বুধবার ● ৮ মে ২০১৩
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী প্রকল্প জিতলো ‘দ্য বব্স’ অ্যাওয়ার্ড
বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী প্রকল্প জিতলো ‘দ্য বব্স’ অ্যাওয়ার্ড
বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী প্রকল্প ডয়চে ভেলের সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড ‘দ্য বব্স’-এর গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে। প্রতিযোগিতার সেরা ব্লগ বিভাগে পুরস্কার জয় করেছেন চীনের বিশিষ্ট ব্লগার লি চেনপেং।
ডয়চে ভেলে আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের এবারের বিষয় হলো ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ’। ১৭-১৯ জুন বন শহরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বব্স প্রতিযোগিতায়ও বিষয়টিকে আলাদা বিভাগের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী নামের একটি সামাজিক প্রকল্প এবার এই বিভাগে পুরস্কার জয় করেছে।
তথ্যকল্যাণী একজন নারী এবং মূলত তথ্যসেবা প্রদান করেন তিনি। একজন তথ্যকল্যাণী উপযুক্ত প্রশিক্ষণের পর তাঁর নিজের এলাকায় কাজ করেন। তাঁর বাহন হিসেবে থাকে একটি বাইসাইকেল আর তথ্যসুবিধা প্রদানের জন্য ল্যাপটপ এবং বিভিন্ন ছোটখাট চিকিৎসা উপকরণ।
তথ্যকল্যাণী মূলত বেসরকারী উন্নয়ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ নেটওয়ার্কের (ডি.নেট) এর একটি উদ্যোগ। ডি.নেট-এর নির্বাহী পরিচালক অনন্য রায়হান জানান, ২০০৪ সালে পল্লীতথ্য কেন্দ্র হাব স্থাপনের মাধ্যমে তথ্যকল্যাণী উদ্যোগের সূচনা হয় এবং সময়ের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় তথ্যকল্যাণী মডেলের উৎপত্তি হয়েছে। সূচনালগ্ন থেকে মুলত পাঁচটি ধাপে তথ্যকল্যাণী মডেলের বিকাশ ঘটেছে। শুরু হয়েছিল ধারণা প্রমান, উপার্জনের ক্ষেত্র হিসেবে তথ্যকল্যাণী মডেলের পরীক্ষা, তথ্যকল্যাণীদের বিনিয়োগে উৎসাহ সৃষ্টি, তথ্যকল্যাণী ব্যবসায়িক মডেল প্রতিষ্ঠা যা তথ্যকল্যাণী সামাজিক উদ্যোগ কর্মসূচী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চুড়ান্তভাবে পরিচালিত হচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান মানুষেরজন্য ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় ডিনেটের ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে তথ্যকল্যাণী মডেল পরিপূর্ণতা পেয়েছে। সামাজিক ব্যবসার মূল ধারণাকে সামনে রেখে ডিনেট গ্রামীণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন গতিশীল করার লক্ষ্যে এই মডেলটি উদ্ভাবন করেছে।
তিনি বলেন, তথ্যকল্যাণী শিক্ষিত নারীদের একটি স্বনির্ভর পেশা। তথ্যকল্যাণীরা তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় জনসাধারণকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে উপার্জন করে থাকে। এই মডেলের আওতায় তথ্যকে গ্রামীণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া শিক্ষিত নারীদের কর্ম সংস্থানের একটি বড় ক্ষেত্র গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তথ্যকল্যাণী মডেল দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সামাজিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ফেয়ার প্রাইস ইন্টারন্যাশনাল (প্রাইভেট) লি. দায়িত্ব গ্রহন করেছে। ফেয়ার প্রাইস ইন্টারন্যাশনাল (প্রাইভেট) লি. আগামী পাঁচ বছরে দেশের সকল অঞ্চলে তথ্যকল্যাণী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে ৭৯ জন তথ্যকল্যাণী বাংলাদেশের ৭টি অঞ্চলে কর্মরত আছেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আরো ২৫০ জন তথ্যকল্যাণীকে নির্বাচন করে মাঠে নামানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
