মঙ্গলবার ● ২৯ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » গুগলের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের মামলা
গুগলের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের মামলা
আইফোন ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন গোপনে ট্র্যাকিং করার অভিযোগ গুগলের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একদল ব্রিটিশ নাগরিক। লন্ডনভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান ওলসোয়াং জানায়, প্রাথমিকভাবে ১০ জন এ মামলা দায়ের করলেও আরো অনেকে তাতে বাদী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। খবর গার্ডিয়ানের।
যুক্তরাজ্যে এক কোটিরও বেশি আইফোন গ্রাহক রয়েছেন। মামলায় বাদীপক্ষ জানান, শুধু আইফোন নয়; আইপ্যাড, ইন্টারনেট ব্রাউজার সাফারিসহ সব ধরনের অ্যাপল পণ্যে গোপনে নজরদারি চালায় গুগল। আর সেটা করতে গিয়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিশ্চিত করা অ্যাপলের নিরাপত্তা পদ্ধতিকে পাশ কাটিয়ে গেছে বিশ্বের শীর্ষ ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্ঠানটি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ড্যান টেনচ বলেন, ‘এবারই প্রথম ব্যক্তি গোপনীয়তা নিয়ে ব্রিটিশদের রোষের মুখে পড়েছে গুগল। প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে ব্যক্তি গোপনীয়তা সেটিংসকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। একটা বিষয় সত্য যে, ‘আমাদের বর্তমান জীবনের সঙ্গে গুগল অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত আর তাই এর নেতিবাচক কার্যক্রম দুশ্চিন্তার জন্ম দেয় বৈকি।’
এরই মধ্যে গুগলের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নির্বাহীদের উদ্দেশ্যে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন দুই বাদী। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ব্যক্তি গোপনীয়তার সমর্থক ও ইনডেক্স অন সেন্সরশিপের সাবেক সম্পাদক জুডিথ ভিডাল-হাল। আরো ১০ জন ব্যক্তি আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, গুগলের বিরুদ্ধে গণমামলা করা হতে পারে।
কয়েক মাস আগেই ব্যক্তি গোপনীয়তা ভঙ্গের দায়ে গুগলকে ২ কোটি ২৫ লাখ ডলার জরিমানা করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
গুগল অবশ্য অ্যাপলের সাফারি ওয়েবের ওয়েবসাইট ব্লকিং পদ্ধতি পাশ কাটানোর কথা স্বীকার করেছে। এ ধরনের ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে ওয়েব কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে সঞ্চিত কুকি ব্যবহার করে তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন জানতে পারে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি একদল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানান, গুগলের ডাবলক্লিক বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কটি ব্যবহারকারীর অগোচরে তাদের কম্পিউটারে কুকি জমা রাখে।
অবশ্য মামলায় হেরে গেলে গুগলকে যে পরিমাণ আর্থিক জরিমানা গুনতে হবে, তা তাদের বিশাল অঙ্কের আয়ের তুলনায় নিতান্তই সামান্য। গত বছর কোম্পানিটির নিট মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭০ কোটি ডলার। কিন্তু সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হবে যুক্তরাজ্যের আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া। আর এক কোটিরও বেশি আইফোন গ্রাহকের সবাই যদি ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসেন সেটা গুগলের জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক হবে না। অবশ্য মামলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে কি পরিমাণ জরিমানা গুনতে হবে গুগলকে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। জরিমানার অঙ্ক নির্ভর করবে গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে গুগল কী পরিমাণ ব্যবসা করেছে বা কীভাবে সেটা আইফোন গ্রাহকের ক্ষতির কারণ হয়েছে, এ রকম বেশ কয়েকটি কারণের ওপর।
মামলার আরেক বাদী আলেকজান্ডার হ্যানফ বলেন, ‘গুগলের কাছ থেকে অর্থ হাতানো এ গণমামলার উদ্দেশ্য নয়। এ মামলার মাধ্যমে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, ব্যক্তি গোপনীয়তা ভঙ্গ করার ফল ভালো হবে না। এ মামলায় গুগলের কয়েক কোটি ডলার জরিমানা হতে পারে। এমনকি এ অঙ্ক ১০ কোটি পাউন্ডের ঘর ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর তাতে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণমামলা হতে যাচ্ছে গুগলের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়াটি।’
