মঙ্গলবার ● ৩০ এপ্রিল ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » আইসিটি অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো বাতিলের দাবি
আইসিটি অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো বাতিলের দাবি
নবগঠিত আইসিটি অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয় সমূহে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো বাতিল এবং আইসিটি ক্যাডার সার্ভিসের দাবি জানিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবিদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি। গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র হল রুমে এক সংবাদ সম্মেলন সোসাইটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সোসাইটির সভাপতি প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ মাহ্ফুজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সোসাইটির মহাসচিব কাজী জাহিদুর রাহমান। এ সময় তিনি বলেন, ‘গত ২২ জানুয়ারি ২০১৩, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগু নবগঠিত আইসিটি অধিদপ্তরের জনবল কাঠামো অনুমোদন করে, আইসিটি মন্ত্রণালয়ে প্রেরন করে। এ জনবল কাঠামো ও নীতিমালায় বলা হয়েছে, এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হবেন একজন অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম-সচিব পদ মর্যাদার কোন কর্মকর্তা। তিনি এই অধিদপ্তরের কেউ নন, তাকে প্রেষণে দায়িত্ব দেয়া হবে এই পদে। শুধু মহাপরিচালক নয়, উপ-পরিচালক, পরিচালক বা অতিরিক্ত পরিচালক-এই সকল পদেই বাইরে থেকে প্রেষণে পাঠানো হবে একজন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাকে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যিনি মহাপরিচালক (ডিজি), তিনি একজন চিকিৎসক। সড়ক ও জনপথ বিভাগের যিনি প্রধান, তিনি একজন প্রকৌশলী। তাই সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হলে এখানেও একজন তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষিত প্রশাসককে দায়িত্ব দিতে হবে।’
তিনি বলেন, উল্লেখিত জনবল কাঠামোতে আইসিটি অধিদপ্তরের অধীনে ৬৪ জেলায় একজন করে প্রোগ্রামারের পদ রাখা হয়েছে এবং উপজেলা পর্যায়ে কাজ করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে ৪২৪টি সহকারী প্রোগ্রামার ও মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারের পদ। প্রোগ্রামারের পদগুলোকে ন্যস্ত করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের অধীনে এবং সহকারী প্রোগ্রামারের পদগুলোকে ন্যস্ত করা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে। সহকারী প্রোগ্রামার বা প্রোগ্রামার উভয় পদের উপরে তথ্যপ্রযুক্তি পেশায় প্রমোশনের অনেক গুলি ধাপ রয়েছে। কিন্তু উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে নিযুক্ত এই সকল কর্মকর্তার কিভাবে প্রমোশন হবে এবং কোথায় হবে, সে বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী একজন প্রোগ্রামারকে সারা জীবন প্রোগ্রামারই থাকতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদেরকে এভাবে উপেক্ষা ও বঞ্চিত করে কখনোই সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে না।
তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের কোন নিজস্ব চেইন অফ কমান্ড সৃষ্টির সুযোগ থাকছে না এখানে। তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীরা সারাজীবন অন্য পেশা থেকে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া বহিরাগত কর্মকর্তাদের অধীনে চাকুরি করতে বাধ্য থাকবে প্রস্তাবিত এই জনবল কাঠামোতে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এছাড়াও গত ৩ এপ্রিল ২০১৩ প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির ৮ম সভার ৩৪(ক) নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আইসিটি অনুবিভাগ, অধিশাখা ও শাখা’র জন্য যে জনবল কাঠামো অনুমোদন করা হয়েছে, সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। ১২টি বড় মন্ত্রণালয়/ বিভাগ এর প্রত্যেকটির জন্য ২৩ পদ সম্বলিত অনুবিভাগ, ১৬টি মধ্যম মন্ত্রণালয়/বিভাগ জন্য প্রত্যেকটির জন্য ১১ পদ সম্বলিত অধিশাখা এবং ২৯টি ছোট মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রত্যেকটির জন্য ৩ পদ সম্বলিত শাখা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। যেখানে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী একেকটি অনুবিভাগের প্রমিত জনবলের বিন্যাসে কোন তথ্যপ্রযুক্তিবিদের স্থান হয়নি। উপর দিকের পদগুলোতে থাকবেন সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপ সচিব ও যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা। এই কাঠামোতে স্থান হয়নি সহকারী প্রোগ্রামার, প্রোগ্রামার, সিনিয়র প্রোগ্রামার, সিস্টেম এনালিস্ট, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট বা সিস্টেম ম্যানেজারের। এহেন জনবল কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমূহে কর্মরত তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনরূপ মতামত প্রদানের সুযোগ থাকবে না। তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ এই জনবল কাঠামোতে নেই।
বর্তমানে বিভিন্ন টেকনিক্যাল পেশার জন্য পৃথক ক্যাডার সার্ভিস রয়েছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ-এদের সকলের জন্যই রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার সার্ভিস। অথচ, সরকার আইসিটি পেশাজীবীদের জন্য ক্যাডার সার্ভিস সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির পক্ষ থেকে দাবিগুলো হচ্ছে: অতি সত্তর আইসিটি ক্যাডার সার্ভিস চালু করতে হবে, আইসিটি অধিদপ্তরের জন্য প্রস্তাবিত জনবল কাঠামো বাতিল করে তা তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের জন্য উপযোগী ও সম্মানজনক করতে হবে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইসিটি অনুবিভাগ/অধিশাখা/ শাখার প্রস্তাবিত তথ্যপ্রযুক্তির টেকসই উন্নয়নে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বিধায় তা বাতিল করতে হবে, এ সকল মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তাকে পদ মর্যাদা অনুযায়ী আইসিটি ক্যাডার প্রতিষ্ঠা করে তাতে আত্তীকরণের মাধ্যমে সমন্বিত করতে হবে, বিসিসি’র ‘বেসিক আইসিটি’ ও ‘বাংলা গভঃ’ সহ অন্যান্য সরকারী প্রকল্পে চাকুরিরত কর্মকর্তাকে রাজস্ব খাতে এনে তাদেরকে আইসিটি ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তথ্যপ্রযুক্তি পেশাকে ‘টেকনিক্যাল পেশা’ হিসেবে ঘোষণা প্রদান করে পেশাজীবীদের জন্য টেকনিক্যাল ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে, সরকারী কলেজ সমূহে কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়টি শিক্ষাদানের জন্য বিসিএস শিক্ষায় পর্যাপ্ত সংখ্যক কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ের পদ সৃষ্টি করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিসিএস সহ-সভাপতি (একাডেমিক) মোহাম্মদ আব্দুস সোহান, সহ-সভাপতি (এডমিন) মিজানুর রহমান সিদ্দিক, যুগ্ম সচিব (অর্থ) আবদুর রহমান খান জিহাদ, বাংলাদেশ কম্পিউটার এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মতিয়ার রহমান এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশনের মহাসচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম পিন্টু, ৬৪ জেলা প্রোগ্রামারস এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম।