শনিবার ● ৩০ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » ব্লগারের ওপর হামলার চেষ্টা বিএনপির
ব্লগারের ওপর হামলার চেষ্টা বিএনপির
।। আইসিটি সংবাদ।। টিভি টকশো’তে যুক্তিতে না পেরে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে প্রতিপক্ষের ওপর। বুধবার লন্ডনভিত্তিক বাংলা টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল এস’ এর ‘বাংলাদেশ টুডে’ নামক লাইভ প্রোগ্রামে ব্রিটেনের সুপরিচিত ব্লগার নিঝুম মজুমদারের ওপর এধরনের হামলার অপচেষ্টা হয়েছে। এনিয়ে কমিউনিটিতে চলছে তোলপাড়।যুক্তরাজ্য বিএনপির বাতিলকৃত কমিটির আহবায়ক এম এ মালেকের নেতৃত্বে এ হামলার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্য গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ব্লগার নিঝুম মজুমদার।
বুধবার চ্যানেল এস এর ‘বাংলাদেশ টুডে’ লাইভ প্রোগ্রামে বাংলাদেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে আলোচনা চলছিল। তানভির আহমেদের উপস্থাপনায় প্রচারিত এ টকশো’তে আলোচক হিসেবে নিঝুম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের যুক্তরাজ্যের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, জাতীয় পার্টি নেতা সাব্বির আহমেদ ও যুক্তরাজ্য বিএনপির বাতিলকৃত কমিটির আহবায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেক।
আলোচনার এক পর্যায়ে কোনো কোনো ব্লগারের বিরুদ্ধে নবী করিম (সা) এর সমালোচনার অভিযোগটি ওঠে। ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় গেলে এসব ব্লগারের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্তা নিতে পারে, যুক্তরাজ্য বিএনপির বাতিলকৃত কমিটির নেতা এম এ মালেকের কাছে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘নবী (সা.) সম্পর্কে আপত্তিজনক মন্তব্যকারী ব্লগারদের খুঁজে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
মালেকের এ মন্তব্যের পর নিঝুম মজুমদার বলেন, ‘‘এ ধরনের অপরাধে ফাঁসির কোনো বিধান বাংলাদেশের আইনে নেই।” নিঝুমের এ মন্তব্যের পরই ক্ষেপে যান মালেক। চোখ রাঙ্গিয়ে তিনি নিঝুমকে বলে ওঠেন, ‘‘এই এই ইউ শাট আপ।” নিঝুম বলেন, ‘‘আপনি আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, আমি ধরিয়ে দিতে পারবো না?” মালেক আবারও ধমকে ওঠেন নিঝুমকে, ‘‘ইউ শাট আপ।” পরে নিঝুমও মালেককে বলে ওঠেন, ইউ শাট আপ।”
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণের জন্যে লাইভ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
নিঝুম অভিযোগ করেন, অফ এয়ারে মালেক তাকে ‘নাস্তিকের বাচ্চা’ ইত্যাদি বলে গালাগালি করেন এবং টিভি স্টুডিও থেকে কিভাবে নিঝুম বাসায় যান, তা দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন তাকে। শুধু তাই নয়, মালেকের দু’জন কর্মী অফ এয়ারে টিভি স্টুডিওতে ঢুকে তাকে আক্রমণ করারও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন নিঝুম মজুমদার। উপস্থাপকের প্রতিবাদের কারণে তারা বের হয়ে গেলেও নিঝুম কিভাবে বাসায় যান, তা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে যান মালেকের কর্মীরা, এমনটাই অভিযোগ করেন নিঝুম।
অনুষ্ঠান শেষে নিঝুম স্টুডিও থেকে বের হতে চাইলে দেখেন, কয়েক গাড়ি ভর্তি মালেকের কর্মীরা চ্যানেল এস স্টুডিও ঘেরাও করে রেখেছেন। নিঝুম বলেন, টকশো’ উপস্থাপক বার বার মালেককে অনুরোধ করতে থাকেন তার কর্মীদের সরিয়ে নিতে । এরপরও এরা সরে না যাওয়ায় পুলিশ ডাকা হয়, এবং পুলিশ এসে নিঝুমের গাড়ি কর্ডন করে তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়। পুলিশের গাড়ি দেখে মালেকের কর্মীরাও সরে পড়েন।
বিষয়টি জানতে চ্যানেল এসের উপস্থাপক তানভিরের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও এ রিপোর্ট লেখা পরযন্ত তাকে পাওয়া যায়নি। নিঝুমের ওপর হামলার অভিযোগ সম্পর্কে যুক্তরাজ্য বিএনপির স্থগিতকৃত কমিটির আহবায়ক এম এ মালেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘লাইভ টকশো’তে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নিঝুমের আপত্তিকর মন্তব্য শুনেই কিছু বিক্ষুব্ধ তরুণ প্রতিবাদ করতে চ্যানেল এস কার্যালয়ে এসেছিলেন। এদের আসার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
