মঙ্গলবার ● ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » ইংক কার্ট্রিজ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা
ইংক কার্ট্রিজ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা
৷৷ আইসিটি নিউজ ডেস্ক ৷৷ কালির পরিমাণ দিন দিন কমে যাওয়ায় প্রিন্টারের জন্য নতুন ইংক কার্ট্রিজ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিক লাভের আশায় প্রিন্টার কোম্পানিগুলো তাদের কার্ট্রিজের আকার ছোট করার পাশাপাশি তাতে দেয়া কালি এবং অন্যান্য সুবিধাও কমিয়ে দিচ্ছে। খবর গার্ডিয়ানের।
যুক্তরাজ্যের একটি কার্ট্রিজ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কার্ট্রিজ ওয়ার্ল্ডের মালিক মার্টিন ডাইকহফ জানান, প্রতিদিনই ক্রেতারা এসে অভিযোগ করেন যে নামী ব্র্যান্ডের কার্ট্রিজগুলোর কালি অতি দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এক দশক আগের তুলনায় এখানকার কার্ট্রিজগুলোয় কালি থাকে যত্সামান্য। এমনকি মাঝে মাঝে কালি এত কম থাকে যে, তা ধর্তব্য নয়।’
উদাহরণ হিসেবে, এপসনের টি০৩২ কালার কার্ট্রিজের কথা তুলে ধরেন ডাইকহফ। ২০০২ সালে অবমুক্ত করা কার্ট্রিজটি আকারে ২০০৮ সালে অবমুক্ত করা টি০৮৯ এর সমান। যেখানে টি০৩২ কার্ট্রিজে কালি থাকত ১৬ মিলিলিটার সেখানে টি০৮৯-এ কালি থাকে মাত্র সাড়ে ৩ মিলিলিটার। হিউলেট প্যাকার্ডের (এইচপি) কার্ট্রিজগুলোরও একই অবস্থা বলে জানান তিনি। এক দশক আগের এইচপি কার্ট্রিজগুলোয় কালি থাকত ৪২ মিলিলিটার, দাম ছিল ২০ পাউন্ড। বর্তমানে এইচপির স্ট্যান্ডার্ড কার্ট্রিজগুলোয় কালি থাকে মাত্র ৫ মিলিলিটার, কিন্তু দাম রাখা হচ্ছে ১৩ পাউন্ডের কাছাকাছি।
বাণিজ্য ম্যাগাজিন রিসাইকেলার জানায়, এইচপির কার্ট্রিজগুলোর ভেতরে থাকা স্পঞ্জের আকারও ছোট হয়ে গেছে গত কয়েক বছরে। কার্ট্রিজের বাকি অংশে কোনো কিছুই থাকে না। এপসন কার্ট্রিজের কমিয়ে দেয়া হয়েছে ইংক ট্যাংকের আকৃতি।
রিসাইকেলারের সম্পাদক ডেভিড কনেট বলেন, ‘ভোক্তাদের বেশি বেশি কার্ট্রিজ কেনাতেই এ কৌশল বেছে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। বড় বড় প্রিন্টার কোম্পানিগুলো কার্ট্রিজে কালির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে, সেসঙ্গে কম্পিউটার চিপেও বিভিন্ন কারসাজি করে কালির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছে। এর পাশাপাশি আগ্রাসী বিপণনের মাধ্যমে কার্ট্রিজ রিফিলকেও নিরুত্সাহিত করে চলেছে তারা।’
ইউকে কার্ট্রিজ রিম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের কারিগরি পরিচালক ক্রিস ব্রুকস অবশ্য এজন্য সরাসরি কোম্পানিগুলোর মুনাফাভোগী চরিত্রকেই আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, বড় কোম্পানিগুলোর একটাই কাজ; কম কালি দিয়ে দরিদ্র ক্রেতাদের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে অধিক পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়া।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানান, মূল্য উপযোগের দিক দিয়ে প্রিন্টার কার্ট্রিজই সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানের পণ্য। ক্যাননসহ শীর্ষ তিনটি প্রিন্টার নির্মাতা কোম্পানিই তিন কালারের যে কার্ট্রিজ বের করে, তাতে ২ মিলিলিটারেরও কম কালি থাকে। ডাইকহফ বলেন, ‘এগুলো খুবই বাজে; কারণ, যদি তিন রঙের মধ্যে কোনো একটি আগে ফুরিয়ে যায় তবে পুরো কার্ট্রিজটাই বাতিল হয়ে যায়। এজন্য ক্রেতাদের এমন প্রিন্টার কিনতে পরামর্শ দিচ্ছি, যেগুলোয় প্রতিটি রঙের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কার্ট্রিজ ব্যবহার করা যায়।’
