সোমবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » লেই জুনকে চীনের স্টিভ জবস নামে অভিহিত
লেই জুনকে চীনের স্টিভ জবস নামে অভিহিত
প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছরের মাথায় স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জিয়াওমি টেকনোলজির বাজারমূল্য ৪০০ কোটি ডলার। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা লেই জুনকে অভিহিত করা হচ্ছে চীনের ‘স্টিভ জবস’ নামে। আর জিয়াওমি টেকনোলজির স্মার্টফোন জিয়াওমিকে বলা হচ্ছে চীনের অ্যাপল। খবর রয়টার্সের।
স্টিভ জবসের মতোই জিন্সের প্যান্ট আর কালো শার্ট পরেন লেই। জিয়াওমি প্রতিষ্ঠার আগে ৪২ বছর বয়সী লেই চীনে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর আগে জয়ো ডট সিএনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। পরে প্রতিষ্ঠানটিকে অ্যামাজন ডটকম কিনে নেয়।
চীনের ছোট শহর জিয়ান্তওয়ে জন্ম লেইয়ের। শহরটিকে অলিম্পিক জিমন্যাস্ট তৈরির কারখানা হিসেবেই জানত সবাই। কিন্তু এটিকে এখন প্রযুক্তিবিদের শহরও বানিয়ে ফেলেছেন লেই। জবসকে তিনি একজন অনুকরণীয় ব্যক্তি হিসেবে মানলেও জবসের সঙ্গে তার তুলনা করা উচিত নয় বলে জানান লেই। রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ‘চীনের মিডিয়া আমাকে চীনের স্টিভ জবস নামে ডাকে। এটিকে আমি প্রশংসা হিসেবেই ভাবি, কিন্তু এ ধরনের তুলনা আমাদের ওপর চাপ তৈরি করে। জিয়াওমি আর অ্যাপল পুরোপুরি ভিন্ন বিষয়। জিয়াওমির ভিত্তি ইন্টারনেট। অ্যাপলের মতো কাজ করি না আমরা।’
জবসের সঙ্গে নিজেকে তুলনীয় মনে না করলেও তার কোম্পানির তৈরি স্মার্টফোন বিপুল হারে বিক্রি হচ্ছে। গত অক্টোবরে জিয়াওমির নতুন সিরিজের স্মার্টফোন বাজারে আসে। এরই মধ্যে এটি তিন লাখ ইউনিট বিক্রি হয়েছে। স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এসথ্রি ও অ্যাপলের আইফোন৫-এর সঙ্গে মিল থাকলেও স্মার্টফোনটি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৭০ ডলারে, যা আইফোন৫-এর দামের অর্ধেক।
জিয়াওমির বিপণন পদ্ধতিও একটু ভিন্ন। জেডটিই ও হুয়াউইর মতো অন্য চীনা স্মার্টফোন নির্মাতারা টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে জোট বেঁধে স্মার্টফোন বিক্রি করে। একসঙ্গে অপারেটরদের কাছে বিপুল পরিমাণ স্মার্টফোন বিক্রি করে তারা। আর জিয়াওমি কোনো অপারেটরের সঙ্গে জোট বাঁধে না। অনলাইনে গ্রাহকদের কাছে সরাসরি প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টফোন বিক্রি করে।
এ পদ্ধতির কারণে বিপুল সাড়া পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত ৩০ অক্টোবর বাজারে আসা জিয়াওমির নতুন স্মার্টফোনটি প্রথম ২ মিনিটের মধ্যে ৫০ হাজার ইউনিট বিক্রি হয়। বিপণন পদ্ধতি সম্পর্কে লেই বলেন, ‘আমরা বিক্রির পরিমাণের দিকে ছুটি না। গ্রাহকের সন্তুষ্টির পেছনে ছুটি। গ্রাহকদের চমকে দিতে চাই আমরা।’
চীনের মাইক্রোব্লগিং সাইট ওয়েবোয় লেইয়ের অনুসারী ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির নতুন স্মার্টফোনের বিস্তারিত জানতে তার ওয়েবোয় অনুসারীরা ঢুঁ মারে। জিয়াওমিকে আরও বড় আকারের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন তিনি। এরই মধ্যে বেশকিছু বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করেছে। গত জুনে সিঙ্গাপুরের সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গভর্নমেন্ট অব সিঙ্গাপুর ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন জিয়াওমিতে ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে। এ ছাড়া লেইয়ের কিছু ধনী বন্ধুও প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য ৪০০ কোটি ডলার।
চীনের বাজারে স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে ওঠা জিয়াওমি সম্পর্কে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান কিমিং ভেনচার পার্টনারসের হানস তাং বলেন, চীনের স্মার্টফোন বাজার দারুণ সমৃদ্ধ। দেশটি অনেক বড়। এর ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীও অনেক বেশি। এ কারণে এখানে একটি নিজস্ব স্মার্টফোনব্যবস্থা গড়ে তোলা খুবই সম্ভব।
২০১০ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠা করা হয় জিয়াওমি। গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টফোন বিক্রি শুরু করে। ২০১২ সালের এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ৭০ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। চলতি বছরে স্মার্টফোন বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ২০ লাখ ইউনিট অনেক আগেই ছাড়িয়েছে জিয়াওমি।
লেই রয়টার্সকে বলেন, ‘মাত্র এক বছর হলো আমাদের প্রতিষ্ঠানের পণ্য বাজারে এসেছে। এরই মধ্যে আমাদের বিক্রি ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এটি সন্দেহাতীতভাবে দারুণ।’ পাঁচ বছরের মধ্যে জিয়াওমিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা নেই বলেও জানান লেই।
তাং জানান, বর্তমানে জিয়াওমির সার্বিক মুনাফার পরিমাণ ১০ শতাংশ। এ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি এ বছর এখন পর্যন্ত ২০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে।
জিয়াওমি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরাও ডিভাইসটি নিয়ে দারুণ খুশি। ২৪ বছর বয়সী মো জিয়াহুয়া জিয়াওমি স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, ‘ডিভাইসটি আমার দারুণ লাগে। চীনের অন্যান্য ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের তুলনায় এটির উপযোগিতা অনেক বেশি। আমাদের এখন দারুণ একটি ব্র্যান্ড রয়েছে। এটিকে আমাদের সমর্থন দেয়া উচিত।’
আপাতত সাড়া পেলেও জিয়াওমিকে নিয়ে সমালোচনাও থেমে নেই। রেডটেক অ্যাডভাইজরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইকেল ক্লেনডেনিন বলেন, জিয়াওমির স্মার্টফোনে ভালো কিছু ফিচার রয়েছে। কিন্তু এর নকশা এখনো নান্দনিক হয়নি। বর্তমানে বাজার দুটি জিনিসের ওপর চলে। একটি বিপুল বিক্রি, আরেকটি দারুণ ব্র্যান্ড। এ দুটি পেতে আরও সময় লাগবে জিয়াওমির।
বর্তমানে জিয়াওমির প্রতিদ্বন্দ্বী হুয়াউই ও জেডটিই। এ দুই প্রতিষ্ঠান চলতি বছর যথাক্রমে ৩ ও ৬ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। এ ছাড়া এ বাজারে অ্যাপল তো রয়েছেই। ক্লেনডেনিন বলেন, বড় স্মার্টফোন নির্মাতা হিসেবে পরিচিতি পেতে হলে তাদের অনেক গ্রাহকসেবা কেন্দ্রও খুলতে হবে।
লেই অবশ্য সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকের ভালোবাসা। গ্রাহক আপনার পণ্য বরণ করে নিলেই আপনি সফল।’