শুক্রবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ধীরে ধীরে আধিপত্য হারাচ্ছে অ্যাপল !!!
ধীরে ধীরে আধিপত্য হারাচ্ছে অ্যাপল !!!
স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের বাজারে ধীরে ধীরে আধিপত্য হারাচ্ছে অ্যাপল। স্যামসাং, আসুস, অ্যামাজনের ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের তুলনায় বর্তমানে সুস্পষ্ট ব্যবধান থাকলেও এখন তা কমছে। এর প্রভাব পড়ছে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দামেও। গত বুধবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৬ শতাংশ কমেছে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পতন। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির শেষের শুরু দেখছেন অনেক বিশ্লেষক। খবর রয়টার্সের।
অ্যাপলের শেয়ারমূল্য কমার পেছনে বেশ কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করেছেন বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকরা। প্রথম কারণ, অ্যাপল সম্পর্কে প্রভাবশালী এক গবেষণা সংস্থার নেতিবাচক পূর্বাভাস। গুগলের অ্যান্ড্রয়েডচালিত গ্যাজেটের কাছে অ্যাপল ধীরে ধীরে আধিপত্য হারাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে গবেষণা সংস্থা আইডিসি। এর প্রভাব অ্যাপলের শেয়ারের দামে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ফিসক্যাল ক্লিফ-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে আগামী বছর থেকে অ্যাপলের কর দেয়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। এতে প্রতিষ্ঠানটির লাভ কমতে পারে- এমন আশঙ্কায় অ্যাপলের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন অনেকে। এ ছাড়া চীনের সর্ববৃহৎ টেলিকম অপারেটর চায়না মোবাইলের সঙ্গে নকিয়ার স্মার্টফোন বিক্রির চুক্তি হয়েছে। এতে স্মার্টফোনের বৃহত্তম বাজার চীনে অ্যাপল পিছিয়ে পড়বে। এটাও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমার আরেকটি কারণ।
গত বুধবার অ্যাপলের শেয়ারের দাম সর্বশেষ ১০ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে। এ দিন অ্যাপল বাজার মূল্য হারায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। অ্যাপলের ৩ কোটি ৭০ লাখ শেয়ার হাতবদল হয় এ দিন। গত ৫০ দিনে গড়ে দৈনিক ২ কোটি ১০ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে অ্যাপলের।
বুধবার আইডিসির পূর্বাভাস দেয়ার আগ পর্যন্ত অ্যাপল ছিল বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে পছন্দের প্রতিষ্ঠান। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের বাজারে অ্যাপলের একচেটিয়া আধিপত্য সবসময়ই থাকবে এমনটিই ধারণা ছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এ বাজারে ঢুকে পড়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে অ্যাপলকে। বিশেষ করে অ্যামাজন ও আসুসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামের ট্যাবলেট এনে বাজারে অ্যাপলের কর্তৃত্বের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। আর স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি সিরিজের ডিভাইসগুলো অ্যাপলের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করছে।
সমস্যাগুলো অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সিইও প্রয়াত স্টিভ জবসের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। এখন অ্যাপলের সব দায়দায়িত্ব কুকের হাতে।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ট্রাস্ট ক্যাপিটাল পার্টনারসের পরিচালক ব্রায়ান ব্যাটেল রয়টার্সকে বলেন, অ্যাপল বর্তমানে যে সমস্যায় রয়েছে, তা স্বল্পমেয়াদি নয়। সামনে এর চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। এটা প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্টিভ জবসকে ছাড়া তারা কতটুকু এগিয়ে যেতে পারে, তা তাদের দেখাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অ্যাপলের শেয়ারকে আবার রেকর্ড ৭০০ ডলারে পৌঁছতে হলে প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন কোনো যুগান্তকারী পণ্য আনতে হবে।
আইডিসির পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি বছর শেষে ট্যাবলেট বাজারে আধিপত্য কমবে অ্যাপলের। বছর শেষে ট্যাবলেট বাজারে প্রতিষ্ঠানটির দখল ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। এ সময় অ্যান্ড্রয়েডচালিত ট্যাবলেটের বাজার দখল ৩৯ দশমিক ৮ থেকে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ হবে।
চলতি বছর এ পর্যন্ত অ্যাপলের শেয়ারের দাম ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দামের চেয়ে বর্তমানে এটির শেয়ারের দাম ২৪ শতাংশ কম। গত ২১ সেপ্টেম্বর অ্যাপলের শেয়ারের দাম রেকর্ড ৭০৫ ডলার ৭ সেন্টে পৌঁছে। গত বুধবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ছিল ৫৩৮ ডলার ৭৯ সেন্ট।
অ্যাপলের প্রতি বিনিয়োগকারীরা এত তাড়াতাড়ি ভরসা হারিয়ে ফেলায় কিছু বিশ্লেষক বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে হাডসন স্কোয়ার রিসার্চের বিশ্লেষক দানিয়েল আর্নস্ট বলেন, অ্যাপল এখনো মজবুত অবস্থায় রয়েছে। এখনো বাজারে দুটি ট্যাবলেট বিক্রি হলে এর একটি থাকে অ্যাপলের। এর পরও এর শেয়ারের দাম কমার কোনো কারণ নেই। প্রতিষ্ঠানটির ডিভাইস কেনার জন্য বিশ্বের সবখানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। আর কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রেই এমন হয় না।
নকিয়ার সঙ্গে চায়না মোবাইলের চুক্তিটি অ্যাপলের শেয়ারে বড় ধাক্কা দিয়েছে। চায়না মোবাইল গ্রাহকসংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম অপারেটর। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে নকিয়ার স্মার্টফোন বিক্রি করবে। ফলে চীনে অ্যাপলের চেয়ে এগিয়ে থাকবে নকিয়া। এর পরও দেশটির মানুষ ধীরে ধীরে আইফোন ব্যবহার শুরু করবে বলে আশাবাদী বিশ্লেষকরা।
পাইপার জ্যাফরির বিশ্লেষক জিনি মানস্টার এ বিষয়ে বলেন, ‘চায়না মোবাইল বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের স্মার্টফোন বিক্রি করে। আমি মনে করি আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ অ্যাপলের সঙ্গেও চায়না মোবাইলের এ রকম একটি চুক্তি হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে চলা ফিসক্যাল ক্লিফের সমস্যার কারণে সামনের বছর অ্যাপলকে ভুগতে হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিনিয়োগকারী। চলতি বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা কর বিষয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে না পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সবার ওপর উচ্চ হারে কর ধার্য হবে। প্রত্যেকের আয়ের ওপর বর্তমানের তুলনায় ৩৫-৪০ শতাংশ কর বাড়বে। ফলে অ্যাপলের মুনাফা কমে যাবে।
এ বিষয়ে ব্যাটেল বলেন, ফিসক্যাল ক্লিফের আলোচনায় রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা সমঝোতায় পৌঁছতে পারলে আগামী বছর আবার অ্যাপলের দাম বাড়তে পারে।