সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » তুই কি জানিস না?
তুই কি জানিস না?
দোস্ত,
কেমন আছিস? এখন তো স্বামী, বাচ্চা, সংসার নিয়ে খুব ব্যস্ত। তোর এই ফাজিল বন্ধুটার কথা তো মনেই নেই। শুনলাম তোর নাকি চারটা বাচ্চা? ব্যাপার কিরে দোস্ত, সামনের বার বিপিএলে টীম পাঠানোর চিন্তা ভাবনা আছে নাকি?
আচ্ছা, আমার সাথে তোর প্রথম কিভাবে পরিচয় হয়েছিল মনে আছে? জানি মনে নেই। এখন তো তোর মনে থাকে, কখন বাচ্চাদের সময় করে হরলিক্স খাওয়াতে হবে। আমার কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে। শীতকাল ছিল তখন। আমরা ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে। একদিন ক্লাসে ঢুকে দেখি পুরো ক্লাস খালি। শুধু একটা মেয়ে তন্ময় হয়ে বই পড়ছে। আমি এসেছি অনেক দূর থেকে, বাসে ঠেলাঠেলি করে। গরম লাগছে ভীষণ। এসেই সবগুলি ফ্যান ঠাসঠাস ছেড়ে দিলাম। তুই স্পষ্ট স্বরে বললি, ‘এই ফ্যানটা অফ করে দাও।’ আমি চমকে উঠে ফ্যানটা বন্ধ করলাম। তুই সেদিন কি বই পড়ছিলি সেটা কি মনে আছে? হুমায়ূন আহমেদের ‘তিথির নীল তোয়ালে’। অসাধারণ একটা বই। বইটা আমার আগেই পড়া ছিল। শুধু তোর সাথে কথা বলার জন্যেই সেদিন বইটা নিয়েছিলাম। এরপর আমরা দুজন খুব ভাল বন্ধু হয়ে উঠলাম। আমাদের দুইজনের মধ্যে অসাধারণ একটা মিল ছিল। দুইজনেই খুব বই পড়ুয়া।
তুই কি জানিস পুরো ভার্সিটি জীবন তোর প্রেমে আমি হাবুডুবু খাচ্ছিলাম? বুঝতে পারছি শুনে অনেক অবাক হচ্ছিস। কিন্তু কথা সত্য। কোনদিন তোর প্রেমে পড়েছিলাম সেটা শোন। পহেলা বৈশাখ ছিল সেদিন। আমাদের ভার্সিটি জীবনের প্রথম পহেলা বৈশাখ। ভার্সিটিতে চমৎকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। তুই আসলি একটা হলুদ শাড়ি পড়ে। আমি তোকে দেখেই অবাক হয়ে গেলাম। কি অপূর্বই না লাগছে তোকে। অনেক আগে গ্রামের বাড়িতে পুকুর ঘাটের পাশে, একটা নাম না জানা হলুদ পাখি দেখেছিলাম। তোকে দেখে সেই পাখিটার কথাই মনে পড়ে গিয়েছিল। আমি আমতা আমতা করে তোকে বললাম, ‘দোস্ত তোকে তো আজ অনেক সুন্দর লাগছে।’ তুই আমার পেটে একটা খোঁচা দিয়ে বললি, ‘সবসময় ফাইজলামি করিস না।’ কিন্তু সেদিন ওটা ফাজলামি ছিল নারে দোস্ত। সেদিন থেকেই তোর প্রতি আমার ভালোলাগাটা শুরু। তোকে কিভাবে সেটা জানাব ঐ নীল নকশা করছিলাম। কিন্তু একদিন দেখি তুই খুব হেসে হেসে আমাদের ভার্সিটির একটা ছেলের সাথে কথা বলছিস। তুই সবারই খুব ভাল বন্ধু, সবার সাথেই হেসে হেসে কথা বলিস জানি। কিন্তু ওদিনের ঐ কথা বলার ধরণটা অন্যরকম ছিল। এবং যা ভাবলাম তাই হল। তুই আমাকে জানালি ছেলেটার সাথে তোর সম্পর্ক হয়েছে, এক মাস আগেই সে তোকে প্রপোজ করেছে। আর ও আগের থেকেই তোর বন্ধু ছিল। ছেলেটা ভাল দেখে তুই হ্যা বলেছিস। কিন্তু আমার সাথে তোর বন্ধুত্ব ঐ ছেলেটারও আগে। পার্থক্য হল আমি বোকা তোকে মুখ ফুটে বলতে পারিনি কিছুই। তুই জানিস না ভার্সিটির পেছনের পাহাড়টাতে একা একা বসে সেদিন অনেকগুলি সিগারেট শেষ করেছিলাম। সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে আমার কষ্টগুলি উধাও করার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলাম।
আজ অনেকদিন পর অর্ণবের ‘তুই কি জানিস না’ গানটা শুনছিলাম। তোর কি মনে পড়ে এই গানের এ্যালবামটা তুই আমার জন্মদিনে গিফট করেছিলি? গানটা শুনলেই তোর স্মৃতিগুলি হুড়মুড় করে এসে আমাকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়। আজ অনেকদিন পর গানটা শুনতে বসে তোকে ভীষণ মিস করছি। ভীষণ মিস।
‘তুই কি জানিস না
তোর জন্য কান্না,
ভোরের ঘাসের ঠোঁটে
শিশির হয়ে জোটে…………….’
লিখেছেন-মোঃ সাখাওয়াত হোসেন
দামপাড়া, চট্টগ্রাম