সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » না বলা কথা
না বলা কথা
তুলির সাথে প্রথম পরিচয় হয় ফেসবুকে।প্রথমে তুলিই আমাকে
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়।তুলির প্রোফাইল পিকচারে ছিল একটা চাঁদের ছবি আর
হোমটাউন ও কারেন্টসিটি ছিল খুলনা।আর আমার ছিল সাতক্ষীরা আর প্রোফাইল
পিকচার ও অরিজিনাল।তারপর পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব ও পরে মোবাইল নম্বর আদান
প্রদান।প্রথম দিন কথা বলে বুঝেছিলাম তুলি আমার জুনিয়র HSC ফার্ষ্ট ইয়ারের
ছাত্রী।তুলি আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করত আর আমি ওকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন
করতাম।এদিকে আমাদের বাড়ীর পাশে আফসানা নামে একটি মেয়ে ছিল।মেয়েটি এতই
সুন্দরী যে কোথাও তার সাথে চোখাচোখি হলে আমার ভিতর কেমন যেন অস্বস্তি
লাগত।আমি এখনো খুবই লাজুক প্রকৃতির।মুখোমুখি দেখা হলে সে মাঝে মাঝে
ভাল-মন্দ জিঙ্গাসা করত।আমি সলজ্জ ভাবে কোন রকমে জবাব দিয়ে সেখান থেকে
দ্রুত প্রস্থান করতাম।অথচ মনে মনে তাকে ভাল লাগত,এমনকি
ভালোওবাসতাম।কিন্তু কোনদিন মুখফুটে মনের কথা বলতে পারতামনা ।তো, তুলির
সাথে সপ্তাহখানেক কথা বলে জানলাম ফেসবুকে দেয়া তার বার্থ-ডেট ছাড়া কোন
তথ্যই সঠিক না।আর বাড়ী কোথায় এটাও সে আমাকে বললনা।বেশিরভাগ সময় তুলিই ফোন
দিত।ভাবতাম দেখা করার প্রস্তাব দিই কিন্তু একটা অজানা লজ্জা আর ভয়ে
পরিকল্পনাটা নিষ্প্রভ হয়ে যায়।যাহোক, এভাবে টুকটাক কথা বলতে বলতে মাস
পেরিয়ে গেল।একদিন বিকালে বাড়ী ফেরার পথে আফসানা তাদের ছাতের উপর থেকে
জিঙ্গাসা করল ‘ভাইয়া কেমন আছেন?’ আমি সলজ্জ ভঙ্গিতে বললাম ‘ভাল আছি।’
‘কিন্তু আপনাকে দেখেতো ভাল মনে হয়না।নিশ্চয় কোনো চিন্তায় আছেন।আমাদের
বাড়ি আসেন না কেন, মাঝে মাঝে আইসেন।’আমি ‘ঠিক আছে’ বলে সেখান থেকে চলে
আসলাম।এদিকে তুলির কাছ থেকে তার আসল নাম ঠিকানা বের করতে
পারছিনা।মাসাধিককাল কথা বার্তায় বন্ধুত্ব হইছে কিন্তু নাম ঠিকানা পরিচয়
ভালভাবে না জানলে বন্ধুত্ব জমজমাট হয়না।চিন্তা করতে লাগলাম তুলির কাছ
থেকে কিভাবে আসল তথ্য বের করা যায়।পথ খুজে পেলামনা।হঠাত্ মাথায় একটা
বুদ্ধি আসল।মেয়েদের সমস্যা একমাত্র মেয়েরাই ভাল সমাধান করতে
পারবে।এক্ষেত্রে আফসানার সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে।কারন ঐ ছাড়া এমন কোন
বান্ধবী বা বোন নেই যার সাথে বিষয়টা শেয়ার করতে পারি।পরিকল্পনামাফিক সব
সঙ্কোচ ছেড়ে আফসানাকে আমাদের বাড়ীতে আসতে বললাম।সবকিছু শুনে বলল আপনার
সাথে তো মেয়েটার মোটামুটি একটা বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক হয়ে গেছে
তাইনা।আপনি একটানা তিনদিন তার সাথে কথা বলবেন না বা ও ফোন করলেও আপনি
রিসিভ করবেননা তিনদিন পর ফোন করে বলবেন আপনি প্রচন্ড অসুস্থ।সে যেন
অবশ্যই আপনাকে দেখতে আসে।আফসানার পরামর্শ মত তুলিকে ফোন করলাম।নির্দিষ্ট
সময়ে আমাদের বাড়ীর গেইটের কলিংবেল বাজল।গেইট খুললাম।কিন্তু একি!দেখি
আফসানা নিজেই এসেছে।সাদা সালোয়ার কামিজ পরা।মুখে হালকা মেকাপ।হাতে একগোছা
গোলাপফুল।অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে।আফসানাকে দেখে লজ্জা আর বিস্ময়ে নিজেকে
গুটিয়ে নিলাম।হা করে ওর দিকে চেয়ে থাকলাম।’কি ব্যাপার ভাইয়া ফোনে কি
সুন্দর করে কথা বলেন আর সামনে আসলে চুপসে যান কেন?’ ওর কথা শোনার পরও
প্রথম দেখার বিস্ময়ের ঘোর এখনো কাটতে পারিনৈ।আমি বললাম- ‘তুমি!’ ‘কেন
ভাইয়া তুলি মেয়েটা আমি হলে কোন সমস্যা আছে?’ পরে বিস্তারিত শুনলাম।আফসানা
অনেক আগে থেকেই আমাকে ভালবাসতো।কিন্তু জানাতে পারছিল না।আমার এক বন্ধু
মারফত জেনেছিল আমি ফেসবুক ইউজ করি।তারপর আফসানা একটি ফেক আইডি খুলে আমার
নাম লিখে সার্চ দিয়ে আমার নামে রিকোয়েস্ট পাঠায়।আর মোবাইলে কথা বলার সময়
সেটিংস থেকে ভয়েস মুড চেঙ্জ করে নিত।যাতে তুলি ও আফসানাকে আলাদা ভাবে
চেনা যায়।তারপর চলে গেছে একটি বছর।বর্তমানে আফসানা খাতুন ওরফে তুলির সাথে
আমার জমজমাট সম্পর্ক।কিন্তু আমার লাজুক স্বভাবের কারনে আজও মনের না বলা
ভালবাসার কথা তাকে বলতে পারিনি।
লিখেছেন-মোঃ মফিজুল ইসলাম
রুপগঙ্জ,নারায়নগঙ্জ ।