আমরা নিজেদের জন্য নয়; কোম্পানীকে বাঁচানোর জন্য, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিবের নিকট এবং সর্বপরি আইডিআরএ ৫ বার আবেদন করেছি। জনগনের টাকা নিয়ে ডেসটিনি-২০০০ এর রফিকুল আমিন ৫০টি ফ্ল্যাট কিনেছে, বিদেশে বাড়ি করেছে এবং কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে: আমাদের গ্রাহকের টাকা দিয়ে মালিকরা বিশেষত ২জন এবং মাহফুজুল বারী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মাহফুজুল বারী শুধুমাত্র একার স্বাক্ষরে কোম্পানীর সকল লেনদেন করে। ব্যাংক হিসাব তদন্ত করলেই জানা যাবে কত কোটি টাকা সে নিয়েছে এবং কত কোটি আজিজ ও মুনসিফ আলীকে দিয়েছে। বাংলাদেশের কোন ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানী বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একজনের স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন হয় আইনে নেই; অথচ মাহফুজুল বারী দিব্যি তা করে যাচ্ছে। আইডিআরএ’কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি- তাও তারা দেখেনা। দেখবে আর এক হলমার্ক বা ডেসটিনি হলে।”
বিভিন্ন পত্রিকার তথ্যমূলক সংবাদ এবং আমাদের সরেজমিন পর্যালোচনায়- হাজার হাজার দরিদ্র গ্রাহকের কথা বিবেচনায় আমরা আইডিআরএর চেয়ারম্যানের মোবাইলে না পেয়ে ফোনে চেষ্ঠা করলে বারংবার তার পিএস ‘স্যার সাক্ষাৎকার নিয়ে ব্যস্ত’ বলে ফোন কেটে দেন এই ২ দিন।
রিপোর্টারের আবেদন- আমরা সামান্য কৌতুহল নিয়ে গোল্ডেন লাইফে যাই; আর পেয়ে যাই অসামান্য অসামান্য ক্রাইম কাহিনী। আমাদের আগ্রহ আছে- আমরা আরও গভীরে ডুকবো।
চলবে - - - - - -