শনিবার ● ১৯ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ট্যাবলেটের দৌরাত্ম্যে অস্তাচলে পিসির বাজার
ট্যাবলেটের দৌরাত্ম্যে অস্তাচলে পিসির বাজার
ট্যাবলেটের দৌরাত্ম্যে অস্তাচলে পিসির বাজার। বেশির ভাগ ক্রেতাই পিসির বদলে বেছে নিচ্ছেন ট্যাবলেট। বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না পিসি নির্মাতারা। যে ট্যাবলেট তাদের বাজার দখল করছে, সেগুলোর আদলেই পিসি তৈরি করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে চাইছেন তারা। উদ্ভাবনের উত্কৃষ্টতার সঙ্গে নকশার নান্দনিকতার মিশেলে পিসি বাজার আবার সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার চেষ্টায় রত ডেল, সনি, এসার ও লেনোভোর মতো শীর্ষ পিসি নির্মাতারা। ট্যাবলেট ম্যানিয়া কমানোর জন্য শেষ চেষ্টা করছেন তারা। খবর রয়টার্সের।
নতুন বছরের সামনের মাসগুলোয় নতুন অনেক বহনযোগ্য ও হাইব্রিড ল্যাপটপ বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে পিসি নির্মাতারা। এসব ল্যাপটপকে পিসির পাশাপাশি ট্যাবলেট হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। পিসি বাজারের শীর্ষ দুই স্তম্ভ ইন্টেল করপোরেশন ও মাইক্রোসফট করপোরেশন এ বাজারে সৃষ্টিশীল কিছু আনার কাজ করছে। হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার থেকে পিসি বিক্রি করেই আয়ের সিংহভাগ অর্থ অর্জন করা এ দুই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সংকটে রয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পূর্বাভাসে জানিয়েছে, পিসি বিক্রি কমায় এ দুই প্রতিষ্ঠানের আয়েও বিরূপ প্রভাব পড়বে।
পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করছে তারা। টাচনির্ভর উইন্ডোজ৮ প্ল্যাটফর্ম ও বিদ্যুত্সাশ্রয়ী চিপ তৈরির মাধ্যমে পাতলা ল্যাপটপ তৈরিতে জোর দিচ্ছে এ দুই প্রতিষ্ঠান। এগুলোকে আবার ট্যাবলেট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। কিছু সাফল্যও পাচ্ছে তারা।
সফটওয়্যার ব্যবসার গণ্ডি ছাড়িয়ে গত অক্টোবরে সারফেস ট্যাবলেট এনেছে মাইক্রোসফট। এরই মধ্যে বেশকিছু ক্রেতাও পেয়েছে তারা এ ট্যাবলেটের। জার্মানির শীর্ষ সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসএপি এজি এর কর্মীদের জন্য সারফেস ট্যাবলেট কিনেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান তথ্য কর্মকর্তা অলিভার বাসম্যান রয়টার্সকে জানান, মাইক্রোসফটের হাইব্রিড মডেলের এ সারফেস ট্যাবলেট দারুণ আকর্ষণীয়। এটি দিয়ে ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ দুটির কাজই করা সম্ভব। আইপ্যাডের পক্ষে ল্যাপটপের বাজার প্রতিস্থাপন করা সম্ভব না। তবে সারফেস এ কাজটি ভালো মতোই করতে পারবে।
২০১০ সালের এপ্রিলে আইপ্যাড বাজারে আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে ল্যাপটপের চাহিদা কমতে শুরু করে। অ্যামাজনের কিন্ডেল ফায়ার, গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ট্যাবলেট তৈরি করতে শুরু করায় ধীরে ধীরে থমকে যায় ল্যাপটপের চাহিদা।
গত বছর পিসির বাজারও কমেছে। ২০০১ সালের পর প্রথমবার গত বছর পিসি বাজার পড়েছে। এ বছর তাই উদ্ভাবন ও নকশা দিয়ে আবার পিসির বাজার চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে।
সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেসে শেষ হওয়া কনজিউমার ইলেকট্রনিকস শোয় (সিইএস) এর কিছুটা আভাস দেখা যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানই এ মেলায় ট্যাবলেট কাম ল্যাপটপ প্রদর্শন করে।
চীনা কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লেনোভোর উত্তর আমেরিকা শাখার প্রেসিডেন্ট জেরি স্মিথ রয়টার্সকে গত সপ্তাহে বলেন, ‘ইয়োগা ট্যাবলেট কাম ল্যাপটপে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া থিংকপ্যাড টুইস্ট ল্যাপটপের বিক্রিও বাড়ছে।’
বলা বাহুল্য, এ দুটি ল্যাপটপই ট্যাবলেট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সিইএস মেলায় চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেল একটি হাইব্রিড ল্যাপটপের প্রোটোটাইপ প্রদর্শন করে। ‘নর্থ কেপ’ কোড নামের ল্যাপটপটির কিবোর্ড চুম্বক দিয়ে সংযুক্ত। চাইলে এ কিবোর্ড আলাদা করে ফেলা যায় এবং কেবল ট্যাবলেট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এদিকে আসুস আবার ১৮ ইঞ্চির অল ইন ওয়ান উইন্ডোজ৮ পিসি বাজারে এনেছে। এটিকে পিসি হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি গুগলের অ্যান্ড্রয়েডচালিত ট্যাবলেট হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
লেনোভো ও আসুসের ট্যাবলেট বাজারে বেশ সাড়া পাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ দুটি প্রতিষ্ঠানের পিসি বিক্রি যথাক্রমে ১৪ ও ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
পিসি বাজার চাঙ্গা করতে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেশি বেশি নতুন মডেলের পিসি বাজারে ছাড়ছে পিসি নির্মাতারা। এ বিষয়ে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ বিভাগের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা তামি রেলার বলেন, ‘আমাদের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে অংশীদাররা অতীতের তুলনায় বাজারে এখন অনেক বেশি পিসি ছাড়ছে। এ থেকে বোঝা যায়, পিসি বাজারে উদ্ভাবন বাড়ছে।’