সোমবার ● ২১ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » সৌরবিদ্যুতে পাল্টে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের গ্রামাঞ্চল
সৌরবিদ্যুতে পাল্টে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের গ্রামাঞ্চল
৷৷বাদশাহ্ সৈকত কুড়িগ্রাম ৷৷
কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামসহ চরাঞ্চলের অন্ধকার তাড়িয়েছে সৌরবিদ্যুৎ। কমে আসছে গ্রাম-শহরের পার্থক্য। বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জীবনের দৃশ্যপট। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ঘরের চালে শোভা পাচ্ছে সৌর প্যানেল। আলোকিত হচ্ছে ঘর। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার পাশাপাশি চলছে বিনোদনও।
গতকাল সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলো ২০০৫ সাল থেকে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত হতে থাকে। এ আলো ছড়িয়ে পড়ে চরাঞ্চলের গ্রামেও; যারা কখনই ভাবেনি তাদের ঘরে বিজলি বাতি জ্বলবে, তারা এখন এককালীন অথবা সহজ কিস্তিতে পেয়ে যাচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ। গ্রামীণ শক্তির মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী ১২ থেকে ৫০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে সৌর প্যানেল। নগদ অথবা কিস্তিতে এ প্যানেল সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও সোলার প্যানেল সরবরাহ করেছে। এক বছর আগে রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের চর কালুয়া গ্রামের শতাধিক পরিবারকে বিনামূল্যে সোলার প্যানেলে দেয় সেলফোন কোম্পানি রবি।
সৌরবিদ্যুৎ সুবিধায় যখন খুশি তখন ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করতে পারছে। পাশাপাশি নাগালের মধ্যে পাচ্ছে নানা বিনোদন। কুপি, হারিকেনের নানা বিড়ম্বনা থেকে এ এলাকার লোকজন এখন মুক্ত। গ্রামের হাটবাজারগুলোয় মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এখন আর সন্ধ্যা হলেই বন্ধ হয়ে যায় না গ্রামীণ জীবনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের জব্বার আলী জানান, গ্রামে কবে বিদ্যুৎ আসবে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। সেজন্যই কিস্তিতে সৌরবিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন। এ বিদ্যুতের আলোয় ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করছে। পাশাপাশি সেলফোন চার্জ দেয়া থেকে শুরু করে টেলিভিশনও দেখছেন তারা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, তার ইউনিয়নে এ পর্যন্ত চার শতাধিক সৌরবিদ্যুতের সংযোগ হয়েছে। এতে প্রত্যন্ত গ্রাম ও চরাঞ্চলগুলোয় সৌরবিদ্যুতের আলোয় চলছে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ বিনোদন। সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের ফলে জ্বালানি তেলের ওপর চাপ কমছে।
গ্রামীণ শক্তির কুড়িগ্রাম রিজিওনাল ব্যবস্থাপক মাহফুজ হোসেন বলেন, ‘গ্রামীণ শক্তি কুড়িগ্রামে ২০০৫ সাল থেকে কাজ করে আসছে। শুধু তারাই এ পর্যন্ত জেলায় ১০ হাজার সৌর প্যানেল স্থাপন করেছে। এতে সুবিধা পাচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। প্রতিটি সৌর প্যানেল চাহিদানুযায়ী ১২ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকি। নগদ অথবা কিস্তিতে আমরা এ প্যানেল সরবরাহ করি।’
প্রতিনিয়ত সৌর প্যানেলের চাহিদা বেড়েই চলেছে এ অঞ্চলে। এরই মধ্যে কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার লক্ষাধিক পরিবার পাচ্ছে এ বিদ্যুৎসেবা। এছাড়া যেসব ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি, সেখানে সৌরবিদ্যুতেই চলছে তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলো। চেষ্টা চলছে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ পাম্প চালানোর।
বিদ্যুত্বঞ্চিত পরিবারগুলোয় এ সেবা পৌঁছে দিতে সৌরবিদ্যুতের বিকল্প নেই। জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের ওপর চাপ কমাতে ও গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি পরিকল্পনা নেবে সরকার, এমন দাবি সবার।