সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » এক ব্যাগ রক্ত, ভালবাসার উপহার !
এক ব্যাগ রক্ত, ভালবাসার উপহার !
আমি একটা পাগল তা না হলে কি এখনো …………!
আমি নিজেকে কেন পাগল বলছি, কেউ কি নিজেকে পাগল বলে দাবী করে?
কিন্তু আমার ভালবাসার গল্পটা শেষ পর্যন্ত পড়লে আমি নিশ্চিত আপনিও আমাকে পাগল বলবেন।
যতটুকু মনে পড়ে সে দিন ছিল বৃহস্পতিবার। ইউনিভার্সিটি লাইফের মাত্র ১৫ দিন পার হল। আমি এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি কথাটা চিন্তা করলেই নিজের মধ্যে বড় বড় ভাব চলে আসে। ক্লাসে প্রায়ই ১২০ জন মত ছাত্র ছাত্রী উপস্থিত ছিল। ক্লাস রুমের দরজার একপাশ বন্ধ ছিল। আমি ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য ক্লাস রুম থেকে বের হচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে আমার সরাসরি ধাক্কা লাগে।
লজ্জায় আমি কি বলব তা বুঝতে পারছিলাম না।
সরি,আমি আসলে……. (আপনাকে খেয়াল করিনি) এই কথাটা বলার আগেই… !
কি! মেয়েদের সাথে ধাক্কা খেতে মজা লাগে তাইনা ?
কথাটা শুনে আমার মাথায় বাজ পড়ল। আবারো বললাম সরি!
ওয়াশ রুম থেকে ফিরে দেখি শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন! অনুমতি নিয়ে ক্লাসে ডুকে দেখি আমার ব্যাগ নেই।
আমার সিটে আরেকজন বসা!
স্যারের সহযোগিতায় আমার ব্যাগের সন্ধান পেলাম। আমার ব্যাগটি সেই মেয়েটির পাশেই!
কি আর করা, তার পাশের সিটেই আমাকে বসতে হল।
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না, কিভাবে বা কে আমার ব্যাগটা সোজা এই ডাইনীর পাশে রাখল?
পাশের সিট থেকে একটা কোমল কন্ঠস্বর ভেসে আসল,
হাই আমি শয়লা, আপনি?
আমি বললাম, এইতো ভাল আছি।
আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি আপনার নাম কি আপনি বলছেন আমি ভাল আছি!
হা হা হা …………
কেমন বেহায় মেয়ে! কিছুক্ষন আগে অপমানিত করে এখন আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়!
যাহোক আপনার নাম বলা লাগবে না। আমি আজ প্রথম ক্লাসে আসলাম। এর আগে যে ক্লাসগুলো হয়েছে সে গুলো কি করেছেন?
হ্যা।
সেদিন রাতে আমার ঘুম হয়নি। এত সুন্দর একটি মেয়ে, কি নিষ্পাপ তার চেহারা !
তার দিকে তাকাইলেই চোখ জোড় আর ফিরতেই চায়না।
শুধু একটা বাক্যই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, মেয়েদের সাথে ধাক্কা খেতে খুব মজা পাও তাই না ? ? ?
পরের দিন শনিবার।
আমার সহপাঠী ধ্র”বকে বললাম আজ ক্লাস শেষ হওয়ার সময় তুই শায়লাকে পেছন থেকে একটা ধাক্কা দিবি যাতে সে আমার সাথে ধাক্কা খায়। ক্লাস শেষে আমি শায়লাকে ক্রস করে যাওয়ার পরপরই আমাদের প্ল্যান মোতাবেক শায়লা আমার সাথে ধাক্কা খায়।
কি! ছেলেদের সাথে ধাক্কা খেতে খুব মজা লাগে তাইনা???
এই মানে ……….সরি! আমাকে পেছন থেকে কেউ হয়তো ধাক্কা মেরেছে।
এইভাবেই আমাদের বন্ধুত্বের শুরু শায়লা এত সুন্দুর ছিল যে, ইউনিভার্সিটির ক্লাসমেটতো বটেই ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাইরাও জোর করেই কথা বলত। প্রেমের প্রস্তাব দিত।
প্রথম দিনের সেই ডাইনীটা কখন যে আমার মনের রাণী হয়ে উঠেছিল আমি বুঝতেই পারিনি। শায়লার সৌন্দয্যের চেয়ে তার চঞ্চলতাটাই আমাকে বেশি আকর্ষণ করত। তার ভালবাসার স্পর্শে আমার জীবনের রংটা আরো রঙ্গিন হতে লাগল। জীবনের সোনালী দিনগুলো আরো সুন্দর হতে লাগল।
একটানা তিন বছর প্রেম।
প্রায় ১৫ দিন পর শায়লা ক্যাম্পাসে এসেই বলে, নীল, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে…!
ওর চেহেরার প্রতিচ্ছবি দেখে মনে হয়না সে মিথ্যে বলছে।আমি জানি তোমার পুরো পৃথিবী জুড়ে শুধুই আমি। কিন্তু বাবা অসুস্থ বাসায় একটা ছোট বোন, আর মা। তাদের একমাত্র অবলম্বন শুধুই আমি।
আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না।
এরপরও ভালবাসার সবটুকু শক্তি বুকে নিয়ে শায়লার বাবার সামনে গিয়ে আমার সব কিছু খুলে বললাম।
আর উনি? বাংলা সিনেমার স্টাইলে কিছু ডাইলক শুনিয়ে দিলেন,
তোমার কোন পৈত্রিক সম্পদ নেই, গাড়ী বাড়ী নেই, এখনো কোন চাকরি করো না।
অংকেল আমাকে একটা বছর সুযোগ দিন, আমি নিজেকে …
নীলের কথা শেষ হওয়ার আগেই শায়লার বাবা বললেন, শায়লার হবু স্বামীর গাড়ী, বাড়ী সব আছে এরপরও কি … তুমি শায়লার সুখের পথে কাঁটা হয়ে দাড়াবে?
