সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » তুমি তার জানো না কিছুই
তুমি তার জানো না কিছুই
সারাদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি। রাতে ভাল ঘুম হবার কথা থাকলেও ৩ টায় ঘুম ভেঙে গেল। কেন যে প্রীতির মুখখানি হৃদয়ের পর্দায় বারবার ভেসে ওঠে ! চার বছরের ঢাকা বিশ্বদ্যালয় জীবনে যার সাথে আমার নিত্য দেখা হওয়া। অথচ আমরা কেউ কাউকে চিনিনা, জানিনা এমনকি কোনদিন কথাও হয়নি। এই চার বছরে তোমার ক্লাসের সিডিউল পরিবর্তন হয়েছে বহুবার। আমিও কতদিন দাঁড়িয়ে থাকার পর তোমার সিডিউল মিলিয়েছি তার হিসেব নেই। কত স্বপ্ন ছিল যাকে ভালবাসবো তার হাতে হাত রেখে হেঁটে যাব বহুদূর, ভেজাবো নগ্ন পা ভোরের শিশিরে, ¯œান করবো পূর্নিমার চাঁদের আলোয়, ভেসে যাব জ্যোৎনার বেলাভূমিতে। নীল চুড়ি, নীল টিপ, নীল শাড়িতে তোমায় কেমন লাগবে তা ভেবে প্রায়ই অস্থির হয়ে যাই। ক্যাম্পাসের চুড়ি কিংবা টিপের দোকানগুলোর প্রতি দুর্বল হই তোমায় কিনে দেবার সুযোগ হয়নি বলে। কল্পিত পৃথিবীতে তাকিয়ে দেখি, আমরা দুজন পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছি একুশের প্রভাতফেরীতে, পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে, ফাল্গুনে চারুকলার বকুলতলায়।তুমি এসবের জানো না কিছুই। সেই প্রথম থেকে আজও আমি রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি তোমায় একটিবার দেখার জন্য। সৃষ্টিকর্তা তোমায় এত সুন্দর করে না সৃষ্টি করলেও পারতেন। তুমি যখন আমায় অতিক্রম করে যাও, তোমার চোখে চোখ রাখার সাহস হয়না আমার। শুধু তোমার নূপুরের শব্দ হৃদয়ে গেঁথে রেখেছি। অবসরে, একাকীত্বে এটিই আমার সঙ্গী হয়ে থাকে। বিগত বছরগুলোর মত এবারও ১৪ই ফেব্রুয়ারী হয়তো একইভাবে আসবে আমার জীবনে। এবারও আমার না বলা কথাগুলো থেকে যাবে তোমার অগোচরে। তুমি তার জানবে না কিছুই। এই ইট, কাঠ, পাথরের ঢাকায় টিকে থাকার সংগ্রামে, টিউশনি কিংবা সুদীর্ঘ যানজটে, যখন তোমার জন্য তিল তিল করে বড় করা ভালবাসার গাছটি প্রাণহীন হয়ে মরে যেতে চায়,তখন আমি একটু মততা, একটু প্রেম, একটু আবেগ দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখি। এ পর্যন্ত কতবার যে সে মরতে বসেছিল! শুধু তোমার হৃদয় অলঙ্করিত করবার জন্যই আমার এই সংগ্রাম। কিন্তু আমার ভয় হয় প্রীতি, শেষ পর্যন্ত যদি পরাজিত হই? এতদিন ধরে লালিত ভালবাসা যদি তোমার অজান্তেই মরে যায়? দরকার নেই আমার বিবিএ এমবিএর সার্টিফিকেট, দরকার নেই এই ভালবাসাহীন শহরে আমার কোন চাকরির,যেখানে আমি তোমায় সময় দিতে পারবোনা। ৯টা-৫টা অফিসের পর ২ ঘন্টার যানজটে যেখানে উপেক্ষা করতে হবে তোমার ভালবাসা, প্রেম , অনুভূতি আর আবেগগুলোকে। তোমার জন্য আমি কৃষক হতে রাজি আছি, যেখানে শান্ত নদীর জল আর পাখিরা খেলা করবে র্নিভয়ে। দুমুঠো ভাত আর কাঁচা লঙ্কায়, তোমার চোখে চোখ রেখে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কেটে যাবে বাকিটা জীবন। পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থলের তাতে কী বা আসে যায়? হয়তো আমি ভালবাসার জন্য হাতের মুঠোয় প্রাণ নিতে পারবো না, কিন্তু তোমার জন্য এনে দিতে পারবো গোধূলির রাঙা রং। দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বাঁধতে পারবো না লাল কাপড়, কিন্তু এনে দেবো শিশিরের স্নিগ্ধতা। সমস্ত বিশ্ব সংসার তন্নতন্ন করে হয়তো খুঁজে আনতে পারবো না ১০৮ টি নীলপদ্ম, কিন্তু ১০৮ টি ঘাসফুল এনে তোমার খোঁপায় পরিয়ে দিতে পারবো।
হয়তো বাস্তব পৃথিবীতে কল্পনা অর্থহীন।তবুও তোমাকেই বলছি প্রীতি, তুমি তার জানো না কিছুই, না জানিলে, আমার সকল কবিতা,আমার পথচলা, আমার ভালবাসা শুধু তোমাকেই লক্ষ্য করে। অসম্ভব প্রীতিকর কিছু ভাললাগা দিয়ে ভরে থাক তোমার বাকিটা জীবন। হ্যাপি ভ্যালেনটাইন ২০১৩.
লিখেছেন - নির্লিপ্ত নীল
বিবিএ, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়