সোমবার ● ১৮ মার্চ ২০১৩
প্রথম পাতা » নিউজ আপডেট » বই ফটোকপি নিয়ে আইনি বিতর্ক !
বই ফটোকপি নিয়ে আইনি বিতর্ক !
পড়ালেখার উদ্দেশ্যে পাঠ্যবইয়ের ফটোকপি করা যাবে কি না, তা নিয়ে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক ধরনের দ্বন্দ্বে পড়েছেন।
আল জাজিরা টেলিভিশনের অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কোর্সের পাঠ্যবই ফটোকপি করার অভিযোগে গত বছর বিশ্বের তিনটি বৃহত্ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও এর ক্যাম্পাসের পাশে অবস্থিত একটি ফটোকপির দোকানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ও টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস তাদের অভিযোগে উল্লেখ করেছে, পাঠ্যবই ফটোকপি করা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন। এতে প্রকাশক ও লেখকেরা অর্থপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জন্য বিবাদীদের কাছে বাদীপক্ষ এক লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
কিন্তু গত সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের তিন শতাধিক শিক্ষাবিদ ও লেখক সংশ্লিষ্ট প্রকাশদের কাছে এই আইনগত পদক্ষেপ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। প্রকাশকদের মামলায় উল্লেখ করা ৩৩ জন লেখক ও শিক্ষাবিদও আছেন এই তালিকায়।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, দক্ষিণ আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, মিসর ও ফিলিস্তিনের ওই শিক্ষাবিদেরা বলছেন, প্রকাশকেরা তাদের স্বার্থে এই মামলা করেছে। এ ধরনের বইয়ের ফটোকপি আইনসিদ্ধ। এটা প্রকাশকের আর্থিক ক্ষতি করছে না; বরং ভারতে শিক্ষার বিস্তারে এটি অপরিহার্য।
গত বছর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও একই ধরনের একটি চিঠি লিখে প্রকাশকদের তাদের আইনগত পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে দিল্লির জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিবেদিতা মেনন বলেন, ‘মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আবেদনকারী লেখক ও শিক্ষাবিদেরা বই বিক্রির অর্থের দিকটি নিয়ে চিন্তিত নন। আমরা চাই, আমাদের বই যথাসম্ভব সর্বত্র ছড়িয়ে যাক। প্রকাশকেরা মুনাফার জন্য মামলা করেছেন। এখানে শিক্ষাবিদ ও লেখকদের কোনো স্বার্থ নেই। তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয় আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।’
তবে এ প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টমাস মেটক্যালিফ বলেন, ‘আমার লেখা বই থেকে কিছু রয়্যালটি পেলে আমি খুশিই হব।’
বইয়ের ফটোকপি নিয়ে চলমান এ বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুডিশিয়াল সায়েন্স -এর মেধাস্বত্ব আইনের অধ্যাপক সামনাদ বশির বলেন, ভারতের ১৯৫৭ সালের কপিরাইট আইন এই ধরনের ফটোকপি অনুমোদন করে।
এদিকে, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোর্সের পাঠ্যবই ফটোকপি নিষিদ্ধ করেছে দিল্লি হাইকোর্ট। এতে দেশটির শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ফটোকপির পক্ষে আন্দোলনকারী শিক্ষক, লেখক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই মামলায় প্রকাশকেরা জয়লাভ করলে ভারতের মতো দরিদ্র দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর তা গুরুতর প্রভাব ফেলবে। কারণ, দেশটিতে বইয়ের ফটোকপি করা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। সূত্র - প্রথম আলো