এতো দিনের রঙ্গিন পৃথিবীটা আজ কেন এত ধূসর মনে হচ্ছে? সূর্যের এতো আলো থাকতেও কেন আজ দিনটাকে মেঘলা মনে হচ্ছে?
১২ বছর পর …..
আচ্ছা, শায়লা তোমার কি মনে পড়ে?
শপিং সেন্টারে নীল রংয়ের একটি ব্যাগ তোমার খুব পছন্দ হয়েছিল। তখন পকেটে ছিল না বলে কিনে দিতে পারিনি। কিন্তু চার ঘন্টার মধ্যেই সেই ব্যাগ তোমার বাসার ঠিকানায় তোমার বান্ধবীর নামে লিখে পার্সেল করেছিলাম। যা পেয়ে তুমি খুবি খুশি হয়েছিলে।
কিন্তু এই টাকা কিভাবে পেলাম? সেই গোপন রহস্যটা তুমি জানতে না।
ব্ল্যাড ব্যাংকে গিয়ে এক ব্যাগ রক্ত বিক্রি করেছিলাম সেই টাকা দিয়ে সে দিন তোমার পছন্দের ব্যাগটি তোমাকে উপহার দিয়েছিলাম।
হয়তো তুমি আমার খবর নাওনি। আর নিলেইবা লাভ কি?
আর আমি …..?
শুনেছি তোমার একটা ছেলে আছে। যার নাম রেখেছে আমার নামেই!
এখন প্রতিদিন আমাকে একটা প্রশ্ন শুনতেই হয়, তোমার নীল বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে।
বিয়ে কবে করবে? বিয়ে করছো না কেন?
তখন সবাইকেই একটা শান্তনা উত্তর দিয়ে বলি, করব। একটা ভাল মেয়ে পেলেই বিয়ে করব।
তোমার সাথে কখনো দেখা হলে হয়তো তুমি প্রশ্ন করবে,
তোর স্ত্রী আর ছেলে মেয়ে কেমন আছে?
তখন হয়তো বলব যে, আমার একডজন ছেলে মেয়ে আছে!
তুমি হয়তো অবাক হয়ে বলবে একডজন !
হা হা হা
কেন শায়লা তুই, কি ভুলে গেছিস ! তুই না বলতি, আমি খুবি সেক্সি ছেলে!
আমি বলতাম শায়লা বেশি চঞ্চল আর ও বলত আমি বেশি চঞ্চল।
তুমি এখন যে বাসাতে থাক সেই বাসার গেইটের ঠিক দক্ষিণ দিকে রাস্তার এক পাশে প্রতিদিন একটি নীল রংয়ের গাড়ী দাড়িয়ে থাকে। তোমার কি কখনোই প্রশ্ন জাগে না ঐ নীল গাড়ীটির মালিক কে? কেনই বা গাড়িটি রোজ সকাল ৮.৩০ টায় এখানে দাড়িয়ে থাকে?
তুমি যখন সকালে আকাশকে স্কুলে দিয়ে আসার জন্য বের হও তখন আমি গাড়ির আয়নার ভেতর দিয়ে তোমাকে এক পলক দেখার অপেক্ষায় থাকি….. !
তুমি যখন আমার গাড়ির পাশ দিয়ে যাও তখন ইচ্ছে করে আয়নার বাইরে থেকে তোমাকে একবার দেখি।
আর জিজ্ঞেস করি তুমি কেমন আছ?
কিন্তু পরিনা।
এখনো তোমাকে পাগলের মত ভালবাসি।
তাই তোমার স্থানটা কাউকে আজও দিতে পারিনি।
তোমাকে দূর থেকে দেখার মধ্যেও একটা সুখ আছি এমন সুখ কয়জনের ভাগ্যে থাকে বলো?
শায়লা আমার এই গল্পটা যখন প্রকাশিত হবে তখন তুমিও নিশ্চয়ই আমাকে পাগল বলবে।
বিয়ের পরও এমনভাবে কেউ কি তার প্রেমিকাকে ভালবাসতে পারে… !
হয়তো তোমার স্বামী আমার গাড়িটা আর তোমাদের গেইটের সামনে দাড়ানোর অনুমতি দিবে না। তখন তোমাকে প্রতিদিন আর দেখার সুযোগ থাকবে না। তাতেও কোন অসুবিধা নেই।
তখন আমি আমার হৃদয়ের এই চোখ দিয়ে তোমাকে আজীবন দেখবো।
ভালবাসা হারানোর চেয়ে ভালবাসা দিয়ে যাওয়ার আনন্দটাও যে কোন অংশে কম নয়। ।
জীবনের ৩৫ বছর কেটে গেল……….
তোমার সব স্মৃতি আকড়ে ধরে
কখনো রকিং চেয়ারে ধুলতে ধুলতে,
কখনো আকাশের দিকে তাকিয়ে
কখনো সমুদ্রের বিশালতার দিকে তাকিয়ে,
কখনো রাতের তারার দিকে তাকিয়ে,
আমার সংক্ষিপ্ত জীবনের বাকী সময়টুকুও একদিন শেষ হয়ে যাবে …..
আমি ভাল আছি। তুমি ভাল থেকো…..
লিখেছেন- আব্দুল হক সিয়াম
ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা