মঙ্গলবার ● ২৬ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » মিলিয়ন ডলারের মার্কেটপ্লেস ইল্যান্স
মিলিয়ন ডলারের মার্কেটপ্লেস ইল্যান্স
৷৷এস এম জুবায়ের ৷৷ অনলাইনে আয় এই সময়ের আলোচিত বিষয় । বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশ থেকেও অনেকেই বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে অনলাইনে আয় করছে । ইন্টারনেটে অনেকগুলো মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে বিভিন্নধরনের কাজ পাওয়া যায় । তারমধ্য বাংলাদেশের জন্য বিপুল সম্ভাবনার একটি মার্কেটপ্লেস হলো ইল্যান্স (www.elance.com)। যুক্তরাষ্ট্রের এই মার্কেটপ্লেস প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ফাবিও রসাটি । ১৯৯৯ সালে এই মার্কেটপ্লেসের কার্যক্রম শুরু হয় । তবে প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে । পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে এখানে কাজের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় । ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্নধরনের ক্যাটাগরির কাজের ক্ষেত্র নিয়ে সম্পূর্ণভাবে যাত্রা শুরু করে ইল্যান্স ।
ইল্যান্সের বর্তমান অবস্থান
বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৭০ টি দেশ এই মার্কেটপ্লেসের সাথে জড়িত রয়েছে । প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫,০০,০০০ ক্লায়েন্ট, যার মধ্যে গুগল, মাইক্রোসফট, আমাজন, এবং ইবে’র মত কম্পানি রয়েছে। আছে ১৭০ টি দেশের প্রায় ২০ লাখ ফ্রিল্যান্সার। সাইটটিতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০ লাখ জব পোষ্ট হয়, এবং প্রতি জবে গড়ে প্রায় ১০ জন করে আবেদন করেন। শুরু থেকে এই পর্যন্ত ইল্যান্সের ফ্রিল্যান্সাররা সব মিলিয়ে আয় করেছেন প্রায় ৭০৯ মিলিয়ন ডলার, যা যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের জন্য একটি রেকর্ড।
বর্তমানে এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমানে কাজ করার সুযোগ । সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন , গ্রাফিক্স ডিজাইন , এসইও ,ইমেইল মার্কেটিং ইত্যাদি টেকনিক্যাল কাজ ছাড়াও এডমিন সাপোর্ট, সেলস এবং মার্কেটিং , ব্যাবস্থাপনা এবং ফাইনান্স, রাইটিং ইত্যাদিসহ প্রচুর পরিমান কাজ পাওয়া যায় এই মার্কেটপ্লেসে।
ইল্যান্সে বাংলাদেশের অবস্থান
ইল্যান্স মার্কেটপেসে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে আইসিটি নিউজের সাথে কথা বলেন ইল্যান্সের বাংলাদেশী কান্ট্রি ম্যানেজার সাঈদুর মামুন খান। তিনি জানান, কনট্রাক্টর এর দিক থেকে ইল্যান্স মার্কেটপেসে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম পজিশনে আছে । বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩৩,০০০ ফ্রিল্যান্সার আছে যারা ইল্যান্সে নিবন্ধিত। এর মধ্যে শতকরা ২০ শতাংশ কাজ করছে সেলস এবং মার্কেটিং নিয়ে, ৪৯ শতাংশ আইটি এবং প্রোগ্রামিং, ২১ শতাংশ ডিজাইন এবং মাল্টিমিডিয়া, ১৬ শতাংশ এডমিন সাপোর্ট, ৮ শতাংশ রাইটিং, ১ শতাংশ ব্যাবসায়, এবং ২ শতাংশ ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করছে। ২০১২ তে ইল্যান্স.কম-এ প্রায় ১১ হাজার কাজে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা নিয়োগ পেয়েছেন, যা তার আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
বিভিন্ন কাজে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের আয় নিয়ে একটি আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন সাঈদুর মামুন খান। তিনি জানান, সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা ইল্যান্স থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৬ কোটি টাকা) উপার্জন করেছেন। ২০১২ সালে ইল্যান্সে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ আয় করা কাজগুলো হচ্ছে - পিএইচপি থেকে ৫,৬০,০০০ ডলার, এইচটিএমএল থেকে ৩,৩০,০০০ ডলার, মাইএসকিউএল থেকে ২,৭৫,০০০ ডলার, ওয়ার্ডপ্রেস থেকে ২,৬৬,০০০ ডলার, সিএসএস থেকে ২,৬৩,০০০ ডলার, ফটোশপ থেকে ১,৪২,০০০ ডলার, ডাটা এন্ট্রি থেকে ১,০০,০০০ ডলার, এন্ড্রয়েড থেকে ৯৫,০০০ ডলার, গ্রাফিক ডিজাইন থেকে ৯১,০০০ ডলার এবং ইন্টারনেট মার্কেটিং থেকে ৮৭,০০০ ডলার আয় করেছে ।
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের যে ব্যাপারটি মুখ্য থাকে, তা হল ঘণ্টাপ্রতি আয়ের পরিমান। বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের ইল্যান্সে ঘণ্টাপ্রতি গড় আয় প্রায় ৮ ডলার। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পৃথকভাবে ঘণ্টাপ্রতি গড় আয় - এডমিন সাপোর্ট (৪.৫ ডলার), আর্কিটেকচার এবং ইঞ্জিনিয়ারিং (১০.৬ ডলার), গ্রাফিক ডিজাইন এবং আর্ট (৯.২ ডলার),আইটি এবং প্রোগ্রামিং (১২.৯ ডলার), ব্যাবস্থাপনা এবং ফাইনান্স (১৯.৩ ডলার), সেলস এবং মার্কেটিং (৮.৯ ডলার) এবং রাইটিং (৭.৩ ডলার)।
কাদের জন্য ফ্রিল্রান্সিং পেশা ?
ফ্রিল্রান্সিং পেশায় যে কেউ আসতে পারেন । তবে এক্ষেত্রে বায়ারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ইংরেজি ভাষা জানতে হবে । এখানে শুধু ডিজাইন বা প্রোগ্রামিং জানা লোকরাই আসবে তা কিন্তু নয় কারন এখানে টেকনিক্যাল কাজের বাহিরে অনেক কাজের ক্ষেত্র আছে । বিবিএ ,জার্নালিজম থেকে শুরু করে যেকোনো সাবজেক্টের ছাত্ররাই এই পেশায় আসতে পারে । তবে এইধরনের মার্কেটপ্লেস মেয়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারন এখানে মেয়েরা পড়ালেখা শেষে চাকুরি না করে ঘরে বসেই স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে । ইল্যান্সের বাংলাদেশী কান্ট্রি ম্যানেজার সাঈদুর মামুন খান বলেন , বর্তমানে ইল্যান্সে অর্ধেকের বেশী মেয়ে ফ্রিল্রান্সার কাজ করছেন । ফ্রিল্রান্সারদের মধ্যে প্রায় ৬৪ % মেয়ে ফ্রিল্রান্সার । এদিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে । বাংলাদেশে ফ্রিল্রান্সারদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা ৯৪% আর মেয়েদের সংখ্যা মাত্র ০৬% । সুতরাং এই পেশায় মেয়েদের এগিয়ে আসা উচিত ।
কি কি যোগ্যতা লাগে ?
ফ্রিল্রান্সার হতে হলে দুটো দক্ষতা অবশ্যই থাকতে হবে। প্রথমটি হল কারিগরি দক্ষতা। মানে যে কাজটি করতে চান সে সম্পর্কে বিষদ জানা এবং তার খুটিনাটি সম্পর্কে সম্মক অবহিত থাকা। শুধুমাত্র একটি কাজ জেনেও আপনি খুব ভালো ফ্রিল্রান্সার হতে পারবেন । তবে অবশ্যই কাজটি ভাল করে জানতে হবে । তাই আগে ধৈর্য ধরে কাজ শিখতে হবে । কাজে স্কিল না হয়ে এই পেশায় আসা যাবেনা ।
কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিকেশনের দক্ষতাও বাড়াতে হবে। অনেকের ভাষায় দখল না থাকায় এই পেশায় ভালো কিছু করতে পারছে না । বায়ারের সাথে কমিউনিকেশন করার জন্য অবশ্যই ইংরেজি জানতে হবে । তাই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে ।
সবশেষে , কাজের জন্য বিড করলে রেটের দিকে খেয়াল রাখতে হবে । খুব কম রেটে কাজ করা যাবে না । তাতে করে ঘণ্টাপ্রতি আয়ের পরিমান কমে যাবে । মার্কেটপ্লেসের নিয়মগুলো মানতে হবে । সবসময় সৎ থাকতে হবে । বায়ারের কাজ সময়মত জমা দিতে হবে । সবকিছু ঠিক থাকলে আপনি হতে পারবেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার ।