সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » উম্মুক্ত মঞ্চ » ইন্টারনেট অন এয়ার
ইন্টারনেট অন এয়ার
জানুয়ারি ১৫, ২০১৩ এর কথা। ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক এ ফিরে যাচ্ছিলাম ছুটি শেষে। বরাবরের মত আমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যাচ্ছিলাম। ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে নিউইয়র্ক জন এফ কেনেডি (জেএফকে) এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে সময় লাগে ১৮ ঘণ্টা! এর মধ্যে শুধু দুবাই এয়ারপোর্টে ১ ঘণ্টা বিরতি। ১৮ ঘণ্টা উড়োজাহাজে কাটানো সবসময়ই একটা কঠিন ব্যাপার ছিল। জানুয়ারি ১৫, ২০১৩ এর আগ পর্যন্ত আমার কাছে আমিরাত এয়ারলাইন্স এর এই ফ্লাইট গুলো ছিল খুবই বিরক্তিকর।
বর্তমান যুগে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করা যায়না। আর যেকোনো এয়ারক্রাফট এর ফ্লাইট এ এর কোনটাই ব্যাবহার করার সুযোগ নেই। তার উপর যদি হয় ১৮ ঘণ্টার ফ্লাইট, কিছুই বলার বাকি থাকেনা। ইমেইল অথবা ফেসবুক ব্যবহার না করে আজকাল খুব কম মানুষই দিন পার করেন। তখন বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টা। আমিরাতের ফ্লাইটটি ছাড়ার পথে। ফ্লাইট ছাড়ার সময় বরাবরের মত ফ্লাইট ক্যাপ্টেন এর কণ্ঠসর ভেসে এলো। প্রতিটি ফ্লাইট এর মত এখানেও সাবধানতা অবলম্বনের বিষয়গুলো তুলে ধরছিলেন ফ্লাইট ক্যাপ্টেন এবং ক্রুরা। সকল সুবিধাগুলো উল্লেখ করার পর শেষের দিকে বলা হল, আমিরাত এই প্রথম ওয়াই ফাই (wifi) ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করেছে। শুনলাম কিন্তু কানে নিলামা না। ভাবলাম হয়ত ভুল শুনছি। অবশেষে ফ্লাইটটি টেইক অফ করলো এবং ১০,০০০ ফিট উপরে গিয়ে বিমানের ভেতরের বাতিগুলো আবার জালিয়ে দেয়া হল। ইন্টারনেট এর ব্যাপারটি তখনও আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এক পর্যায়ে ভাবলাম যে একটু ঘেঁটেই দেখি ব্যাপার টা কি।
সৌভাগ্যবশত ল্যাপটপটি আমার হ্যান্ডব্যাগেই ছিল। ল্যাপটপ বের করে ওয়াইফাই তে কানেক্ট করার চেষ্টা করলাম। দেখলাম ‘অন এয়ার’ নামের একটি ওয়াই ফাই কানেকশন লিস্ট এ আছে। সেটিতে কানেক্ট করলাম এবং একটি নতুন ইন্টারনেট ব্রাউজার ওপেন করলাম। সাথে সাথে এলো একটি আমিরাত ওয়েলকাম এবং লগইন পেজ। সেখানে সাইনাপ করতে হল এবং সাইনাআপ এর শেষে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কেনার অপশন থাকলো। দুটি অপশন ছিল। একটি ছিল ৫০ মেগাবাইট পনেরো ডলারের বিনিময়ে ও আরেকটি ছিল ১০০ মেগাবাইট যার মূল্য ২০ ডলার। আমি ১০০ মেগাবাইট এর অপশনটি নিলাম এবং ক্রেডিট কার্ড এর মাধ্যমে পে করলাম। সাথে সাথে ‘কানেক্ট’ করার একটি অপশন আসলো। আমি কানেক্ট এ ক্লিক করে ব্রাউজার টি রিফ্রেশ করলাম, গুগল এর হোম পেজটি ওপেন হোল! তখনও বিশ্বাস করলাম না যে অন্য কোন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা যাবে। তবুও ব্রাউজার এ www.facebook.com টাইপ করলাম। সাথে সাথে ফেসবুক এর লগ ইন পেজ এলো! সত্যিই অনেক অবাক হলাম। ফেসবুক এ লগইন করে প্রথমবারের মত উড়োজাহাজ থেকে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাস আপডেট করলাম। সত্যিই এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা ছিল।
প্রথমবার উড়োজাহাজ এ থাকা অবস্থায় নিজেকে সারা দুনিয়ার সাথে সংযুক্ত মনে হচ্ছিল আর এই প্রথম ১৮ ঘন্টার ফ্লাইটটিতে একঘেয়েমি লাগছিলনা। বন্ধুরা ফেসবুক স্ট্যাটাস এ কমেন্টস করছিল এবং রিতিমত নিজের ইমেইল এর কাজ গুলোও সেরে ফেললাম। স্কাইপ সফটওয়ারটি দিয়ে নিউইয়র্ক এবং বাংলাদেশে থাকা আপনজনদের মোবাইলে ফোন করে কথাও বললাম। এ এক অদ্ভুত অনুভুতি। এই প্রথম সত্যি মনে হোল যে তথ্যপ্রযুক্তি কল্যানে পৃথিবী আসলেই অনেক এগিয়ে গেছে। ধন্যবাদ আমিরাত এয়ারলাইন্স।
[লেখক: চীফ টেকনোলজি অফিসার, সফটওয়্যার ওয়েব টেক ইউএসএ, এলএলসি]