বার্লিনে অনুষ্ঠিত জুরিমণ্ডলীর বৈঠকে বিপুল সমর্থন অর্জন করে তথ্যকল্যাণী প্রকল্পটি। জুরিমণ্ডলী মনে করেন, এটি একটি ‘বৈপ্লবিক প্রকল্প যার মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলাদেশের অতি দরিদ্র মানুষের নাগালে চলে আসছে।’
ইতিমধ্যে তথ্যকল্যাণী মডেল ২০১১ সালে মন্থন অ্যাওয়ার্ড অর্জন এবং স্টকহোম চ্যালেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড ২০১০ এ চুড়ান্ত পর্বেও জন্য মনোনীত হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়াও তথ্যকল্যাণীর পূর্ববর্তী সংস্করণ মোবাইল লেডি ২০০৫ সালে গ্লোবাল জেন্ডার এন্ড আইসিটি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে।
অন্যদিকে, চীনা লেখক ও সাংবাদিক লি চেনপেং দ্য বব্স-এর সেরা ব্লগ পুরস্কার জয় করেছেন। চীনের সেন্সরশিপ-বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারিতে তাঁর অবস্থান। ‘গোটা বিশ্ব জানে’ নামের বই লিখে কর্তৃপক্ষের রোষে পড়েছেন তিনি। বইয়ের প্রচারের সময় মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল তাঁকে। প্রতিবাদে তিনি নিজের লেখা থেকে অংশবিশেষ পাঠের সময়ে পড়ে নিলেন একটি অক্সিজেন মুখোশ। ‘নীরব পাঠ’-এর সেই অনুষ্ঠানে তাঁর পরনে ছিল একটি টি-শার্ট, যাতে লেখা ‘আমি তোমাদের সবাইকে ভালোবাসি’। চীনে সেই অক্সিজেন মুখোশ ও টি-শার্ট হয়ে উঠেছে প্রতিরোধের প্রতীক। হাজার হাজার মানুষ বেছে নিয়েছেন সেই পথ। পুরস্কারের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জুরিমণ্ডলীর সদস্য ও ব্লগার হু ইয়ং জানালেন, ‘লি চেনপেং তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছেন। সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি তাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন।’
উল্লেখ্য, সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ডের ছয়টি মিশ্র বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এবছর অন্য চারটি জুরি অ্যাওয়ার্ড জয়ী ব্লগ হচ্ছে সেরা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম বিভাগে মরক্কোর তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগ ‘৪৭৫’, সেরা উদ্ভাবন বিভাগে চীনের ‘ফ্রিওয়াইবো ডট কম’, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স বিভাগে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ টোগো-র মানবাধিকার কর্মী ফাবি কুয়াসি এবং সবচেয়ে সৃজনশীল ও মৌলিক উদ্যোগ বিভাগে ইংরেজি ব্লগ ‘মি অ্যান্ড মাই শ্যাডো’। দ্য বব্স-এর ১৫ সদস্যের বিচারকমণ্ডলী বার্লিনে বৈঠকে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে বিজয়ীদের নির্ধারণ করেছেন। প্রতিযোগিতায় বাংলা ভাষার পক্ষে বিচারক ছিলেন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী এবং ব্লগার ড. শহীদুল আলম।
পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ভোটে সেরা উদ্ভাবন বিভাগে ইউজার প্রাইজ জয় করেছে শিক্ষক ডটকম প্রকল্প। সেরা বাংলা ব্লগ বিভাগে ইউজার প্রাইজ বিজয়ী শৈলী। ‘বাংলা: সেরা অনুসরণযোগ্য’ বিভাগে ইউজার বিজয়ী সাইফ সামির। আগামী ১৭-১৯ জুন জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে দ্য বব্স এর জুরি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। দ্য বব্স প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: www.thebobs.com/bengali।