সোমবার ● ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » অনলাইন ভালোবাসা » ভালোবাসার অনুভুতি
ভালোবাসার অনুভুতি
প্রিয়
কেমন আছো? ডিজিটাল ভার্সনের এই যুগে অনেক দিন ধরে কাউকে চিঠি লিখা হয় না। যে কারনেই হোক, যে উপলক্ষ্যেই হোক আজ তোমাকে চিঠি লিখতে বসেছি। আচ্ছা, তোমার কি মনে আছে কবে তোমায় প্রথম চিঠি লিখেছিলাম? প্লিজ, একটু মনে করার চেষ্টা করো। কি পারলে? আমার কিন্তু স্পষ্ট মনে আছে ১৯৯৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। সেদিন তুমি সাদা জামা গায়ে দিয়ে স্কুলে এসেছিলে, পায়ে জুতো ছিলো না, হাতে ইকনো ডিএক্স এর একটা সুন্দর কলম ছিলো (কলমটি কালো, হলুদ, নীল রংয়ে কলাম টানা ছিলো)। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার ঐদিন তোমার ‘মুরগীর ঢোস’ খেলা দেখতে গিয়ে প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম। আর সে দিন-ই তোমাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলাম। সেই কবিতার ভুল বানান গুলো নিয়ে তুমি বছরের পর বছর আমাকে জ্বালাতন করেছিলে। নিশ্চই এখন তোমার ঐ কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ছে আর দাঁত কেলিয়ে অট্রহাসি দিচ্ছো।
এবার বলো, সর্বশেষ কবে তোমায় লিখেছিলাম? এটা নিশ্চই মনে রেখেছ। এমন সাত পৃষ্ঠা লম্বা চিঠির তারিখ কি কেউ ভুলতে পারে? আমার ভিতরের সকল আবেগ, ভালোবাসা আর বাস্তবতার এক অপূর্ব সংমিশ্রন ঘটেছিলো ৮ই মার্চ (২০০৩) এর সেই চিঠিতে। প্রায় এক যুগ তোমাকে অনবরত চিঠি দিয়েছিলাম। কখনো দোকানদার পিকলুকে দিয়ে, কখনো তোমার ছোট ভাইকে দিয়ে, কখনো কাজের বুয়াকে দিয়ে, কখনো পোস্টমাস্টারকে দিয়ে, কখনো নিজে। আমি কোন দিনও চিঠির সংখ্যা হিসেব করিনি। তবে তুমি বলেছিলে ৯০৭টি। সুতরাং ৮ই মার্চের চিঠি ছিলো আমার ৯০৮নম্বর চিঠি যার জবাব তুমি দিয়ে আমাকে ধন্য করেছো অর্থাৎ আমাকে বাস্তবতা শিখিয়েছো। নতুন জীবন উপহার দিয়েছো।
আমি জানি না ৮ই মার্চ আমার জন্য কি বয়ে নিয়ে আসবে? ১০মার্চ তোমার চিঠি পেয়ে আমি আরো একটি চিঠি লিখে ছিলাম, সেখানে লিখা ছিলো ‘আমি তোমাকে ভুলে যাবো’। ভালই হয়েছে ঐ চিঠিটি তোমাকে না পোস্ট করে। যদি পোস্ট করতাম তবে ঐ চিঠিটি হতো, তোমার কাছে লিখা আমার একমাত্র মিথ্যে চিঠি। অর্থাৎ ১০মার্চ ২০০৩ইং সর্বশেষ চিঠিটি লিখেছিলাম।
প্রায় দশ বছর পেরিয়ে গেলো তোমাকে লিখি না। লিখি না ঠিক তা নয়, মোবাইলে এস.এম.এস লিখি কিন্তু তোমাকে পাঠানো হয় না। তুমি আবার ভেবে বসো না যে তোমার নাম্বার আমার কাছে নেই। প্রায় দশটি সিম তুমি পরিবর্তন করেছো যার প্রত্যেকটি নম্বরই আমার মুখস্ত। কি বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? না বিশ্বাস হলে আমাকে ফোন করে জেনে নিও। তোমার পরমআত্মীয়ের কাছে আমার নম্বরটা সেভ করা আছে। বেনামে সেভ করে দিয়েছি। বেনাম টা কি জানো? ৯০৮ নং চিঠির শিরোনাম ‘ইরষষবঃ-ফড়ীঁ.’ খুব মজা পেলাম নামটা সেভ করে কারণ তখন নাম দেখে উনি জিজ্ঞেসা করেছিলেন ‘ভাই আপনার বাড়ি কোনদেশে’ আমি ঔড়শব করে বলে ছিলাম চাঁদে (আফ্রিকা)। উনি সত্যিই আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন। যাই হোক, তখন আমি আস্বস্ত হলাম যে, তুমি খুব ভালো একটা বর পেয়েছো।
তোমার সাথে আমার পরিচয়ের আজ ৭০০০দিন। অর্থাৎ এক লক্ষ আষট্টি হাজার ঘন্টা যা ১ কোটি ৮০ হাজার মিনিট। এর মধ্যে খুব কম মিনিট-ই আছে যে মিনিট গুলোতে আমি তোমাকে ভুলে থাকতে পেরেছি।
আচ্ছা , তোমার কি কখনো মনে হয়েছিলো আমার ভালোবাসায় কোনরকম খাদ্ আছে? এমন একচেটিয়া ভালোবাসা তুমি কি কখনো টিভি সিরিয়ালে, উপন্যাসে, নাটকে অথবা ব্লগে পেয়েছো? এমন একপেশে, ভালোবাসার কোন বাস্তব উদাহরণ আমার জানা নেই। যতদিন সচল থাকবো তোমাকে ভালোবেসে যাবো। তোমাকে পাবার আশায় প্রহর গুনবো, হয়তো এস.এম.এস লিখবো, ফেইস বুকে স্ট্যাটাস দিবো, ব্লগে ছোট্ট গল্প লিখবো কিন্তু তুমি জানবে না হয়তো সেগুলো একত্রিত হয়ে একদিন ‘এপিক’ সাহিত্যে পরিনত হবে। তখন হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে আমার একচেটিয়া ভালোবাসা ‘মহাকাব্য’ হিসেবে হাজার বছর টিকে থাকবে। সেই সাথে টিকে থাকবে আমার ভালোবাসার নাম।
পুনশ্চ, প্রিয় পাঠক অত্যন্ত ধৈর্য্য ধরে আমার লেখাটি পড়া জন্য ধন্যবাদ। দোয়া করবেন আমি যেন আমার ভালোবাসার মানুষটিকে ধরে রাখতে পারি। উপযুর্ক্ত ভালোবাসার কাহিনীটি ছিলো কাল্পনিক এবং একটি গল্প বানানোর প্রয়াস মাত্র।
এস.ডি.রনি
প্রভাষক, অর্থনীতি বিভাগ
মদন মোহন কলেজ,সিলেট।