সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » ভালবাসা নাকি কাঁদায়
ভালবাসা নাকি কাঁদায়
বুকের ভিতর এমন হাহাকার হবার কথা ছিলো তো তোমার। তোমার চেয়ে হয়তো কমই ভালবাসতাম তাই হয়তো বিশ্বাস করতে পারতেনা। হয়তো বিশ্বাস করতে চাইতে বোধহয় আমার জন্যেই পারতেনা। ফেসবুকে অনেক বান্ধবী থাকতেই পারে, কিন্তু প্রেমিকা যে একটাই হতে পারে সেইটা তুমি তোমার উঠতি বয়সের দরুন বুঝতে পারতে না। আমি ছাত্র খারাপ হইলেও বুঝানোর অসামান্য ক্ষমতার জোড়েই হয়তো ২-৩ দিনের জন্যে তুমি বুঝতে পারতে। ২-৩ দিন পর নিজেই ইতিহাসে ফিরে যেতে কোন টাইম মেশিন ছাড়াই। তারপর আবার সেই খুনসুটি এবং আবার তোমাকে বুঝিয়ে বলা।
তোমাকে মাঝে মাঝে কুফা বলতাম বলে সকালে আমাকে ঘুম ভাঙ্গায় দিতে মোবাইলে pay for me call দিয়ে, যেন সুকণ্ঠি কারো স্বরে আমার ঘুম ভাঙ্গে। সেইবার চন্দ্রিমায় চোখ বন্ধ করে বাদাম খাওয়ার কথা মনে আছে? কার মুখে আগে নষ্ট বা পচা বাদাম যায় এই নিয়ে খাওয়া শুরু করেছিলাম। পরে জিতেছিলাম আমিই কারন পচা বাদাম প্রথম আমার মুখেই পড়ে। মাঝে মাঝে যেমন আকাশে সূর্য থাকলেও বৃষ্টি হয় তোমারো হয়েছিল তাই, হাসতে হাসতে চোখে পানি চলে এসেছিল তোমার, আমার বিকৃত মুখ দেখে।
কিন্তু পরের ঘটনাতো তোমার অজানায় থেকে গেল। সেইবার গুলিস্থানের ডালা থেকে ভাল ব্র্যান্ডের লেভেল লাগানো একটা পারফিউম মাত্র ৩৫ টাকায় কিনে খুব সুন্দর করে প্যাক করে দিয়েছিলাম তোমাকে। পরে তুমি নেট সার্চ দিয়ে বুঝলে ব্র্যান্ডটা নামকরা এবং তোমাকে ঠকাইনি। পারফিউমের মত আমার স্মৃতি জেন উড়ে না যায় তাই তুমি সেটা ব্যবহার না করে ওইভাবেই রেখে দিয়েছিলে, হয়তো আজও সেইভাবেই আছে। ভাগ্যিস ব্যবহার করোনি।
আমার হাতের রান্না খারাপ ছিল বলে নিজে রান্না করে আমাকে খাওয়াতে পছন্দ করতে। আমাকে খাওয়ানোর জন্য কাঠ ফাটা রোদ-ঝড়বৃষ্টি খুব সহজেই তুমি উপেক্ষা করতে। আমার চিঠি লিখার অভ্যাসটা তুমি কখনই পছন্দ করতে না। অর্ধেকটা পড়ে কাঁদতে কাঁদতে রোজ রাতে ঘুমিয়ে পড়তে। এখনো আমার মনে হয় সিনেমার নায়কের মায়েদের চেয়ে কোন অংশে তুমি কম কাঁদতে পারতে না। শুধু বলতে “আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে, আমি সব একসাথে পড়ব।” ইসস সত্যি যদি ঠিকানাটা জানা থাকত। তুমিও বলনি আমিও জানতে চাইনি।
তোমার রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ ছিল বলে স্বেচ্ছাই রুগীকে রক্ত দিতে। সেখানে তুমিই কিনা রক্ত শূন্যতায় চলে গেলে। তুমি গেছো ঠিকি কিন্তু তোমার যাওয়া কিন্তু আমাকে দুর্বল করতে পারেনি। হয়ত এই জন্যেই তুমি সবসময় বলতে; “তুমি আমাকে ভালোবাসো HB পেন্সিলের কালির মত যা মাঝে মাঝেই অস্পষ্ট থাকে আর আমি বাসি কলমের কালির মত যা পৃষ্ঠা না ছেড়া পর্যন্ত স্পষ্টই থাকে”। আমার মাথা এখনও নত তোমার সেই কথায়।
এখন আর তোমার বুকের ভিতর হাহাকার করার কোন কারন দেখিনা; তোমার সেই ব্যথাটা আমি এখন অনুভব করতে পারি। এখন মোবাইল বন্ধ থাকলেও সকালে উঠে যেতে পারি; ইচ্ছে করে অর্ধেক পচা বাদাম কিনি, বাদামওয়ালা হা করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে; নিজেই এখন ভালই রান্না করতে পারি, তৃপ্তি সহকারে খাই ঠিকি কিন্তু সামনে বসে কেউ আমার খাওয়া দেখেনা।
রাস্তায় বের হইলে ডান হাত বাড়িয়ে দেই তোমার ছোঁয়া পাবো বলে কিন্তু চক্ষু লজ্জাই এখন আর বাড়াইনা পাছে লোক যদি বলে বসে স্কুলের সবাইকে শপথ করানোর অভ্যাস হইতো আজও আমার থেকে গেছে। তোমার পাল্লা ভারী করার জন্য আমি কাঁদার চেষ্টা করি, তোমার মত ফুপিয়ে না চিৎকার করে। মাঝেমধ্যে কাঁদি কিন্তু ঠিকি, জানি তুমি শুনতে পাওনা কিন্তু বুঝতে কি পার? ভাবি এখন কি কেউ আর আমার জন্যে কাঁদে? কাঁদা কিন্তু দূর থেকেও যায় সেইটা তো তুমি শিখিয়েছ।
লিখেছেন- সউদ মিনহাজ
saudminhaz@gmail.com