অনলাইন সুবিধা না থাকায় গ্রাহক হারাচ্ছে জনতা ব্যাংক

অনলাইন সুবিধা না থাকার কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ব্যবসায়িকভাবে পিছিয়ে পড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। অনলাইন সুবিধা আছে- এমন ব্যাংকে ব্যবসায়ীসহ অন্য গ্রাহকরা হিসাব সরিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়া আমানত সংগ্রহের ধারা আশাব্যঞ্জক হলেও বিভিন্ন ধরনের সেবার অপ্রতুলতার কারণে পাটগ্রামের গ্রাহকরা রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকের প্রতি অনীহা দেখাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
পাটগ্রাম উপজেলায় জনতা ব্যাংকের শাখা রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো বুড়িমারী, বাউরা ও পাটগ্রাম। ১৯৭৩ সালে চালু হয় বুড়িমারী শাখা। এ শাখায় পর্যায়ক্রমে কৃষিঋণসহ গ্রাহকের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। বর্তমানে শাখাটি লাভজনক অবস্থায় থাকলেও অনলাইন ব্যাংকিংসুবিধা না থাকায় ব্যবসায়ীদের লেনদেন-সংক্রান্ত ক্ষেত্রের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
ব্যাংকের পাটগ্রাম শাখার হিসাবধারী ব্যবসায়ী কামরান হাবীব বণিক বার্তাকে বলেন, অনলাইন ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ হলো একজন ব্যবসায়ী মুহূর্তেই অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর করতে পারেন। এ ব্যবস্থায় টাকা বহনের ঝুঁকিও কম। তাই অনলাইন ব্যাংকিং চ্যানেলে যুক্ত হতে ব্যবসায়ীরা অনলাইন সুবিধা আছে- এমন ব্যাংকে হিসাব সরিয়ে নিচ্ছে। একই কথা বললেন ব্যবসায়ী আবু সাঈদ রুস্তম, আমীর হামজা ও মোজাম্মেল হক মিথুনসহ অনেকে।
উপজেলার বাউরা শাখাটি এখনো লাভজনক অবস্থায় পৌঁছতে পারেনি। তবে তা লোকসানি প্রতিষ্ঠানও নয় বলে কর্মকর্তারা জানান। এদিকে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল উপজেলা শহরে যাত্রা করে পাটগ্রাম শাখাটি। গত সাত মাসে ব্যাংকটির এ শাখায় খুব বেশি লেনদেন হয়নি। তবে আমানত সংগ্রহের অবস্থা আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে রয়েছে, এমনটাই দাবি করেন কর্মরত কর্মকর্তারা। তবে এখানে ঋণসুবিধা খুবই অপ্রতুল বলে জানা যায়। সাত মাসে মাত্র একজন ব্যবসায়ীকে সিসি ঋণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পেশাজীবী ১০ জনকে সার্ভিস ঋণ দেয়া হয়েছে। এর বেশি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। কৃষিঋণের কোনো বরাদ্দও মিলেনি বলে জানান কর্মকর্তারা। বেকার যুবকদের জন্য এ শাখায় কোনো স্কিম চালু নেই। সেবার অপ্রতুলতার কারণে শাখাটি সংকটে পড়েছে।
পাটগ্রাম শাখা ব্যবস্থাপক সানোয়ারুল হক বলেন, গ্রাহকদের কাছে অনলাইন ব্যাংকিং অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনলাইন সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় চালু না থাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যবসায়ী গ্রাহকদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। ফলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আন্তঃজেলা অনলাইন ব্যাংকিং চ্যানেল চালু না থাকায় বর্তমানে গ্রাহকই পাওয়া যাচ্ছে না। শাখাটি চালু হওয়ার পর গত সাত মাসে সন্তোষজনক লেনদেন হয়নি। অথচ প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিটি ব্যাংকের শাখায় অনলাইন ব্যাংকিংসুবিধা দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এ সুযোগ-সুবিধা চালু করা হলে ব্যবসায়ীদের আর্থিক লেনদেন আগের তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত শাখাগুলোয় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, সরকার দেশের ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে ‘ই-তথ্য সেবা’ কার্যক্রম চালুর ফলে ব্যবসায়ীসমাজও অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। দেশের সর্বত্র অনলাইন কার্যক্রম চালু হওয়ার কারণে ব্যাংকিং খাতেও ব্যাপকভাবে অনলাইন লেনদেনের প্রভাব পড়ছে। অনলাইন লেনদেন সুবিধা না থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোয় ব্যবসায়ী গ্রাহকদের ধরে রাখা যাচ্ছে না। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। এ কারণে নতুন নতুন এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের নতুন শাখা চালু হলেও কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক পাওয়া যাচ্ছে না।       লালমনিরহাট থেকে -মোয়াজ্জেম হোসেন