সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » যে কথা হয়নি বলা
যে কথা হয়নি বলা
নিশুতি রাত, পৃথিবী যখন সব কোলাহল থেকে মুক্ত, মানুষ যখন গভীর স্বপ্নময় ঘুমে অচেতন, তখন শুধু এই আমি জেগে । প্রতিটি রাতেই তোমার দেয়া উপহার সেই ছোট্ট চিরকুটটি পড়ি আর তোমাকে ভাবি, ভাবতে ভাবতে মাঝে মধ্যে কখন যেন আমার অজান্তেই একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে । এই দীর্ঘশ্বাসটাই বাষ্প হয়ে ভেসে মেঘ হয়ে একটা সময় বৃষ্টিতে রূপ নিয়ে চোখের জল হয়ে আমার দু’গন্ডদেশ বেয়ে পডে অবিরত ধারায় ।
সাত বছর আগের ঘটনা । ক্লাস শেষ । সবাই শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হয়ে গেছে । হঠাৎ আমার পিছন থেকে চিরচেনা সুমধুর মেয়েলি কন্ঠের ধ্বনি, ‘এই শিশির’।
অপ্রত্যাশিত এই ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হচকিত হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যাই । এমতাবস্থায় অর্পিতা আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলে, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব । অর্পিতার চিরকুটঃ
‘শিশির, আমি জানি বা আমার বিশ্বাস, তুমি আমাকে ভালোবাস । আমি এটাও জানি, লজ্জা আর ভয়ের কারণে তুমি আমাকে কিছু বলতে পাচ্ছনা । আগামীকাল ক্লাশ শেষে আমি পুরনো কৃষ্ণচ’ড়া গাছটির নিচে তোমার জন্য অপেক্ষা করব । তিনটি শর্ত প্রযোজ্যঃ
১ । প্রথম সাক্ষাতেই বলতে হবে, অর্পিতা, আমি তোমাকে ভালোবাসি ।
২ । আমাদের ভালোবাসার অনুত’তি নিয়ে তুমি আমাকে একটি চিঠি দিবে এবং
৩ । আমার হাত ধরতে হবে ।
অর্পিতা
বিঃদ্রঃ যদি না আস তাহলে বুঝব আমার ধারণায় ভুল ছিল, তুমি আমাকে কোনদিন ভালোবাসনি ।’
কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, আমি সেইদিন অর্পিতার সম্মুখে উপস্থিত হতে পারিনি । আর সেই সুবাদে অর্পিতা আমার উপর অভিমান করে , আমাকে ভুল বুঝে অনেক কষ্ট পেয়ে সেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে একবুক দুঃখ আর অপমান নিয়ে স্বদেশ ছেড়ে পাড়ি জমায় বিদেশে । আর সেই থেকে আমার কষ্টের দিন শুরু ।
অর্পিতা, কেমন আছ তুমি? খুব, খুব জানতে ইচ্ছে করে । আমি জানিনা আমার এই ক্ষুদ্র লেখাটি তোমার দৃষ্টির গোচরে আদৌ পড়বে কিনা । তারপরেও যে কারণে আমি আজ তুমিহারা, সেই সত্যটি আজ তোমাকে বলছি । তোমার ধারণা ১০০% সঠিক ছিল । আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি । সেইদিন তোমার চিরকুটটি পেয়ে সেই রাতেই আমি আমার ভালোবাসার অনুভ’তি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিরোনামে নয় পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ চিঠি লিখি । নয়টি শিরোনামঃ আ, মি, তো, মা, কে, ভা, লো, বা, সি । পরেরদিন ক্লাসে এসে আমি তোমার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না । শরীরে ও মনে লজ্জা ও ভয় মিশ্রিত একটা সুখকর অনুভ’তি সদা প্রবাহিত হচ্ছিল । ভালোবাসার অনুভ’তির সাগরে এতটাই নিমজ্জিত ছিলাম যে ক্লাস শেষে কখন সবাই বের হয়ে গেছে আমি বুঝতেও পারিনি । কেউ নেই দেখে তড়িঘড়ি করে যেইনা বেঞ্চ থেকে উঠতে ধরেছি ঠিক তখনি লোহার সাথে আটকে আমার প্যান্টের পিছনের অংশ অনেকখানি ছিঁড়ে যায় । বাসা থেকে নতুন প্যান্ট পরে কৃষ্ণচ’ড়া গাছের নিচে এসে দেখি তুমি নেই, শুধু মাটিতে একটা লিখা, ‘আমার ধারণা ভুল ছিল’ । তোমকে লিখা আমার চিঠিখানি আদৌ তোমার কাছে পৌঁছাতে পারব কিনা জানিনা । আমি এখনো স্বপ্ন দেখি, তুমি হেমন্তের রূপালী শিশির রূপী ভালোবাসা হয়ে ভালোবাসাহীন খরায় পোড়া আমার উষ্ণ হৃদয় ভ’মি ভিজিয়ে দিবে । সেই অপেক্ষাতেই থাকব….
পুনশ্চঃ অর্পিতা, তোমার প্রতি আমার সুপ্ত ভালোবাসা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তেই থাকবে । আমার ভালোবাসাময় দুই হাত তোমার কাশফুলের ন্যায় নরম, কোমল দুই হাতকে ধরার জন্য সদা প্রসারিত হয়ে থাকবে ।
লিখেছেন- হাসিবুল হক হলি
ড. কুদরত-ই-খুদা হল (পুরাতন)
হাজারীবাগ, ঢাকা।