রবিবার ● ২ ডিসেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » এবার ইন্টারনেটে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কর আরোপ !!!
এবার ইন্টারনেটে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কর আরোপ !!!
কিছু দিন ধরেই ইন্টারনেট নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আলোচনায় আসছে। আগামীকাল দুবাইয়ে শুরু হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সম্মেলন ঘিরে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রনের আশঙ্কাই ঘনীভূত হচ্ছে। এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। সম্মেলন সামনে রেখে রাশিয়া, চীন, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ চাইছে ইন্টারনেটে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কর আরোপের প্রস্তাব উপস্থাপন করতে। তবে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশ। খবর রয়টার্সের।
কর আরোপে আগ্রহী দেশগুলোর যুক্তি, গুগল-ফেসবুকের মতো ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশের টেলিকম অবকাঠামো ব্যবহার করছে। অথচ সেখান থেকে কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সেসব দেশের অপারেটররা।
ইইউর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, মেক্সিকোসহ অন্যান্য দেশ। ইন্টারনেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বারসের (আইকান) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইন্টারনেটের ওপর যথেষ্ট কর্তৃত্ব করতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রও আশঙ্কা করছে, ইন্টারনেট ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হলে উদ্ভাবন ও ব্যবসা দুটিই বাধাগ্রস্ত হবে।
ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে বলা হয়, ইইউ বিশ্বাস করে আইটিইউ সম্মেলন সামনে রেখে যে প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাতে ইন্টারনেটের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। ইসির ইন্টারনেট পলিসির কমিশনার নেলি ক্রস জানান, ইন্টারনেট এখন ঠিকভাবেই চলছে। যেহেতু এখন কোনো সমস্য নেই, কাজেই সংশোধন বা নতুন নীতিরও প্রয়োজন নেই।
সম্মেলন সামনে রেখে রাশিয়ার প্রস্তাব-সম্পর্কিত কিছু নথি ফাঁস হয়ে গেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, দেশটি অভ্যন্তরীণ ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চায়। আইটিইউ সদস্যরাষ্ট্ররা নিজ দেশে ইন্টারনেটের ওপর আরও বেশি কর্তৃত্ব পেতে চায়। বিষয়টিকে সমস্যা বলেই মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র।
আইটিইউয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর টেরি ক্র্যামার বলেন, মস্কোর পরিকল্পনায় বিভিন্ন রাষ্ট্র ইন্টারনেট ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং অনলাইন কনটেন্টে নজরদারি করতে পারবে। ফলে বাকস্বাধীনতা ও ব্যবসা ব্যাহত হবে। এখন আইটিইউর সম্মেলনে যদি দেশগুলোকে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব কমে যাবে। কারণ শীর্ষস্থানীয় ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের। অধিকাংশ তথ্যকেন্দ্র, সার্ভারসহ অন্যান্য অবকাঠামোর অবস্থানও যুক্তরাষ্ট্রেই। অধিকাংশ জনপ্রিয় ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানের সূতিকাগারও যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুগল, ফেসবুক, টুইটার, ইয়াহুসহ অন্যান্য। এখন ইইউর প্রস্তাব অনুযায়ী কড়াকড়ি আরোপ করা হলে দেশ হিসেবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে যুক্তি হিসেবে সাইবার হামলার কথা বলছে রাশিয়া। আর ইইউ বিষয়টিকে দেখছে খোঁড়া যুক্তি হিসেবে। ইসির এক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বলেন, ‘কিছু দেশ এখন বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিষয়কে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। ইইউ এ আশঙ্কাও করছে, বিদেশী রাষ্ট্রে কনটেন্ট সরবরাহ করলে সাইটগুলোকে অর্থ খরচ করতে হবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই সেবার আওতা কমে আসবে। কিংবা সেবা সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও এর খরচ বেড়ে যাবে। কারণ কোনো প্রতিষ্ঠানই চাইবে না নিজের পয়সা খরচ করে সেবা দিতে।
কিছু দেশ ও প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেটকে কড়াকড়ির মধ্যে আনার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা জানান, প্রচলিত টেলিফোন ব্যবস্থার রাজস্ব দিন দিন কমছে। এখন কিছু দেশ ও প্রতিষ্ঠান দাবি তুলছে, সেখানে সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে গুগল বা স্কাইপের মতো প্রতিষ্ঠান সে দেশকে কর দেবে। ফলে আর্থিক সুবিধা পেয়ে দেশগুলো তাদের নেটওয়ার্ক অবকাঠামো আরও প্রসার করতে পারবে।
এ প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে ইউরোপের টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোই বেশি লাভবান হবে। এদের অনেকেই এ প্রস্তাব সমর্থন করে বলে গত অক্টোবরে জানিয়েছে। জার্মানির টেলিকম অপারেটর ডয়েস টেলিকম এ মতে সমর্থন জোগাড়ে কাজ করছে। বিষয়টিকে তারা তুলনা করছে ডাক টিকিটের সঙ্গে। অর্থাৎ কোনো অপারেটরের অবকাঠামো ব্যবহার করলে ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানটি তাদের নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে বাধ্য থাকবে। যেমন কোনো ব্যবহারকারী যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কোনো দেশ থেকে জিমেইল অ্যাকাউন্ট থেকে ই-মেইল দেখছেন, সে ক্ষেত্রে ওই দেশের টেলিকম অপারেটরকে ফি দেবে গুগল।
সমালোচকরা জানান, প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। কারণ একটি প্রতিষ্ঠানের সেবা ব্যবহারকারী পর্যন্ত পৌঁছতে ছয় থেকে সাতটির বেশি অপারেটরের অবকাঠামো ব্যবহার করে।
ইন্টারনেট অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের সদস্যরা মনে করছেন, এ ধরনের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট বৈষম্য তৈরি হবে। অনেক দরিদ্য দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার দুরূহ হবে। জেনেভাভিত্তিক ইন্টারনেট সোস্যাইটির মার্কাস কামার বলেন, ‘সেবা সরবরাহ করতে যদি অর্থ গুনতে হয়, তাহলে কেউ কি এ কাজে রাজি হবে? এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দরিদ্র রাষ্ট্রগুলো। তারা ইন্টারনেটবঞ্চিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে বঞ্চিত হবে।’