তিনি বলেন, আমি কোনো কোনো ব্লগারের নবী করিম (সা.) সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্যের বিষয়ে আমাদের জোট ক্ষমতায় গেলে এদের বিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছি।”
এদিকে, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য সম্পর্কে নিঝুমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি বোঝাতে চেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধের সময় এমনও হয়েছে যে, কোনো কোনো চোর বা ডাকাতও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছেন। এখন তিনি যতো খারাপই হোন, এই যে মুক্তিযুদ্ধকালীন তার দেশপ্রেম এটিকে তো আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কোনো ব্লগার যদি কোনো সময় ধর্মের বিরুদ্ধে লিখে থাকেন, এবং সেই ব্লগার যদি এখন দেশকে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত করতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হন, তবে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত এই আন্দোলনে তার যোগদান যেমন আমরা বাধাগ্রস্থ করতে পারি না, ঠিক তেমনি ধর্মের বিরুদ্ধে তার আগের কোনো লেখার দায়ও নিতে পারে না গণজাগরণ মঞ্চ।”
এদিকে, বুধবারের চ্যানেল এস লাইভ টকশো’ ‘বাংলাদেশ টুডে’তে নিঝুমের প্রতি মালেকের আক্রমণাত্মক আচরণ দেখে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে কমিউনিটিতে। যুক্তিতে হেরে পেশিশক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন অনেক সাধারণ প্রবাসী। আব্দুর রউফ নামের একজন মধ্যবয়স্ক প্রবাসী বলেন, ‘‘টিভি টকশো’র আমন্ত্রিত আলোচকরা হন ভদ্র, শিক্ষিত ও সজ্জন এমনটাই জানতাম। কিন্তু বুধবার টেলিভিশনের লাইভ শো’তে প্রতিপক্ষকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ দেখে নিজে নিজেই লজ্জিত হয়েছি।”
বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সমর্থক বলেন, ‘‘মালেকের স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণেই যুক্তরাজ্য বিএনপির কার্যক্রম আজ স্থগিত। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি মালেকের ওপর ক্ষুব্ধ। আর এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে তারেকের নজরে আসার জন্যেই মালেক টিভি টকশো’তে গিয়ে বিরোধী পক্ষকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করছেন। কিন্তু তার এসব অশালীন আচরণ ব্যক্তি আচরণ না হয়ে অনেকটা যে দলীয় আচরণের দুর্নাম কুড়াচ্ছে, এটি বুঝতে হবে দলের নেতাদেরকে।”
ওই বিএনপি সমর্থক আরও বলেন, ‘‘জামায়াত বিএনপির কাঁধে ভর করে তাদের ফায়দা যে হাসিল করছে, তার আরেকটা প্রমাণ, বুধবার টিভি টকশো’তে মালেকের আচরণ ও প্রতিপক্ষের ওপর হামলার চেষ্টা। জামায়াতের মুখপাত্র আবু বকর মোল্লা ভালো মানুষ সেজে অনুষ্ঠানে বসেছিলেন, আর মালেক তাদের হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।”
উল্লেখ্য, গত বছর যুক্তরাজ্য বিএনপির কারযক্রম স্থগিত করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। এম এ মালেক তখন দায়িত্ব পালনরত কমিটির আহবায়ক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে তখন অভিযোগ ওঠে যে, দলের আহবায়ক কমিটির একটি সভায় তিনি প্রতিটি শাখা কমিটিকে অনুমোদন দেওয়ার বিপরীতে ২ হাজার পাউন্ড করে বাধ্যতামূলক পরিশোধের প্রস্তাব রেখেছেন। ওই সভার এজেন্ডার আরও একটি ছিল, ব্রিটেনে বিএনপির স্থায়ী অফিস ‘জিয়া ভবন’ কেনার লক্ষ্যে শেয়ার ও ডাইরেক্টরশিপ হিসেবে ১০ হাজার, ৫ হাজার, ১ হাজার ও ৫শ’ পাউন্ড করে ধায্য করার প্রস্তাব। ব্রিটেনে দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার একক এখতিয়ার আহবায়ক এম এ মালেকের কাছে ন্যস্ত করার বিষয়টিও গত বছরের ১১ জুলাইয়ের সভার এজেন্ডায় রাখা হয়। এজেন্ডায় আলোচনার বিষয় হিসেবে আরও প্রস্তাব রাখা হয়েছিল যে, পরবর্তী সম্মেলনে ব্রিটেন শাখার সভাপতি হিসেবে বর্তমান আহবায়ক এম এ মালেকই একমাত্র প্রার্থী হতে পারবেন, আর কেউ নন।
এসব অভিযোগের কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি দলের যুক্তরাজ্য কার্যক্রম স্থগিত করে। এ স্থগিতাদেশ এখনও বহাল রয়েছে। দলীয় কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ থাকলেও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে এম এ মালেকসহ অন্যান্য নেতারা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
সূত্র- বাংলানিউজ