সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি বিনোদন » গেমারদের অর্থ চুরির চেষ্টা হ্যাকারদের
গেমারদের অর্থ চুরির চেষ্টা হ্যাকারদের
২০১২ সালে গেমারদের তথ্য চুরির জন্য প্রতিদিন গড়ে সাত হাজার বার চেষ্টা চালায় হ্যাকাররা। ক্যাসপারস্কি সিকিউরিটি নেটওয়ার্কসের (কেএসএন) সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য জানানো হয়, এতে উল্লেখ করা হয় অনলাইন গেম এবং অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমের পাসওয়ার্ডের মতো ব্যক্তিগত তথ্য চুরির জন্যই এ ধরনের হামলা চালানো হয়। খবর টেলিকম এশিয়ার।
ক্যাসপারস্কি ল্যাবের বিশেষজ্ঞরা জানান, গেমের ক্ষেত্রে গেমারদের অ্যাভাটার এবং গেমের ভেতরে থাকা বিভিন্ন বিষয় চুরির চেষ্টা চালায় হ্যাকাররা। এসব তথ্য চুরি করতে পারলে প্রকৃত অর্থের বিনিময়ে এ ধরনের ভার্চুয়াল পণ্য বিক্রি করে দেয় এরা। আবার অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমের তথ্য চুরি করতে পারলে গেমারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি অর্থ চুরি করে সাইবার অপরাধীরা।
রাশিয়ার প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় আরো দেখা যায়, এ ধরনের তথ্য চুরির জন্য প্রতিদিন প্রতিজন গেমারের ই-মেইলে গড়ে ১০টি ক্ষতিকর লিংক এবং অ্যাটাচমেন্ট-সংবলিত বার্তা পাঠায় হ্যাকাররা। আবার গড়ে ৫০০টি ব্রাউজারভিত্তিক আক্রমণের মাধ্যমে গেমারদের অ্যাকাউন্ট অচল করে দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়। ক্যাসপারস্কি জানায়, অনলাইন গেমকে লক্ষ্যবস্তু বানানো ক্ষতিকর প্রোগ্রামের সংখ্যা প্রতিদিন পাঁচ হাজার করে বাড়ছে।
অনলাইন গেমকে আক্রান্ত করতে সাইবার অপরাধীদের সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র হচ্ছে সোস্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। বিশেষ করে ফিশিং বা গেমারদের কাছে নিজেদের বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক হিসেবে উপস্থাপন করাটাই বেশি ব্যবহার করে এরা।
গত বছর এ ধরনের ফিশিং ওয়েবসাইটে ১ কোটি ৫০ লাখ বার নিয়ে যাওয়া হয়েছে গেমারদের। এ ওয়েবসাইটগুলোর বেশির ভাগই দেখতে নামি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটের মতো। গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক গড়ে ৫০ হাজার বার গেমারদের এসব ওয়েবসাইটে যেতে বাধ্য করা হয়। অবশ্য ক্যাসপারস্কির বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের অনেকগুলো আক্রমণ ঠেকিয়ে আসছেন বলে দাবি করেন।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বের প্রতিটি গেমারই সাইবার অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় রয়েছে। তবে সব জায়গায় আক্রমণের মাত্রা এক নয়। যেখানে গেমারদের ঘনত্ব বেশি, সেখানে এ ধরনের আক্রমণের পরিমাণও তুলনামূলক বেশি। আক্রান্ত হওয়ার দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে রাশিয়া, চীন ও ভারতের গেমাররা। তাদের গেমে থাকা অ্যাভাটার ও অন্যান্য মূল্যবান তথ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ক্যাসপারস্কি জানায়, কয়েক বছর ধরেই এ তিনটি দেশের গেমাররাই সাইবার অপরাধীদের মূল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে হুমকির মুখে রয়েছেন। এদের আক্রমণ করার প্রবণতা কমার বদলে দিন দিন আরো বেড়েই চলেছে।
অবশ্য এ ধরনের আক্রমণ থেকে গেমাররা সহজেই নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে বাঁচতে গেমারদের কিছু পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে ক্যাসপারস্কি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বিশেষজ্ঞদের এ মতামত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাহুল্য বলে মনে করতে পারেন গেমাররা। তবে এসব নীতি মেনে চললে আখেরে গেমারদেরই লাভ। ক্যাসপারস্কি ল্যাবের ম্যালওয়্যার বিশেষজ্ঞ সার্গেই গোলোভানভ জানান, ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় কিছু নিয়মনীতি মেনে চললেই এ ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এক, অনলাইন গেম অ্যাডমিনের কাছ থেকে ব্যক্তি তথ্য চেয়ে পাঠানো ই-মেইল কিংবা কোনো অজুহাত দেখিয়ে তথ্য প্রদানের অনুরোধ সরাসরি বাতিল করে দেয়া। এসব মেইলে থাকা লিংকে কোনো অবস্থাতেই ক্লিক করা যাবে না।
দুই, অপরিচিত কোনো সূত্র থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক গেম প্যাচ ডাউনলোড না করা। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বোনাস পাওয়ার আশায় করা এ ধরনের ডাউনলোডের কারণে গেমারদের কম্পিউটারে ট্রোজান ভাইরাস ঢুকে পড়ে। এ ধরনের প্রোগ্রামগুলো গেমারদের যন্ত্রে ঘাপটি মেরে থেকে পাসওয়ার্ড চুরি করে তা সাইবার অপরাধীদের জানিয়ে দেয়। শুধু অনলাইন গেমই নয়, ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে ক্যাসপারস্কি।
ভার্চুয়াল ডেবিট কার্ডের ক্ষেত্রে খরচের পরিমাণ কমিয়ে নির্ধারণ করে দিতে পারেন গেমাররা। তাতে হুট করে কিছু অর্থ খোয়া গেলেও অ্যাকাউন্টে থাকা বাকি অর্থ বেঁচে যাবে। ক্যাসপারস্কি অবশ্য জানিয়েছে, এত কিছুর পরও গেমারদের বোকা বানানোর মতো অস্ত্রের অভাব নেই হ্যাকারদের ঝুলিতে।