বৃহস্পতিবার ● ১৭ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ফেসবুকে যোগ হয়েছে নতুন টুল গ্রাফ সার্চ
ফেসবুকে যোগ হয়েছে নতুন টুল গ্রাফ সার্চ
সাইটে রক্ষিত বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে তথ্য খুঁজে পেতে ফেসবুকে যোগ হয়েছে নতুন টুল গ্রাফ সার্চ। সার্চ টুলটি দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগ সাইটটির ১০০ কোটিরও বেশি গ্রাহক তাদের বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য খুঁজে পাবেন। এতে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলের আধিপত্য হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খবর লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের।
গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতেই মূলত নকশা করা হয়েছে নতুন টুলটির। ফেসবুক আশা করছে, এর মাধ্যমে অনলাইন সার্চের ক্ষেত্রে বিপ্লব আনা সম্ভব হবে। এ টুল দিয়ে এখন সানফ্রান্সিসকো থেকে শুরু করে যেকোনো বড় শহর কিংবা নিভৃতে বাস করা কাউকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। কিংবা কোনো বন্ধুর বন্ধুকে চাকরির খবর দেয়া অথবা ১০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে কে কোন গেমের ভক্ত, তাও খুঁজে বের করা সম্ভব।
অনলাইন প্রযুক্তি পত্রিকা সার্চইঞ্জিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড্যানি সুলিভান বলেন, এখন থেকে লোকজন সব কিছুই অনলাইনে সার্চ করতে শুরু করবে, যেগুলো আগে কখনো করা হয়নি কিংবা সুযোগ ছিল না।
এ টুল নিয়ে একটু হলেও বিচলিত ব্যবহারকারীরা। কারণ সার্চের বহুমাত্রিকতার কারণে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আবার কোম্পানির আয় করার সামর্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীদেরও তেমন কোনো আশা দেয়নি ফেসবুক। এ কারণে গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য ৩ শতাংশ কমে যায়। তার পরও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত যা করেছি, তার মধ্যে এটা অন্যতম। ফেসবুকে তথ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য গ্রাফ সার্চ পরিপূর্ণ একটি পদ্ধতি।’
অবশ্য এখনই সব গ্রাহক টুলটি ব্যবহার করতে পারবেন না। ফেসবুক জানায়, ধীরে ধীরে এ টুল গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। সব গ্রাহকের কাছে পৌঁছতে টুলটির এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। আরো জানানো হয়, ব্যবহারকারীদের মনোভাব দেখে এ সেবায় পরিবর্তনও আনা হতে পারে।
যদি টুলটি জনপ্রিয় হয়, তাহলে ফেসবুকেই বেশি সময় কাটবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের। তাতে হুমকির মুখে পড়বে প্রতিদ্বন্দ্বী সাইটগুলো। এখনই ফেসবুক থেকে তথ্য নিতে পারে না গুগল সার্চ। এ টুল চালু হলে বিশ্বের শীর্ষ ইন্টারনেট সেবা প্রতিষ্ঠানটির মূল সেবার আধিপত্যই হুমকির মুখে পড়বে। এমনকি পেশাদার যোগাযোগ সাইট লিংকডইন এবং ব্যবসা পর্যালোচনা সেবাদানকারী ইয়েলপ ইনকরপোরেটেডও সমস্যায় পড়বে।
অবশ্য একমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোই যে ফেসবুকের নতুন এ উদ্যোগে অস্বস্তিতে পড়বে তা নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীরাও সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কারণ যেসব তথ্য ব্যবহারকারী সবাইকে জানাতে চান না, সেগুলো হঠাৎ করেই প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। জাকারবার্গ জানান, টুলটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে কোন তথ্য সার্চে দেখা যাবে, সেটা ব্যবহারকারীরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের বার্মিংহামের স্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক উড্রো হারজোগ মনে করেন, নতুন সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করতেই ধীরে ধীরে টুলটিকে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ফেসবুক। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি মাত্র কয়েক শ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে যোগ করা হবে। প্রতি সপ্তাহ কিংবা মাস ভিত্তিতে অধিক সংখ্যক ব্যবহারকারীর কাছে টুলটিকে পৌঁছে দেয়া হবে।
হারজোগ বলেন, ‘ব্যবহারকারীরা একসময় এটিকে খুব কার্যকরি টুল হিসেবেই দেখবেন। বিশেষ একটি প্রযুক্তির কাছ থেকে তথ্য লুকিয়ে রাখার জন্য যে ধরনের সময় প্রয়োজন, সেটা সামাজিক সাইটে অসামাজিক থাকা ব্যক্তিরা খুব একটা পাবেন না।’
ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সমর্থক ইলেকট্রনিক প্রাইভেসি ইনফরমেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মার্ক রোটেনবার্গ মনে করেন, ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহারের নীতি হরদম পরিবর্তন করে তাদের দৌড়ের ওপর রেখেছে ফেসবুক। তিনি বলেন, এখন ফেসবুক বলছে প্রাইভেসি সেটিং ঠিক রাখা ব্যবহারকারীর দায়িত্ব।
জাকারবার্গ জানান, কয়েক বছর ধরেই গ্রাফ সার্চের উন্নয়ন হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে একাধিক ভাষা এবং বহনযোগ্য যন্ত্রেও এ সার্চ অপশনটি পাওয়া যাবে। ফেসবুকে একটি সার্চ অপশন থাকলেও সেটি একদম সেকেলে এবং খুব একটা কার্যকর নয়।
২০১১ সালের বসন্তে গ্রাফ সার্চের উন্নয়ন শুরু হয়। এর টুলটির মূল নকশাকার গুগলের সাবেক কর্মকর্তা লারস রাসমুসেন। তার সঙ্গে কাজ করেছেন গুগলের আরেক কর্মী টম স্টকি ও ফেসবুকের সার্চ টিম।
অবশ্য গত বছর মে মাসে আইপিও ছাড়ার আগে এ ধরনের সার্চ টুল ফেসবুকে যোগ করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জাকারবার্গ। গুগল সার্চ থেকে এ টুলটি বেশ ভিন্ন। ব্যবহারকারীরা তাদের বন্ধুদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে সার্চ করে বন্ধুর সম্পর্কে তথ্য পেতে পারেন। কিংবা বিটলস পছন্দ করে এমন বন্ধুও খুঁজে পেতে পারেন।