শুক্রবার ● ৪ জানুয়ারী ২০১৩
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ইসরায়েলের প্রযুক্তি খাত উন্নয়নে আগ্রহী চীন
ইসরায়েলের প্রযুক্তি খাত উন্নয়নে আগ্রহী চীন
ইসরায়েলের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহী শীর্ষস্থানীয় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজতে গত মাসে দেশটি সফরে যায় চীনের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের একটি দল। খবর রয়টার্সের।
বিনিয়োগ কোম্পানি হ্যাং লুং গ্রুপের সভাপতি রনি চ্যানের নেতৃত্বাধীন দলটিতে ছিলেন লেনোভো গ্রুপ, কফকো, বিনিয়োগ ব্যাংক হিনা গ্রুপ, চায়না মার্চেন্টস ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং জেপি মরগান চেজের চীনা প্রতিনিধি। ইসরায়েলি প্রযুক্তি খাতে দুই দশক ধরে এ ধরনের বিনিয়োগ করে আসছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। চ্যান জানান, গুগল ও ইন্টেলের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের উদ্ভাবন হয়েছে ইসরায়েলে। চীনও এ রকম কিছু উদ্ভাবন করতে চায়।
দেশটিতে বিনিয়োগে কোনো সীমারেখা টানা হবে না বলে জানান চ্যান। তিনি বলেন, ‘এখানেই হয়তো কিছু কোম্পানি তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে। কেউ কেউ ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোকে চীনে নিয়ে যেতে পারে। কোনো কোম্পানি হয়তো ইসরায়েলের জন্য চীনের বাজার ধরার সুযোগ করে দিতে পারে। আমি নিজেও জানি না এ উদ্যোগ কোথায় গিয়ে ঠেকবে।’
ধনকুবের চ্যান জানান, সারা বিশ্বেই অনেকগুলো প্রযুক্তি কোম্পানির মালিকানা আছে তার পরিবারের হাতে। কিন্তু ইসরায়েলে তাদের কোনো বিনিয়োগ নেই।
ইসরায়েলে বিক্রি ও বিক্রয়োত্তর সেবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে লেনোভোর কার্যক্রম। তবে সম্প্রতি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ভারটেক্সের মাধ্যমে দেশটিতে অর্থলগ্নি করেছে কোম্পানিটি। তবে বিনিয়োগের আকার সম্পর্কে জানা যায়নি।
লেনোভোর প্রধান নির্বাহী ইয়াং ইউয়ানকিং বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রযুক্তি নিয়ে আমরা দারুণ আগ্রহী। এতে আমাদের কোম্পানির উন্নতি হবে, আমাদের ব্যবসাও বাড়বে।’ তিনি জানান, ভারটেক্সে বিনিয়োগ এ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ।
বিশ্বের শীর্ষ পিসি নির্মাতা হওয়ার পথে থাকা লেনোভো মূলত তথ্য ও বহনযোগ্য যন্ত্রের প্রযুক্তি খাতে আগ্রহী।
২০১১ সালে চীন-ইসরায়েল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮০০ কোটি ডলার। এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। এর মধ্যে ১৪০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ইসরায়েলি এমএ ইন্ডাস্ট্রিজকে কিনে নেয় চীনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। ২০১১ সালে শস্য রক্ষার জন্য রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি করা এ কোম্পানিটির ৬০ শতাংশ মালিকানা অধিগ্রহণ করে চায়না ন্যাশনাল কেমিক্যাল করপোরেশন (কেমচায়না)।
রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাত্কারে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী ইউভাল স্টেইনিত্জ বলেন, ২০১০ সাল থেকেই ইসরায়েলের মূল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ শুরু করে চীন। এমএ ইন্ডাস্ট্রিজের মতো প্রচলিত খাতগুলোর পাশাপাশি জৈব ও কৃষির মতো উচ্চ প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করছে তারা।
চীনা প্রতিনিধি দলের ইসরায়েল সফরের অর্থায়ন করে ক্যাটালিস্ট ইনভেস্টমেন্ট। এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা অংশীদার এডুয়ার্ড চাকিয়ারম্যান জানান, এ সফরের মাধ্যমে ইসরায়েলে চীনা অধিগ্রহণ বাড়বে। বাড়বে গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রে বিনিয়োগ। সেসঙ্গে দেশটিতে চীনা কোম্পানির সরাসরি কার্যক্রমও শুরু হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছি। তাদের প্রত্যেকের জন্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছি। তাদের বিশ্বাস, ইসরায়েলে বিনিয়োগ করে মার্কিনদের চেয়ে উদ্ভাবনের দিক দিয়ে বেশি লাভবান হওয়া যাবে।’
চীনা-ইসরায়েল প্রযুক্তির জন্য ১০ কোটি ডলারের একটি তহবিল গড়ে তুলছে ক্যাটালিস্ট পার্টনারস। এ বছরের প্রথমার্ধেই তহবিল গঠনের কাজ শেষ হবে। চাকিয়ারম্যান মনে করেন, তহবিলের আকার ২০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ঐতিহ্যগতভাবেই প্রযুক্তির দিক দিয়ে বেশ অগ্রসর ইসরায়েলিরা। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতার পাশাপাশি নিজস্ব উদ্যোগের কারণে ইসরায়েলের নাগরিকরাও অত্যন্ত প্রযুক্তিমনা। বিশেষ করে সামরিক প্রযুক্তি খাতে অনেক পশ্চিমা দেশের চেয়েও বেশি অগ্রসর এ দেশটি। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা নতুন হলেও সামরিক ও বাণিজ্যিকভাবে ইসরায়েল ও চীন বেশ ঘনিষ্ঠ। চীনের সামরিক বাহিনীও প্রতি বছর ইসরায়েলের কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্র কিনে। এমনকি ইসরায়েলের কাছ থেকে মনুষ্যবিহীন গোয়েন্দা বিমান তৈরির প্রযুক্তিও হস্তগত করেছে প্রাচ্যের দেশটি।
এত দিন ইসরায়েলি উদ্ভাবনের বেশির ভাগ চলে যেত মার্কিন কোম্পানিগুলোর দখলে। সম্প্রতি ইসরায়েলের একটি ফ্ল্যাশ মেমরি তৈরির কোম্পানি অধিগ্রহণ করে অ্যাপল। ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনে ব্যবহূত ফ্ল্যাশ মেমরির ক্ষমতা ও স্থায়িত্ব বাড়ানোর নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিল কোম্পানিটি। চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও এ ধরনের আবিষ্কার নিজেদের অধিকারে নিতে আগ্রহী। - এসবিবি