মঙ্গলবার ● ১৩ নভেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » আইটিসির কার্যক্রম চালু হচ্ছে, বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা
আইটিসির কার্যক্রম চালু হচ্ছে, বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা
ইন্টারন্যাশনাল টিরেস্ট্রিয়াল ক্যাবলের (আইটিসি) বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলতি মাসেই শুরু হচ্ছে। সেবাটি চালু হলে বিশ্বের সঙ্গে প্রায়ই ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নর যে ঘটনা ঘটে তা বন্ধ হবে। নিশ্চিত হবে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থা। ফলে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) ও কল সেন্টার খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হবে। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এরই মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে আইটিসি সেবা চালুর জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- নভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স কমিউনিকেশন্স লিমিটেড ও ফাইবার অ্যাট হোম। পরীক্ষামূলক সেবা সম্পন্ন হলে একই অনুমোদন পাবে বাকি তিন প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড, বিডি লিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও ম্যাংগো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড।
দেশের একমাত্র সাবমেরিন ক্যাবল সাউথ এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-ফোরের (সি-মি-উই-ফোর)। এটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয় দেশের ইন্টারনেট ব্যবহাকারীদের। এর বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আইটিসি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স দেয়া হয়।
আইটিসি লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো স্থলভাগ দিয়ে ভারতের মাধ্যমে বিকল্প ক্যাবল সংযোগ ব্যবস্থা তৈরি করছে। ভারতীয় অংশে টাটা ইন্ডিকম, ভারতী এয়ারটেল ও রিলায়েন্স সংযোগ স্থাপনের কাজটি করছে। ভারতের স্থলভাগ দিয়ে মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে এ সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। ভারতে ১৪টি সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ রয়েছে।
আইটিসি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) বা অনুমোদিত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করবে।
নিজেদের গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে বিদ্যমান সি-মি-উই-ফোর সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগ পাবে আইটিসি লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া লাইসেন্সের শর্তানুযায়ী আগে দেশের বিকল্প সাবমেরিন ক্যাবল ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
জানতে চাইলে ফাইবার অ্যাট হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনুল হক সিদ্দিকী বলেন, আইটিসি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভালো ব্যবসায়িক সম্ভাবনা রয়েছে। সেবাটি চালু হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে দেশের কল সেন্টার ও বিপিও খাত। কারণ এ খাতে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের নিশ্চয়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাবমেরিন ক্যাবলের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভিস্যাট ব্যবহার করা হয়। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আইটিসি সেবা চালু হলে তুলনামূলক অনেক কম মূল্যে বিকল্প এ ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে।
ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর্জা মোহাম্মদ হেলাল জানান, শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে সেবা শুরু করতে যাচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি আইজিডব্লিউ ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) সেবা গ্রহণের বিষয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
উল্লেখ্য, ওয়ান এশিয়া-এএইচএল জেভি নামে লাইসেন্স নিলেও পরে তা বিটিআরসির অনুমোদনের মাধ্যমে ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স কমিউনিকেশন্স লিমিটেড করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ছয় প্রতিষ্ঠানকে আইটিসি লাইসেন্স দেয় বিটিআরসি। নীতিমালা অনুযায়ী, লাইসেন্স পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সেবা চালুর বাধ্যবাধকতা ছিল প্রতিষ্ঠানগুলোর। পরে তিন মাস সময় বাড়ানো হয়। এ সময় শেষ হয়েছে গত ৪ অক্টোবর। তবে নির্ধারিত সময়ে বাণিজ্যিকভাবে সেবাটি চালু করতে পারেনি কোনো প্রতিষ্ঠানই।
এ সেবা চালুর প্রসঙ্গে আইটিসি লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ আল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে সীমান্তে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা ছিল। পরীক্ষামূলকভাবে সেবাটি চালু করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে এটি সম্পন্ন করে বাণিজ্যিকভাবে সেবাটি চালু করা সম্ভব হবে।
সীমান্তের শূন্য লাইনে (নোম্যানস ল্যান্ডে) ক্যাবল স্থাপন ও হ্যান্ডহোল নির্মাণে জটিলতার কারণে এ সেবা চালুর বিষয়টি কিছুটা পিছিয়ে যায়। গত ২৬ আগস্ট এ বিষয়ে সহায়তা দিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে সীমান্তে দুই দেশের মধ্যকার ক্যাবল সংযোগ স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিবন্ধকতা দূর হয়।
আইটিসি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকে লাইসেন্স ফি বাবদ প্রাথমিকভাবে ২ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। আর বার্ষিক লাইসেন্স ফি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া ১ কোটি টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি ও ২০ লাখ টাকা নিরাপত্তা জামানত হিসেবে দিতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেবাদান শুরু করতে ব্যর্থ হলে প্রতি মাসে ব্যাংক গ্যারান্টির ১০ শতাংশ করে কেটে নেয়ার বিধান রয়েছে নীতিমালায়।