মঙ্গলবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » নানা সমস্যায় জর্জিত দেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা
নানা সমস্যায় জর্জিত দেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা
৷৷ নূরে আলম পিন্টু ৷৷অপ্রতুল অবকাঠামো, প্রকট শিক্ষকসংকট, আছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও- এমন নানা সমস্যায় জর্জিত দেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা। সংকট নিরসনে কারিগরি অধিদফতর একের পর এক বৈঠক করেও জোরালো কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। সর্বশেষ গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বেকারত্ব দূরীকরণ ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্য নিয়ে দেশে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়। এরই অংশ হিসেবে সারা দেশে গড়ে উঠেছে ৫১টি সরকারি পলিটেকনিক (ভোকেশনাল) ইনস্টিটিউট, দুটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, তিনটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে ও বিএম কলেজের অধীনেও রয়েছে অনেক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছে আট লাখের মতো শিক্ষার্থী। এর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১০ হাজার। সরকারি পলিটেকনিকেই প্রায় ৫২ শতাংশ শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এ সংকট নিয়েই চলছে শিক্ষা খাতটি।
তবে কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন সময় শিক্ষামন্ত্রী নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশ থেকে আসা কারিগরি অধিদফতরের শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে কারিগরি অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহজাহান মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে জনসম্পদকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। দেশের কারিগরি শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আমরা নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
শিক্ষকসংকট দূরীকরণে এবারো কোনো জোরালো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। যদিও বর্তমান জনবল কাঠামো সংশোধন করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ, শূন্যপদে ও মৃত্যুজনিত কারণে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৫০০ শিক্ষকের এমপিওভুক্তি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে ৭০-৮০টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কারিগরি অধিদফতরে নিয়ে আসার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আগামী মে মাসে কারিগরি শিক্ষা সপ্তাহ পালন করার কথাও বলা হয়েছে বৈঠকে।
শাহজাহান মিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা শিক্ষকসংকট দূর করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছি।’
জানা যায়, ৫১টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে মাত্র ২০টি রাজস্বভুক্ত। বাকিগুলো চলছে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রতি বছর হাজার হাজার নতুন শিক্ষার্থী নিয়ে ডাবল শিফটে শিক্ষাদান চললেও রাজস্বভুক্ত ২০ পলিটেকনিকে খালি পড়ে আছে ৬০ শতাংশ শিক্ষকের পদ। প্রকল্পভুক্ত ২৯টিতে ৮০ শতাংশ পদে কোনো শিক্ষকই নেই। পদোন্নতির ব্যবস্থাও নেই। শুধু তা-ই নয়, ৫১টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে ৪৫টিই চলছে উপাধ্যক্ষ ছাড়া। অধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে ২৮টি পলিটেকনিক। কারিগরি শিক্ষার সিলেবাসে নেই নতুনত্ব। মান্ধাতা আমলের সিলেবাস দিয়েই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দফা প্রশিক্ষাণকেন্দ্রগুলোকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
কারিগরি শিক্ষার সিলেবাসেও কোনো নতুনত্ব নেই। কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোয় যেসব বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা একেবারেই বাস্তবতা বিবর্জিত। এ শিক্ষা বিদেশে তো বটেই, দেশেও কোনো কাজে আসছে না।