এরই মধ্যে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা গুগলের কাছে জানতে চেয়েছেন ব্যক্তি তথ্য তারা কীভাবে ব্যবহার করেছে, কী পরিমাণ ব্যক্তি তথ্য সরানো হয়েছে এবং সেটা কত দিন ধরে। ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট ১৯৯৮-এর ধারা অনুসারে বিশ্বাস ভঙ্গ, ব্যক্তি গোপনীয়তা ভঙ্গ, কম্পিউটারের অপব্যবহার ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে গুগলের বিরুদ্ধে।
এদিকে গুগলের ওপর অধিক হারে করারোপ করতে চাইছে সুইজারল্যান্ড। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর নামমাত্র কর ধার্য করে থাকে সুইজারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমন পরোক্ষ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নিতে চাইছে আলপাইন দেশটি। খবর রয়টার্সের।
আর্থিক স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত সুইজারল্যান্ডে বিভিন্ন খাতে অর্থ প্রবাহিত করে কর এড়ানোর সুযোগ পায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জুরিখেই গুগলের সবচেয়ে বড় কার্যালয়টি অবস্থিত। কিন্তু কোম্পানিটি এদেশটিতে করপোরেট কর দেয় না বললেই চলে। স্থানীয় পত্রিকা তাগেস-অ্যানজাইজার জানায়, সুইস কর্তৃপক্ষের দাবি করা বাড়তি কর এড়াতে এরই মধ্যে তদবির শুরু করেছে গুগল।
প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য সুইজারল্যান্ডে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ওদিকে সুইস কর্তৃপক্ষ জানায়, কোনো একক কোম্পানির ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাতে অপারগ তারা।
ইউরো সংকটে নিপতিত সুইজারল্যান্ড তাদের বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে গুগল, স্টারবাকস এবং ভোডাফোনের মতো বড় কোম্পানিগুলোর ওপর ক্রমান্বয়ে করবৃদ্ধির বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।
এদিকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ কাঙ্ক্ষিত হারে কর আদায়ে ইইউ কর্তৃপক্ষের চাপের মুখেও রয়েছে সুইসরা। সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও সুইজারল্যান্ডের আর্থিক কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনায় মুখর ইইউ। ইউরো কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ক্যান্টন বা রাজ্য পদ্ধতির সুযোগে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে ইচ্ছামতো কর নির্ধারণের সুযোগ দেয় সুইজারল্যান্ড। বিনিময়ে দেশটিতে অধিক হারে কর্মসংস্থান করতে হয় কোম্পানিগুলোকে।
সম্প্রতি ব্রাজিলের খনি কোম্পানি ভ্যালে এসএ ২০০৬ সালের এক কর মামলার ক্ষতিপূরণ হিসেবে সুইস কেন্দ্রীয় সরকারকে ২১ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক দেয়। অন্যদিকে ব্রাজিলের রাজ্য মিনাস জেরাইসকে পরিশোধ করে ৬৬ কোটি ৩০ লাখ রিয়াইস (৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার)। বাজারমূল্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খনি কোম্পানি ভ্যালে এসএ।
ইইউ অবশ্য এর আগে দাবি করেছিল, ক্যান্টন পদ্ধতির মাধ্যমে কর এড়ানোর সুযোগ দিয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অবৈধভাবে আর্থিক সহায়তা নিয়ে থাকে সুইজারল্যান্ড। দেশটি অবশ্য বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে।
জুরিখের কর কর্তৃপক্ষের পরিচালক ব্রুনো ফায়েসলার জানান, সুইস ক্যান্টনগুলো নিজেদের মতো করে করপোরেট কর নির্ধারণ করতে পারে। আর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাহায্য নেয়ার দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘জুরিখে যদি কোম্পানিগুলোর প্রধান কার্যালয় থাকে, তখনই তাদের কাছ থেকে নিট মুনাফা ও মূলধনের ওপর ভিত্তি করে কর আদায় করা হয়। আর সেটা না হলে, জুরিখে অবস্থিত তাদের শাখা ও সম্পত্তিগুলোর মুনাফার ওপর ভিত্তি করে কর নেয়া হয়।’
গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্স জানায়, যেসব বড় ইন্টারনেট কোম্পানি আইনের ফাঁক গলে কর এড়িয়ে গেছে, তাদের কাছ থেকে বকেয়া সব দাবি আদায় করা হবে। বর্তমানে গুগল ও অ্যামাজনের কর ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করছে প্যারিস।