সোমবার ● ১৭ ডিসেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি সংবাদ » কর ফাঁকি রোধ করতে স্থাপিত হচ্ছে ফরেনসিক ল্যাব
কর ফাঁকি রোধ করতে স্থাপিত হচ্ছে ফরেনসিক ল্যাব
করপোরেট করদাতাদের কর ফাঁকি ধরতে কম্পিউটার ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জানুয়ারির মাঝামাঝি এ অত্যাধুনিক ল্যাব চালু হবে বলে আশা করছে এনবিআর। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, এর মাধ্যমে আরও বেশি কর ফাঁকির ঘটনা উদঘাটন করা যাবে।
সূত্র জানায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা কর ফাঁকির ঘটনা উদঘাটন করা হয়। এ থেকে আদায় হয় ১৫২ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছর ১৩৪ কোটি টাকা কর ফাঁকি ও জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ে, যার বিপরীতে আদায় হয় ১০৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১৬৪ কোটি টাকা কর ফাঁকির বিপরীতে ৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আদায় করতে সক্ষম হয় কর বিভাগ।
এনবিআর মনে করছে, প্রকৃত অর্থে করপোরেট ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি পরিমাণ কর ফাঁকি দিচ্ছে। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির অভাবে তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এর পরও যতটুকু কর ফাঁকি উদঘাটিত হচ্ছে, তা ঠিকমতো আদায় করা যাচ্ছে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি ফরেনসিক ল্যাব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন বলেন, ‘কর ফাঁকি রোধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে কম্পিউটার ফরেনসিক ল্যাব করা হচ্ছে, যাতে ধূর্ত করদাতারা ফাঁকি দিয়েও পার না পায়।’
ল্যাব পরিচালনার ওপর এর সফলতা নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘নতুন উদ্যোগ হিসেবে ল্যাব করার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ ল্যাবের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বাড়বে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের সততার ওপর জোর দিতে হবে। তা না হলে দক্ষতা বাড়লেও ফল হবে শূন্য।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) যে কর ফাঁকির ঘটনা উদঘাটন করছে, সেটি খুবই সামান্য। অল্প পরিমাণ কর ফাঁকি ধরার মাধ্যমে সিআইসি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। বড় কর ফাঁকির ঘটনা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।
রাজস্ব বোর্ড ভবনের তৃতীয় তলায় ল্যাবটি স্থাপন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে বেশকিছু যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছে। এ মাসেই বাকি সব যন্ত্রপাতি এসে পৌঁছবে। এনবিআর আশা করছে, আগামী মাসের মাঝামাঝি এ ল্যাবরেটরির কাজ শুরু হবে। যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডিএফআইডি ল্যাব প্রতিষ্ঠায় অর্থায়ন ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সহযোগিতা দিচ্ছে।
ল্যাবটি চালু হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জব্দ করা কম্পিউটারের তথ্য সহজেই বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হবে এনবিআর। এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দিতে তার যাবতীয় দলিলাদি কম্পিউটার গোপন করলেও তা এ ল্যাবের মাধ্যমে উদঘাটন করা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে করপোরেট ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ডাটা মাইন বা তথ্যখনিতে প্রবেশ করা যাবে, যা করদাতাদের আয়ের গোপন তথ্য খুঁজে বের করতে সহযোগিতা করবে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের কর নীতি বিভাগের সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এনবিআরের চেষ্টা ছিল এমন একটি অত্যাধুনিক ফরেনসিক ল্যাব নির্মাণের। বিভিন্ন কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। এবার একটি বিদেশী সংস্থার সহযোগিতায় ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে, যা করপোরেটদের কর ফাঁকি দেয়ার সব পথ বন্ধ করতে সহায়তা করবে। ফলে কর কর্মকর্তাদের মধ্যেও গতি সঞ্চার হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরামউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এনবিআরের আধুনিকায়নের পাশাপাশি করপোরেট করদাতাদের ফাঁকি দেয়ার মানসিকতা বদলানোর প্রয়োজন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর দিতে হবে। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর ফাঁকি না দেয়।’
সম্প্রতি এনবিআরের কর ফাঁকি-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর ফাঁকি রোধে কার্যকর ও তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের দুর্বলতা, কর ফাঁকি দিলে তা চিহ্নিত না হওয়ার সম্ভাবনা এবং স্বচ্ছ লেনদেন ও রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা না থাকায় কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে এক শ্রেণীর করদাতা। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে করযোগ্য আয় অন্য অধিক্ষেত্রে স্থানান্তরের কৌশল অবলম্বন করে কর ফাঁকি দেয়। আর দেশীয় কোম্পানিগুলো কর অবকাশ বা করমুক্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠানে করযোগ্য আয় স্থানান্তরের মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ভুয়া আয়-ব্যয়ের হিসাব দেখিয়ে প্রকৃত আয় গোপন করার মাধ্যমেও কর ফাঁকি দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বিক্রয় বা প্রাপ্তির মূল্য কম প্রদর্শন অথবা অতিরিক্ত খরচ দাবির মাধ্যমে আয় গোপন করা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, কর ফাঁকি উদঘাটনে সিআইসি কাজ করছে। এটি স্পর্শকাতর কর ফাঁকির মামলাসহ খাতভিত্তিক কর ফাঁকি তদন্ত করে থাকে। এ ছাড়া এনবিআরের আওতায় গঠিত বিশেষ টাস্কফোর্সও কর ফাঁকি তদন্তে কাজ করে। কর ফাঁকি উদঘাটনে কর অঞ্চলগুলোয় কর গোয়েন্দা ও তদন্ত সেলগুলো গঠন করা হচ্ছে। সব সেলকে প্রতি মাসে কমপক্ষে দুটি কর ফাঁকির ঘটনা উদঘাটনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। -এসবিবি