বৃহস্পতিবার ● ১৭ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » ডিজিটাল বাংলা » বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ব্যর্থ সরকার
বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ব্যর্থ সরকার
বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে সরকার। বর্তমান মেয়াদে নেয়া কোনো বড় প্রকল্প এ সময়ে আলোর মুখ দেখেনি। সত্য যে, বেসরকারি ও সরকারি উদ্যোগে জ্বালানি তেলভিত্তিক ভাড়া, দ্রুত ভাড়াভিত্তিক ও ছোট অনেক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হওয়ায় এর সরবরাহ বেড়েছে। তবে এভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল হওয়ায় ভর্তুকিও বাড়ছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ উপখাতে প্রদত্ত ভর্তুকির শতভাগই যাচ্ছে ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনায়। এটি সামাল দিতে আবার দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। চালু হওয়া সিংহভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র ভাড়াভিত্তিক এবং এতে ভর্তুকিতে জ্বালানি জোগাতে গিয়ে চাপ পড়ছে এ উপখাতেও; বাড়াতে হচ্ছে জ্বালানি তেলের দাম। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি থেকে জীবনযাত্রায়। বিতর্কিত পদক্ষেপ এবং সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতায় এক বিদ্যুতের কারণেই সরকার ও অর্থনীতি চ্যালেঞ্জে পড়েছে। বাস্তবতা হলো, বিদ্যুৎ উত্পাদনে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। ২০১৩ সালে দেশকে লোডশেডিংমুক্ত করার পরিকল্পনা হোঁচট খেয়েছে। এদিকে ব্যয় মেটাতে না পারায় বন্ধ রাখা হচ্ছে ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ‘নাজুক অবস্থায় বিদ্যুৎ খাতে সরকারি বিনিয়োগ’ শিরোনামে গতকাল একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে সরকারি অর্থায়নে বিদ্যুৎ খাতের ৯ প্রকল্পের বিপরীতে ৭ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও অর্থসংকটসহ ক্রয়-সংক্রান্ত ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রথম পাঁচ মাসে একটি টাকাও খরচ হয়নি। অথচ বাজেট বক্তৃতায় এ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ব্যয়সাশ্রয়ী বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে বেসরকারি খাতও। পিডিবির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১০টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের উত্পাদনে আসার কথা ছিল এর মধ্যে। কিন্তু অর্থসংকটে এগুলোর নির্মাণকাজ নাকি শুরু করা যায়নি। প্রতিশ্রুতি পূরণের সঙ্গে পরিকল্পনার সমন্বয় এক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে না। পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলেও চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন সাময়িক সমাধান মাত্র। লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে মূলধারার অর্থাৎ বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিকল্প নেই।
ঘোষিত পথনকশা বাস্তবায়ন করতে না পেরে সরকার একের পর এক ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়িয়ে চলেছে বলে খবর রয়েছে। এক্ষেত্রে মূল চুক্তির বর্ধিত সময়ে বিদ্যুৎ কেনা হলে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। যে কেন্দ্র তিন বছর সরবরাহের চুক্তিতে স্থাপিত হয়েছিল, সেটিতে উত্পাদিত বিদ্যুতের দাম, বিনিয়োগের বিপরীতে ক্যাপাসিটি চার্জ (বিদ্যুৎ না কিনলেও নির্দিষ্ট হারে বিনিয়োগকারীকে অর্থ দিতে হয়) নির্ধারণ- সবই করা হয় সময়সীমা ধরে। চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হলে দামসহ অন্যান্য শর্ত আগের মতোই কেন থাকবে, তা স্পষ্ট করতে হবে সরকারকেই। বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রাথমিক জ্বালানির জোগান নেই। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলেও তার উৎপাদনক্ষমতা কম। ফলে এখনো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল আমরা। প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরকার একটি গ্রহণযোগ্য কয়লানীতি উপস্থাপন করতে পারেনি। আমদানিনির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও অগ্রগতি নেই। রূপপুরে বিতর্কিত পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়াও শিথিল হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি রাশিয়া সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী চুক্তি সই করলেও এক্ষেত্রে পরিবেশ ঝুঁকি মোকাবেলাসহ নানা বিষয় এখনো অস্পষ্ট। অন্যদিকে গ্যাসের উত্পাদন কিছুটা বাড়লেও তাতে বিদ্যুৎ উত্পাদন খুব একটা বাড়েনি। এ সময়ে গ্যাসভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিতও হয়নি। বিদ্যুৎ আমদানি এবং আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টিও থমকে আছে।
জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে বিদ্যুৎ বিভাগ ভেঙে একাধিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়। বিদ্যুত্ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠা করা হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। এর কাজ ছিল বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সরকারকে সহায়তা জোগানো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্থাটি একটি কাজই করেছে, তা হলো পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে সরকারকে সহায়তা। প্রশ্ন করেনি- বিদ্যুৎ উত্পাদনে গৃহীত পদক্ষেপগুলো কার স্বার্থে নেয়া? কেন বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বদলে ক্রমে ছোট ও ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে? বিদ্যুৎ সঞ্চালনকালে সিস্টেম লস কেন অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি? অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম- উত্পাদন যত বাড়বে, গড় খরচ তত কমতে থাকবে। এটি বলা যায় উল্টে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে গড় খরচ; বেড়েছে বিদ্যুতের দাম ও ভর্তুকি।