সোমবার ● ২৫ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » স্বল্প ব্যয়নির্ভর সাইবার যুদ্ধে বিশ্ব !!!
স্বল্প ব্যয়নির্ভর সাইবার যুদ্ধে বিশ্ব !!!
।। আইসিটি বিশ্ব ।। যুদ্ধ এখন আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্পন্ন দেশের জন্য নয়। যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশও। কোন কোন ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো ধরাশায়ী হবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশের কাছে। এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেল সম্প্রতি ঘটে যাওয়া উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাইবার যুদ্ধে । সংবাদ মাধ্যম এপির এক প্রতিবেদনে দেখা যায় সক্ষমতায় দক্ষিণের চেয়ে এগিয়ে থাকতে সাইবার যুদ্ধে পারদর্শী জনশক্তি গড়ে তুলছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানান, পরমাণু বোমার অধিকারী হলেও প্রচলিত যুদ্ধে সিউলের তুলনায় খুব একটা এগিয়ে নেই পিয়ংইয়ং। এ কারণেই অপেক্ষাকৃত স্বল্প ব্যয়নির্ভর সাইবার যুদ্ধের দিকেই নজর দিচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটে থাকা উত্তর কোরিয়া।গত বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক ব্যবস্থা এবং টিভি নেটওয়ার্কগুলো ব্যাপক সাইবার হামলার শিকার হয়। এ সময় ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান তিনটি টিভি নেটওয়ার্কের ৩২ হাজার কম্পিউটার অচল হয়ে যায়। সিউলের কর্মকর্তারা জানান, উত্তর কোরিয়া বিদ্বেষী এ টিভি নেটওয়ার্কগুলো শুধু নয়; হামলায় অচল হয়ে পড়ে দেশটির যোগাযোগ ও অনলাইন ব্যাংকিং সেবাও। তাদের মতে, কয়েক মাস ধরেই নেটওয়ার্কগুলোর কম্পিউটারে গোপনে এসব ম্যালওয়্যার প্রবেশ করানো হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে এ হামলার জন্য উত্তর কোরিয়াকেই দায়ী করে সিউল। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরীয় সরকারের আইনপ্রণেতারা জানান, হামলার জন্য চীনা একটি কোম্পানির সার্ভার ব্যবহার করা হয়েছে। পরে অবশ্য তারা স্বীকার করেন যে, চীনা কোম্পানিটির সার্ভারকে হয়তো প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করেছে হ্যাকাররা।
এরপর সিউলের বিশেষজ্ঞরা জানান, হামলার উত্স হিসেবে রাজধানী শহরেরই একটি কম্পিউটারকে চিহ্নিত করা গেছে। তবে এরপরও পিয়ংইয়ংকে এ হামলার জন্য দায়ী করছেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ছয়বার সাইবার হামলা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এ ধরনের হামলা ঠেকাতে সম্প্রতি সিউলে সাইবার সিকিউরিটি কমান্ড সেন্টার স্থাপন করে দক্ষিণ কোরিয়া।
সম্পদশালী দক্ষিণের প্রতিবেশীকে দারিদ্র্যক্লিষ্ট উত্তর কোরিয়া ঠিক কতখানি ঝামেলায় ফেলতে পারবে, তা স্পষ্ট নয়। ২০১১ সালে উত্তর কোরিয়ার মাথাপিছু আয় ছিল বার্ষিক মাত্র ১ হাজার ১৯০ ডলার। যেখানে একই সময় দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু আয় ছিল বার্ষিক ২২ হাজার ২০০ ডলার।
অবশ্য কয়েক বছর ধরেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে ব্যাপক অর্থ-সম্পদ বিনিয়োগ করে আসছে উত্তর কোরিয়া। গত বছরের ডিসেম্বরে উত্তর কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা নিজেদের মাটি থেকে রকেটে করে নিজস্ব প্রযুক্তির একটি স্যাটেলাইট মহাকাশে উেক্ষপণ করেন। গত মাসেই ভূগর্ভে তৃতীয়বারের মতো পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালায় দেশটি।
স্বৈরশাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহার উন্মুক্ত নয়। ইদানীং অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তির দিকে ব্যাপক মনোযোগ দিয়েছে দেশটি। এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম রেডস্টার। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে মনোযোগ দিয়েছেন। বিশেষ করে সেখানকার অভিজাতগোষ্ঠী চীনের তৈরি ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহার করছেন। সফটওয়্যার ডেভেলপাররাও গান কম্পোজ থেকে শুরু করে রান্নাবান্নাসহ সব ধরনের কাজের উপযোগী সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের দাবি, হাজার হাজার হ্যাকারকে রাষ্ট্রীয় খরচে সাইবার যুদ্ধে পারদর্শী করে গড়ে তুলছে পিয়ংইয়ং। আর এদের দক্ষতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে চীন ও দক্ষিণ কোরীয় হ্যাকারদের চেয়েও বেশি।
দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন করা মার্কিন বাহিনীর কমান্ডার জেমস থারম্যান গত বছর সিনেটে এক শুনানিতে বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার অব্যাহত সামরিক শক্তিতে নতুন সংযোজন সাইবার যুদ্ধ সক্ষমতা। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সাইবার অনুপ্রবেশ এবং হামলা চালাতে দক্ষ কম্পিউটার হ্যাকারদের নিয়োগ দিচ্ছে দেশটি।’
২০১০ সালে এক প্রতিবেদনে দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের তত্কালীন প্রধান ওন সি হুন জানান, উত্তর কোরিয়ার সাইবার ওয়্যারফেয়ার ইউনিটের সদস্য সংখ্যা ১ হাজার।
২০০৩ সালে পক্ষত্যাগ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে আসেন উত্তর কোরিয়ার সাইবার প্রশিক্ষক কিম হিউং কোয়াং। সে সময় কেয়াং জানান, উত্তর কোরিয়ার শিল্প শহর হ্যামহাংয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দশক ধরে ছাত্রদের হ্যাকিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হ্যাকার বাহিনী গড়ে তুলতে বিজ্ঞান বিদ্যালয়গুলোর ছাত্রদের নিয়োগ দিয়ে থাকে পিয়ংইয়ং। তিনি আরো জানান, হ্যাকিংয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চীন ও রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয় তাদের।
কোয়াং আরো জানান, ২০০৯ সালে উত্তর কোরিয়ার তত্কালীন শাসক দ্বিতীয় কিম জং সাইবার কমান্ডের অধীন হ্যাকারের সংখ্যা তিন হাজারে উন্নীত করার আদেশ দিয়েছিলেন। বর্তমানে সিউলে বসবাসরত এ বিশেষজ্ঞের মতে, বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। আর এদের বড় একটি অংশ চীনে বসবাস করে; যাদের কাজ বিদেশী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোর কম্পিউটারে আক্রমণ চালানো।