শুক্রবার ● ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বন্ধ করা হলো হ্যাকারদের সার্ভার!
বন্ধ করা হলো হ্যাকারদের সার্ভার!
সার্ভার বন্ধের মাধ্যমে বামিটাল নামের একটি সাইবার অপরাধ চক্রকে আটকে দিল সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট এবং অ্যান্টিভাইরাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমেনটেক। চক্রটি ব্যবহারকারীদের বিশ্বের লাখ লাখ পিসিতে ভাইরাস ছড়াচ্ছিল। এ ভাইরাসের মাধ্যমে হ্যাকাররা ওই পিসির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যবহারকারীকে তার কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটে না নিয়ে অন্য একটি ওয়েবসাইটে নিয়ে যেত। ওইসব ওয়েবসাইটে বেশি বেশি ক্লিক পড়ার ফলে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে অসদুপায়ে অর্থ নিত এ হ্যাকার চক্র। খবর রয়টার্সের।
হ্যাকারদের ওয়েবসাইটগুলো যে সার্ভারের অধীনে চলত, সেটি বন্ধ করে দিয়েছে মাইক্রোসফট ও সিমেনটেক। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া এলাকার আদালতের কাছ থেকে বিভিন্ন ডাটা সেন্টারে অভিযান চালানোর অনুমতি নেয় এ দুই প্রতিষ্ঠান। সার্ভার চালানোর জন্য ডাটা সেন্টার ভাড়া দেয়া হয়। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল পুলিশও এ অভিযানে কাজ করেছে। উইহকিন, নিউজার্সি, মানাসাস, ভার্জিনিয়ার বিভিন্ন ডাটা সেন্টারে তারা অভিযান চালিয়ে সফলতার সঙ্গে এসব সার্ভার বন্ধ করতে সমর্থ হয়।
মাইক্রোসফটের ডিজিটাল ক্রাইম ইউনিটের সহকারী জেনারেল কাউন্সেল রিচার্ড বসকোভিচ এ বিষয়ে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা সফলতার সঙ্গে একটি সাইবার অপরাধ চক্র নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছি।’ বামিটাল বটনেট নামের চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
বন্ধ করে দেয়া সার্ভারগুলোর মাধ্যমে সর্বনিম্ন ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ পর্যন্ত পিসি ইন্টারনেট ব্যবহার করত। এটি বন্ধ করে দেয়ার ফলে ওই সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত পিসি ব্যবহারকারীরা সাময়িকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না।
মাইক্রোসফট ও সিমেনটেকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনলাইন বিজ্ঞাপনের বাজার থেকে অবৈধভাবে অর্থ আয় করত বামিটাল বটনেটের সঙ্গে জড়িতরা। পিসিতে ভাইরাস প্রবেশ করানোর মাধ্যমে তারা ব্যবহারকারীদের পিসির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারত। ফলে ব্যবহারকারীদের হ্যাকাররা নিজেদের তৈরি ওয়েবসাইটে নিয়ে যেত। এর মাধ্যমে হ্যাকারদের ওয়েবসাইটে বেশি ক্লিক পড়ত।
মাইক্রোসফট আরো জানায়, অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়ার একটি পদ্ধতি রয়েছে। যেসব ওয়েবসাইটে বেশি ক্লিক পড়ে, সেগুলোয় বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। অবৈধভাবে ওয়েবসাইটে বেশি ক্লিক সংগ্রহ করানোর মাধ্যমে হ্যাকাররা তাদের ওয়েবসাইটে বেশি বিজ্ঞাপন পেত। ফলে তারা অবৈধ উপায়ে অর্থও আয় করত। এছাড়া ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বড় সাইবার হামলার জন্যও এগুলো কাজে লাগাত এসব হ্যাকার।
যেসব পিসির ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলোর ব্যবহারকারীরা এখন সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না। ইন্টারনেটের কোনো ওয়েবসাইটে ক্লিক করলে তাদের মাইক্রোসফট ও সিমেনটেকের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা দেখানো হবে। ওই নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যে মাইক্রোসফট ও সিমেনটেকের কাছ থেকে অ্যান্টিভাইরাস নিয়ে পিসিকে ভাইরাসমুক্ত করতে পারবেন। এরপর তারা আবার ইন্টারনেটে প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বসকোভিচ।
বসকোভিচের তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্ত পিসির ব্যবহারকারীরা এখন তাদের ওয়েবসাইটে একটি নির্দেশনা দেখবেন। সেখানে লেখা থাকবে, আপনার পিসি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় আপনি এ ওয়েবসাইটে চলে এসেছেন। পিসিটি ভাইরাসমুক্ত করার আগ পর্যন্ত আপনাকে এ নির্দেশনা দেখানো হবে।
২০১০ সালের পর এ পর্যন্ত ছয়বার এভাবে আদালতের কাছ থেকে আদেশ নিয়ে মাইক্রোসফট বিভিন্ন সার্ভার বন্ধ করল। এর আগেরগুলো সফল হলেও সেই সময় ব্যবহারকারীরা কোনো নির্দেশনা পাননি। এবারই সরাসরি তারা কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন।
ডিজিটাল অপরাধের বিষয়গুলো দেখাশোনার জন্য মাইক্রোসফটের সদর দফতরে ডিজিটাল ক্রাইম ইউনিট নামে একটি বিভাগ রয়েছে। এখানে ১১ জন অ্যাটর্নি, তদন্ত কর্মকর্তা ও অন্যান্য ব্যক্তি রয়েছেন। তারা স্থানীয় আইনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যৌথভাবে ডিজিটাল অপরাধ দমনে কাজ করে থাকেন।
সম্প্রতি এ অভিযান চালানো হলেও প্রায় এক বছর আগে মাইক্রোসফটকে এ বিষয়ে সিমেনটেক অবহিত করে। এরপর গত সপ্তাহে তারা আদালতের নির্দেশনা পান। নির্দেশনা পাওয়ার পরই অভিযান চালানো হয়।
মাইক্রোসফট ও সিমেনটেকের হিসাব অনুযায়ী, বামিটাল বটনেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অবৈধভাবে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ ডলার আয় করত। ক্রমেই তাদের অপরাধের মাত্রা বাড়ছিল। এ চক্রের সঙ্গে জড়িতরা যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, রোমানিয়া ও যুক্তরাজ্য থেকে কাজ করে। তারা নিজেরা ওয়েবসাইট বানিয়ে বিভিন্ন ডাটা সেন্টার কোম্পানির কাছ থেকে সার্ভার ভাড়া নিয়ে কাজ করত।
প্রতিষ্ঠান দুটি আরো জানায়, ব্যবহারকারীরা গুগল, ইয়াহু ও মাইক্রোসফটের সাইটে ক্লিক করলেই হ্যাকারদের তৈরি করা ওয়েবসাইটে চলে যেত। এ তিনটি ওয়েবসাইটই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। - এসবিবি