বৃহস্পতিবার ● ৩১ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি শিল্প ও বানিজ্য » অনলাইন ভিডিও বিজ্ঞাপনের দিকে ঝুঁকছেন বিপণনকারীরা
অনলাইন ভিডিও বিজ্ঞাপনের দিকে ঝুঁকছেন বিপণনকারীরা
অনলাইন ভিডিও বিজ্ঞাপনের দিকে ঝুঁকছেন বিপণনকারী এবং ওয়েব প্রকাশকরা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোক্তাদের মধ্যে গ্যাজেট ব্যবহারের হার বাড়ছে। পরিবর্তন আসছে বিনোদন উপভোগের মানসিকতায়। এতে ৭ হাজার কোটি ডলারের বিজ্ঞাপন বাজারে ধীরে ধীরে জায়গা দখল করছে অনলাইন বিজ্ঞাপন।
বিশ্বব্যাপী বাড়ছে ট্যাবলেটের পাশাপাশি ইন্টারনেটযুক্ত টিভি এবং ডিভিডি প্লেয়ারে অনলাইন ভিডিও দেখার হার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও বুঁদ করেছে ভোক্তাদের। বিপণনকারী এবং ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য এ ভিডিও দেখার প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা।
এরই মধ্যে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের জন্য বরাদ্দ মোটা অঙ্কের অর্থ ইন্টারনেট খাতে টেনে আনতে পেরেছে ইউটিউব, ইয়াহু, এওএল এবং হুলুর মতো সাইটগুলো। অবশ্য বিশ্লেষকদের মতে, টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের পর্যায়ে যেতে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে ইন্টারনেট ভিডিও অ্যাডকে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ই-মার্কেটার জানায়, অনলাইন বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ভিডিওর জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। গত বছর এ ধরনের বিজ্ঞাপনে খরচ বাড়ে আগের বছরের তুলনায় ৪৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে ভিডিও বিজ্ঞাপন ছাড়িয়ে গেছে সার্চ এবং ডিসপ্লে অ্যাডকে।
গুগল অবশ্য কখনই ইউটিউবের আয় প্রকাশ করে না। তবে গুগলের প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা নিকেশ অরোরা বলেন, ইউটিউবে শীর্ষ ১০০ বিজ্ঞাপনদাতার খরচ ২০১২ সালে বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি।
বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর এসেছে ফেসবুক ভিডিও বিজ্ঞাপন সেবা চালু করতে যাচ্ছে। কারণ সাইটটিতে এ ধরনের বিজ্ঞাপনের বেশ চাহিদা আছে। এদিকে আরো বেশি অনলাইন ভিডিও চালুর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে ইয়াহু। কোম্পানিটির অর্থায়ন খাতের সাবেক প্রধান ও ভিডিও বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডাপ ডট টিভির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা টিম মোর্স বলেন, ভিডিও বিজ্ঞাপন
খাতে ভালো একটি অবস্থান নেয়ার সুযোগ রয়েছে ইয়াহুর হাতে, কোম্পানিটি তা হাতছাড়া করতে চায় না।
মোর্স জানান, টিভি বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকায় বিজ্ঞাপনদাতাদের মধ্যে ভিডিও অ্যাডের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, অফলাইনের জন্য বরাদ্দ চিন্তাধারা এখানেও খাটাতে পারেন তারা। আর তাতে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছতে নতুন কোনো মাধ্যম খোঁজার ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে তাদের (বিজ্ঞাপনদাতা)।
গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি শেভরোলেট কয়েক বছর ধরেই অনলাইন ভিডিও বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে। তবে এ খাতে তারা বড় ধরনের কার্যক্রম এবং বিনিয়োগ শুরু করে ২০১২ সালে এসে। জেনারেল মোটরসের ডিজিটাল কনজিউমার এনগেজমেন্ট শাখার ব্যবস্থাপক ক্যারোলিন প্রোবস্ট আয়ার বলেন, গত বছরটা ছিল নতুন শুরুর মতো। এ সময় মৌলিক ভিডিও বিজ্ঞাপন বানানোর পাশাপাশি প্রচলিত টেলিভিশন কিংবা ইউটিউবের বদলে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি খুঁজতে শুরু করে শেভরোলেট।
আয়ার জানান, করভেট স্ট্রিংরে গাড়িটির বিজ্ঞাপন সেলফোন ব্যবহারকারী যতবার দেখেছেন তার সিকি ভাগও দেখেননি পিসি ব্যবহারকারীরা।
ওয়েব প্রকাশকদের জন্য ভিডিও অ্যাড দারুণ একটি ব্যবসা। কয়েক হাজারবার দেখার পর প্রচলিত ব্যানার অ্যাড থেকে মাত্র কয়েক ডলার আয় হয় তাদের। ই-মার্কেটারের ডেভিড হ্যালারম্যান জানান, ভিডিও বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে প্রতি হাজারবার দেখার জন্য ২০ ডলার করে পায় ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।
আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটসের বিশ্লেষক মার্ক মাহানি বলেন, এ পর্যন্ত ইন্টারনেট বিজ্ঞাপনগুলোর বেশির ভাগ আসত পত্রিকা, সাময়িকী এবং ইয়েলো পেজের মতো মুদ্রিত মাধ্যমগুলো থেকে। কিন্তু এখন টিভি বিজ্ঞাপন বরাদ্দের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে অনলাইন ভিডিও বিজ্ঞাপন খাতে।
স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের বড় স্ক্রিনের কারণে তাতে ভিডিও দেখার হারও বেড়ে গেছে। এমনকি বাসে চলতে চলতে কিংবা ঘুরে বেড়ানো সময়ও অনেকে এ যন্ত্রগুলোয় ভিডিও দেখেন। সেসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোয় ভিডিও বিনিময়ের সুযোগ থাকায় সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত দেখছেন বিজ্ঞাপনদাতারা।
ইউটিউবের শিল্প উন্নয়ন বিভাগের প্রধান সুজি রেইডার জানান, বিপণনকারী এখন নির্দিষ্ট দর্শকদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন তৈরি করছে। আর তাতে ওয়েব ব্রাউজ করতে থাকা ব্যবহারকারীরা বিজ্ঞাপন দেখতে আকৃষ্ট হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যখন দেখতে না চাইলে বিজ্ঞাপন দেখা থেকে বিরত থাকতে পারি। ইচ্ছা করলে ওয়েবে বিজ্ঞাপন এড়িয়ে যেতে পারি, এমনকি টেলিভিশনেও।’
বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে ওয়েবসাইটকে আরো আকর্ষণীয় করতে শত শত বিশেষ চ্যানেল চালু করেছে ইউটিউব। যেগুলো পেশাদার নির্মাতাদের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। এর পাশাপাশি অপেশাদার ভিডিও প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে। তাতে চালু করা হয়েছে এমন ভিডিও বিজ্ঞাপন, যা ব্যবহারকারী চাইলে পাঁচ সেকেন্ডের মাথায় বন্ধ করে দিতে পারেন। কিন্তু পুরো বিজ্ঞাপন দেখা হলেই বিজ্ঞাপনদাতার কাছ থেকে অর্থ পাবে ইউটিউব।
ওয়েব ভিডিও বিজ্ঞাপন বাড়লেও ই-মার্কেটার জানায়, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে এ বাজারের আকার ছিল ২৯৩ কোটি ডলার। সার্বিক অনলাইন বিজ্ঞাপন বাজারের যা মাত্র ১০ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১১ সালেই টিভি বিজ্ঞাপনে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে খরচ হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।