সোমবার ● ২০ মে ২০১৩
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » শিক্ষক বাতায়নের যাত্রা শুরু
শিক্ষক বাতায়নের যাত্রা শুরু
‘শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে শিক্ষক’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শিক্ষকদের তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল ‘শিক্ষক বাতায়ন (www.teachers.gov.bd)’ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো ১৬ মে বৃহস্পতিবার। ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষক বাতায়ন উদ্বোধন করেন। শিক্ষক বাতায়ন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইউএনডিপি ও ইউএসএইড এর অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাস্তবায়নাধীন একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এর একটি যৌথ উদ্যোগ।
সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে শিক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষায় উৎকর্ষ সাধনে এক অভিনব উদ্যোগ হলো শিক্ষক বাতায়ন। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য শিক্ষকের তৈরি ডিজিটাল কনটেন্ট অনলাইনে আদান-প্রদান, বিষয়ভিত্তিক কনটেন্ট সংরক্ষরণের একটি অনন্য প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘শিক্ষক বাতায়ন একটি আধুনিক প্লাটফর্ম হিসেবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এর নাম বাতায়ন হলেও এটি আসলে শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দরজা উন্মুক্ত করেছে।’ শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমে সেরা শিক্ষক নির্বাচনের প্রক্রিয়ার প্রশংসা করে তিনি সেরা শিক্ষকদের উৎসাহিত করার ঘোষণা দেন, ‘শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমে নির্বাচিত সেরা শিক্ষকদের স্বীকৃতি ও উৎসাহ দিতে জন্য আমরা তাদের পুরস্কার ও প্রণোদনা প্রদান করবো।’
তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা নয় বরং শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এ মূল মন্ত্র ধারণ করে এটুআই প্রোগ্রামের উদ্যোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ ও ‘শিক্ষক কর্তৃক ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি’ নামে দু’টি মডেল উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেখানে একটি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর, ইন্টারনেট সংযোগ ও কনটেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। এ মডেলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করে ক্লাসে ব্যবহার করছেন। শিক্ষকরা তাদের তৈরি এসব কনটেন্ট একটি ব্লগে (www.ictinedubd.ning.com) আপলোড করেন। যেকোনো শিক্ষক এটি ব্যবহার করতে পারছেন এবং কন্টেন্টের মান উন্নয়ন করে আবার আপলোড করছেন। বর্তমানে এই ব্লগের সদস্য সংখ্যা ২১,০০০-এর অধিক এবং কনটেন্ট সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় এই ব্লগ সাইটের নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। বিদেশী সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় দেশীয় প্রেক্ষাপট ও চাহিদা অনুযায়ীও এর কাঠামোকে ব্যবহার করা যায় না। এমতাবস্থায় সম্পূর্ণ দেশীয় প্রেক্ষাপটে আধুনিক ফিচার সম্বলিত শিক্ষক বাতায়ন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়।
বর্তমানে শিক্ষক বাতায়নে সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের উন্নতমানের ডিজিটাল কনটেন্ট রয়েছে। প্রেজেন্টেশন, ভিডিও, অডিও, ছবি, এ্যানিমেশন আকারে এসব কনটেন্ট পাওয়া যাবে। সব ধরনের ব্যবহারকারী যাতে যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময়ে কনটেন্ট ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য বর্তমান ব্লগের প্রায় ১২ হাজার কনটেন্টকে পর্যায়ক্রমে শিক্ষক বাতায়নে সন্নিবেশ করা হবে। কনটেন্ট ব্যবহারকারীদের অনলাইন মতামতের ভিত্তিতে সপ্তাহে তিনজন শিক্ষককে সেরা কনটেন্ট প্রস্তুতকারী হিসেবে নির্বাচিত করা হবে। শিক্ষক বাতায়নে সংযুক্ত ব্লগের মাধ্যমে কনটেন্ট ব্যবহারকারী শিক্ষকরা তাদের মতামত প্রদান করতে পারবেন। শিক্ষক ব্যাতীত যেকেউ শিক্ষক বাতায়নে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে মতামত প্রদান, কন্টেন্ট আপলোড, ডাউনলোড বা রেটিং এর জন্য বাতায়নের সদস্য হতে হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও এট্আুই প্রোগ্রামের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম খান এ সময় বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে শিক্ষক বাতায়ন উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করলাম। প্রথমে শিক্ষকদের তৈরি কনটেন্ট নিয়ে ব্লগের মাধ্যমে শেয়ার করা হতো। শিক্ষক বাতায়ন হলো দ্বিতীয় প্রজন্মের উদ্যোগ। তৃতীয় প্রজন্মে, আমরা শিক্ষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে কনটেন্ট তৈরির উপযোগী করে তুলবো।’ ট্রিচার্স ট্রেনিং স্কুল ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজের জন্য আলাদা বাতায়ন তৈরির জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে যথাক্রমে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুন, ব্রিটিশ কাউন্সিলের আঞ্চলিক পরিচালক ডমিনিক রেজেস্টার এবং ইউএনডিপি’র অ্যাসিস্টেন্ট কান্ট্রি ডিরেক্টর কেএএম মোর্শেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) এবং এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।