মঙ্গলবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি বিশ্ব » অ্যাপলের স্মার্টওয়াচ
অ্যাপলের স্মার্টওয়াচ
একই সঙ্গে কম্পিউটার, দ্বিমুখী রেডিও, ম্যাপিং যন্ত্র কিংবা টেলিভিশন হিসেবে কাজ করবে- এমন একটি হাতঘড়ি সদৃশ ডিভাইস তৈরি করছে অ্যাপল। এ ধরনের যন্ত্র সাধারণত বিজ্ঞান কল্পকাহিনী কিংবা গোয়েন্দা গল্পে দেখা গেলেও প্রথমবারের মতো ধারণাটিকে কাজে লাগিয়ে ডিভাইস ব্যবহারের পদ্ধতিকে আরেকবার বদলে দিতে চাইছে বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিটি। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
স্মার্টওয়াচ নামে পরিচিত ডিভাইসটি তৈরি করা হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ায় অ্যাপলের প্রধান কার্যালয়ে। কোম্পানিটির বেশ কয়েকটি সূত্র জানায়, ঘড়ির মতো দেখতে যন্ত্রটি তৈরি করা হচ্ছে বাঁকানো কাচ দিয়ে। যন্ত্রটি চলবে আইওএস অপারেটিং সিস্টেমে। ধারণা করা হচ্ছে নতুন ডিভাইসটিতে থাকবে অ্যাপলের ভয়েস অ্যাসিসট্যান্ট সিরি, তাত্ক্ষণিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম ম্যাপ সফটওয়্যার, টেক্সট আদান-প্রদান সুবিধা ও হেলথ মনিটর। সূত্রগুলো জানায়, এ ঘড়ির মাধ্যমে অ্যাপলের পাসবুক পেমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহারের করে আর্থিক লেনদেনও করা যাবে।
অবশ্য ঠিক কবে যন্ত্রটি বাজারে আসবে তা স্পষ্ট নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন এই বৈশিষ্ট্যগুলো হাতঘড়িতে যোগ করার মতো পর্যাপ্ত প্রযুক্তি এবং মেধা অ্যাপলের রয়েছে। গত বছর কর্নিং গরিলা কাচ নির্মিত আইফোন নিয়ে আসে কোম্পানিটি। দারুণ স্থিতিস্থাপক এ কাচ সহজেই বাঁকানো সম্ভব। অ্যাপল জানায়, এর ফলে কাচ বাঁকানো নিয়ে ঝামেলা থেকে মুক্ত হওয়া গেছে। গরিলা গ্লাসের ওপর নির্ভর করেই অ্যাপলের প্রকৌশলীরা তৈরি করেছেন উইলো গ্লাস; বাতাসে যেটি কাগজের মতোই নড়তে পারে, ভেঙে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা ছাড়াই।
কর্নিং গ্লাস টেকনোলজিসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা পিট বোকো জানান, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নমনীয় কাচ তৈরি নিয়ে গবেষণা চলছে। সম্প্রতি এটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বোকো বলেন, যেকোনো বেলন আকৃতির গায়েই এ কাচটি জড়িয়ে দেয়া সম্ভব। আর সেটা হতে পারে মানুষের হাত। এ মুহূর্তে যদি ঘড়ির মতো কিছু বানাতে চাই, তো এই কাচ দিয়ে সহজেই তা বানানো সম্ভব।
বোকো অবশ্য জানান, ভাঁজ করা যাবে এমন যন্ত্র তৈরিতে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু প্রকৌশলগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ মানুষের শরীর এমনভাবে নড়ে যে, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গির সঙ্গে নড়বে এমন নমনীয় কিছু তৈরি করা কঠিনই বটে।
অবশ্য অ্যাপলের ঘড়ি নিয়ে মাতামাতি এবারই প্রথম নয়। গত বছরই চীনা যন্ত্রপাতি সাইট টেক ডট ১৬৩ জানায়, ব্লুটুথযুক্ত ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের ঘড়ি বানাচ্ছে অ্যাপল।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টারের বিশ্লেষক সারাহ রটম্যান অ্যাপস বলেন, এ খাতের জন্য পর্যাপ্ত প্রযুক্তি আর জনবল সংগ্রহ করেছে অ্যাপল। আইফোনের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিয়ে এ কাজ করছে কোম্পানিটি। আর তাতে পরিধানযোগ্য কম্পিউটারের বাজারে শীর্ষস্থান দখলের দিকে নীরবে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। পরিধানযোগ্য কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ধরা হয় সারাহকে।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে পরিধানযোগ্য কম্পিউটারকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই অ্যাপলের। যে হারে যন্ত্রের বহুমুখী ব্যবহার বাড়ছে, তাতে মানব শরীর কম্পিউটারের জন্য বিশাল একটি ক্যানভাসে পরিণত হয়েছে। তবে অ্যাপলের পরিধানযোগ্য নতুন যন্ত্রটির উন্নয়ন কতটা এগিয়ে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বিনিয়োগকারীরা অবশ্য আইওয়াচের মতো পণ্যকে সাদরে গ্রহণ করতে অপেক্ষা করছেন। বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ মনে করছেন, এক দশকের মধ্যেই স্মার্টফোনের বিকল্প হয়ে উঠবে এ পণ্যটি।
পিপার জেফরির বিশ্লেষক জিন মানস্টার বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস প্রযুক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছবে যখন ভোক্তারা ট্যাবলেটের পাশাপাশি চশমা কিংবা ঘড়ির মতো পরিধানযোগ্য কম্পিউটার ব্যবহারে সক্ষম হবেন। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই ভয়েস কল, টেক্সট মেসেজ, কুইক সার্চ কিংবা নেভিগেশন করতে সক্ষম হবেন তারা। আর যন্ত্রগুলো হবে আইফোনের চেয়ে সস্তা। আর তাতে উদীয়মান বাজারগুলো সহজেই ধরতে পারবে অ্যাপল।’
অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টিম কুক অবশ্য বরাবরই পরিধানযোগ্য কম্পিউটারের পক্ষে। নিয়মিতভাবে নাইকি ফুয়েলব্যান্ড পরেন তিনি। এই ব্রেসলেটের মতো যন্ত্রটি আইফোন অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করে ব্যবহারকারীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
গত বছর রেটিনায় তথ্য পাঠাতে সক্ষম চোখের ওপর স্থাপনযোগ্য একটি ডিসপ্লের পেটেন্টের জন্য আবেদন করে অ্যাপল। আর ছোট যন্ত্র বানাতে অ্যাপলের জুড়ি নেই। আইপড ন্যানো এতই ছোট যে, সেটাকে একটি বড় আকৃতির পিঁপড়া বলে মনে হতে পারে।
শুধু পরিধানযোগ্য কম্পিউটারই নয়, বড় আকৃতির যন্ত্রেরও উন্নয়ন করছে অ্যাপল। কোম্পানির একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিশেষ ধরনের টেলিভিশন এবং গাড়ি তৈরির দিকেও মনোযোগ রয়েছে কোম্পানিটির।