এদিকে কালির পরিমাণ কমিয়ে উত্পাদকরা নতুন নতুন পণ্য নিয়ে আসছে। বিশেষ করে এক্সএল বা বৃহৎ কার্ট্রিজ নামে পণ্যগুলো খুব বেশি করে উত্পাদন করছে কোম্পানিগুলো; যেগুলোর আকৃতি প্রমাণ সাইজের কার্ট্রিজেরই সমান। এইচপি৩০০ কার্ট্রিজে কালি থাকে ৫ মিলিলিটার; দাম পড়ে ১৩ পাউন্ড। কিন্তু এইচপি৩০০এক্সএলে থাকে ১৬ মিলিলিটার কালি; দাম রাখা হয় ২০ থেকে ২৫ পাউন্ড। আকৃতির দিক দিয়ে এ দুটি কার্ট্রিজের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এমনকি কিছু কিছু এক্সএল কার্ট্রিজে থাকা কালির পরিমাণ বছর কয়েক আগেকার স্ট্যান্ডার্ড কার্ট্রিজের তুলনায় কম।
কার্ট্রিজ পুনঃপ্রক্রিয়াকারী প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্টাল বিজনেস প্রডাক্টসের নির্বাহী প্যাট্রিক স্টিড মনে করেন, এক্সএল কার্ট্রিজগুলো ক্রেতাদের ঠকানোর এক মোক্ষম অস্ত্র। তিনি বলেন, ‘অর্ধেকভর্তি কার্ট্রিজের ওপর এক্সএল লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করছে এইচপি। আবার সেগুলো ভরে দিয়ে নতুন করে অর্থ বাগিয়ে নিচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে। কালি একটু বেশি দেয়ার খরচ হতে পারে মাত্র কয়েক পেনি বেশি। কিন্তু তারা অবিশ্বাস্যভাবে অর্থ হাতাচ্ছে।’
প্রিন্টার কোম্পানিগুলো অবশ্য ভোক্তাদের ঠকানোর বিষয়টি মানতে নারাজ। এক বিবৃতিতে এইচপি জানায়, ‘প্রিন্টিংয়ের খরচ বের করতে গেলে শুধু একটি বিষয় হিসাব করলে চলে না। ক্রয়মূল্য, কার্ট্রিজ কিংবা প্রিন্টারের প্রাথমিক মূল্য, পৃষ্ঠাপ্রতি মূল্য কিংবা কার্ট্রিজে থাকা কালির পরিমাণ সব একসঙ্গে হিসাব করতে হবে।’ কোম্পানিটি অবশ্য ভোক্তাদেরকে পৃষ্ঠাপ্রতি প্রিন্টিং খরচের দিকেই নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের দাবি, অফিসজেট প্রো মডেলগুলোর পৃষ্ঠাপ্রতি কালি খরচ ২০০৯ সাল থেকেই একই স্তরে রয়েছে।
এপসন আরো জানায়, অগ্রসরমান প্রযুক্তির কল্যাণে ১০ বছর আগের তুলনায় এখনকার প্রিন্টহেডগুলো (কাগজের ওপর যেগুলো কালি ছড়ায়) অনেক বেশি কার্যক্ষম। এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলে, একই পরিমাণ কালি দিয়ে এখনকার প্রিন্টারগুলো অনেক বেশি প্রিন্ট করতে সক্ষম।
বিশ্লেষকরা অবশ্য জানান, শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ক্যাননই কালি কমানোর বিষয়ে একটু কম আগ্রাসী। কিন্তু তাদের সাম্প্রতিক পিজিআই-৫২৫বিকে ইংকজেট কার্ট্রিজে এখন থাকে মাত্র ১৯ মিলিলিটার কালি। ২০০৫ সালে অবমুক্ত করা তাদের বিসিআই-৩বিকে কার্ট্রিজে কালি থাকত ২৬ মিলিলিটার। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো ক্যাননও এক্সএল কার্ট্রিজ বের করেছে।
সমালোচকরা অবশ্য স্বীকার করেছেন, প্রযুক্তির উন্নয়নে বর্তমানের প্রিন্টহেডগুলো অনেক বেশি কার্যকর। কিন্তু ব্রুকস বলেন, এ উন্নয়নকে কার্ট্রিজের কালি পাঁচ গুণ কমিয়ে দেয়ার যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর কোনো সুযোগ নেই। এখন প্রিন্টারের কালির দাম লিটারপ্রতি মাত্র কয়েক ইউরো। অনেক কার্ট্রিজ বানাতে ৫০ সেন্টেরও কম লাগে। কিন্তু কোম্পানিগুলো যে দাম নিচ্ছে তাতে বোঝা যায় যে, কী পরিমাণ মুনাফা করছে তারা।
(আইসিটি নিউজ, প্রযুক্তি সংবাদ,আইটি নিউজ,আইটি সংবাদ,বাংলাদেশ প্রযুক্তি, প্রযুক্তি পণ্য,তথ্যপ্রযুক্তি সংবাদ, সর্বশেষ প্রযুক্তি সংবাদ,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি,ডিজিটাল বাংলা এর সর্বশেষ সংবাদ জানতে ভিজিট করুন www.dailyictnews.com )