মঙ্গলবার ● ২০ নভেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » অ্যাপলের বাজার দখল করছে গুগল অ্যান্ড্রয়েড
অ্যাপলের বাজার দখল করছে গুগল অ্যান্ড্রয়েড
আইওএসের চেয়ে অ্যান্ড্রয়েড এগিয়ে এটাতো সবারই জানা। এর পরও অ্যাপল ডিভাইসের ওএস হিসেবে আইওএসের আলাদা কদর ছিল। কিন্তু ক্রেতারা এখন কম দামে ভালো মানের পণ্য চান। গুগল অ্যান্ড্রয়েড তাদের জন্য আর্শীবাদ বলা যায়। ফলে আইওএসের প্রতি ক্রেতারা আগের মতো আগ্রহী নন। খবর ইকোনমিক টাইমসের।
কম দামের পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনই পাচ্ছেন নতুন এবং আকর্ষণীয় সব অ্যাপ্লিকেশন। অ্যান্ড্রয়েডের জনপ্রিয়তা বাড়ার সম্ভবত এটাই একমাত্র কারণ। সম্প্রতি সমাপ্ত প্রান্তিকে আইডিসির বক্তব্য অনুযায়ী এখন চারটি স্মার্টফোনের তিনটিই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস। আর তা হবেই বা না কেন? সেলফোন বাজারে যে এখন চলছে স্মার্টফোনের যুগ।
ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) মোবাইল ফোনস রিসার্চ শাখার ম্যানেজার রামন লামাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০০৮ সালে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বাজারে আসে। আজ অনেকেই স্মার্টফোন বলতে অজ্ঞান। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা অ্যান্ড্রয়েডের। সবাই অ্যাপল ডিভাইসের মালিক হতে পারে না। কারণ অ্যাপল ডিভাইসগুলো উচ্চমানসম্পন্ন এবং দামও অনেক বেশি। তাই তাদের কাছে গুগল অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যাপক জনপ্রিয়।
শুধু স্মার্টফোনই নয়, ট্যাবলেট বাজারেও অ্যান্ড্রয়েডের জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। অ্যাপল আইপ্যাড সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যাবলেট কম্পিউটার। কিন্তু চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ট্যাবলেট বাজারে অ্যাপলের অংশ ৫০ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৫ শতাংশ। কারণ কম দামের অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেট কেনার জন্য ক্রেতাদের মধ্যে এখন হুড়োহুড়ি পড়েছে। আইডিসির কাছ থেকে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে অ্যাপল আইপ্যাডের পাশাপাশি অ্যামাজন কিন্ডেল ফায়ার, বার্নেস অ্যান্ড নোবেলের নুক বাজারে এখন বেশ পরিচিত। এগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম।
আইডিসির মতে, এখন পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন বিক্রির পরিমাণ ১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৯০ শতাংশেরও বেশি। স্ট্রাটেজি অ্যানালিটিকসের মতে, এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জনপ্রিয়তার দিক থেকে আইফোন ফোর এসকে পেছনে ফেলেছে স্যামসাং গ্যালাক্সি এসথ্রি। ফলে প্রথমবারের মতো কোনো অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস বিশ্বসেরা স্মার্টফোন মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেল।
গার্টনারের মোবাইল কম্পিউটিং শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট কেন ডুলানি বলেন, অ্যাপলের চেয়ে অ্যান্ড্রয়েডের উদ্ভাবন গতি অনেক দ্রুত। গুগল এ ক্ষেত্রে অনেক পরিশ্রম করছে। ঠিক এ জায়গাতেই অ্যাপল গুগলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। অ্যান্ড্রয়েডের একটি ওপেন সোর্স ওএস। আইওএস যেমন অ্যাপল ডিভাইসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, অন্যদিকে যেকোনো সেলফোন নির্মাতা গুগলের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিজের মতো করে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস প্রস্তুত করে। এ জন্য অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলো ব্যাপক বৈচিত্র্যপূর্ণ।
অ্যাপলের সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, অনলাইন শপ- সবকিছুই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। বিপরীতে ডুলানির মতে, ডেভেলপার, যন্ত্রাংশ নির্মাতা, ক্রেতা ও প্রকৌশলীদের কাছ থেকে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস-সম্পর্কিত মন্তব্য পাওয়ার সুযোগ বেশি। অ্যাপল ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্য এ সুবিধা নেই।
এনপিডি গ্রুপের বিশ্লেষক স্টিফেন বেকার বলেন, ‘বাজার দখলের দিক থেকে অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ একটি ভালো দিক। তবে এ ক্ষেত্রে হার্ডওয়্যার নির্মাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়। স্যামসাং ছাড়া আর কোনো অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতা প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে কি না, আমার জানা নেই।’
অ্যান্ড্রয়েড বিনামূল্যে ব্যবহার করা গেলেও সার্চ, ম্যাপ, গুগল প্লে (আগে যা অ্যান্ড্রয়েড মার্কেট নামে পরিচিত ছিল) থেকে ওএস প্রস্তুতকারী গুগল ভালোই আয় করে। আর এগুলোর ব্যবহার পদ্ধতিও সহজ। ফরেস্টারের বিশ্লেষক চালর্স গলভিনের মতে, অ্যান্ড্রয়েডের এমন জনপ্রিয়তার পেছনে স্মার্টফোন ক্রেতাদের মনোভাব পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কম দামে ভালো মানের পণ্য ও সেবা দিতে সক্ষম বলে অ্যান্ড্রয়েডকে স্মার্টফোন ক্রেতারা বেশি পছন্দ করেন। প্রথমদিকের স্মার্টফোন ক্রেতারা প্রযুক্তির দিকে বেশি নজর দিত। তবে এখনকার ক্রেতারা প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে দাম কেমন হতে পারে, সেটা নিয়েও ভাবে।
প্রতি বছর অ্যাপল তাদের ওএস আপডেট দেয়। বিপরীতে প্রায় অ্যান্ড্রয়েড ওএসের আপডেটেড সংস্করণ হার্ডওয়্যার নির্মাতা ও সেলফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাত ধরে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছায়। আইওএসের সর্বশেষ সংস্করণ সিক্স পয়েন্ট ওয়ান। আর অ্যান্ড্রয়েডের সর্বশেষ সংস্করণ ফোর পয়েন্ট টু ‘জেলি বিন’। - এসবিবি