শুক্রবার ● ৯ নভেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » অনিশ্চিত অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে অ্যাপল
অনিশ্চিত অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে অ্যাপল
অনিশ্চিত অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে অ্যাপল। গত সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম রেকর্ড মূল্যে পৌঁছার পর গত বুধবার পর্যন্ত এর শেয়ার মূল্য ২০ শতাংশ কমেছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যাওয়ার শঙ্কা ও আইফোন৫ এর সরবরাহ অনিশ্চিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা অ্যাপলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছেন। খবর রয়টার্সের।
গত সপ্তাহের বুধবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ কমে যায়। দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগের নিশ্চিত খাত হিসেবে থাকা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম মাত্র দুই মাসের মধ্যে ২০ শতাংশ কমেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য কমেছে ১৩ হাজার কোটি ডলার।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাপলের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। আইফোন৫ সরবরাহ নিয়ে সমস্যায় ভুগছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া স্যামসাং, অ্যামাজন স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের বাজারে ধীরে ধীরে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলায় অ্যাপলের একচেটিয়া বাজার পড়তির দিকে।
২০০৭ সালে আইফোন এবং ২০১০ এ আইপ্যাড আনার পর বাড়তে থাকে অ্যাপলের শেয়ারের দাম। একপর্যায়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৬৯৯ ডলার ৮০ সেন্টে পৌঁছে। এ দুটি ডিভাইসের মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে নতুন যুগের সূচনা করে অ্যাপল। কিন্তু ভবিষ্যতেও প্রতিষ্ঠানটি এর উদ্ভাবন অব্যাহত রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিনিয়োগকারীরা। স্টিভ জবসের অধীনে অ্যাপল সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছিল। কিন্তু নতুন সিইও টিম কুক যতটা না স্বপ্নচারী, তার চেয়ে বেশি ভালো প্রশাসক ও ব্যবসায়ী। এ কারণে সন্দেহ আরও বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের।
নান্দনিক নকশার অ্যাপলের ডিভাইসে ব্যবহার করা হয় আইওএস অপারেটিং সিস্টেম। এ অপারেটিং সিস্টেমের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে আসছেন স্কট ফোরস্টল। কিন্তু আইওএস ম্যাপ নিয়ে সমস্যা হওয়ার পর তাকে অ্যাপল থেকে অব্যাহতি দেন টিম কুক। ফোরস্টলকে অ্যাপলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে মনে করতেন সবাই। এমনকি স্টিভ জবসের উত্তরসূরি হিসেবেও তাকে দেখতেন সবাই। তাকে বরখাস্ত করায় অ্যাপলের শক্তি অনেকটা কমেছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
ফরওয়ার্ড ম্যানেজমেন্টের পোর্টফোলিও ম্যানেজার ডেভিড রিডারম্যান বলেন, ‘অ্যাপলের পরিবর্তনের দিকে আমরা লক্ষ রাখছি। অ্যাপলের উদ্ভাবনের ভবিষ্যৎ কি তা আমরা জানতে চাই। প্রতিষ্ঠানটি এত দিন পর্যন্ত অনেক নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে। ক্ষেত্রগুলো আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজন তা
অ্যাপলই বুঝিয়েছে। আমরা দেখতে চাই, ভবিষ্যতেও অ্যাপল এ ধারা নিশ্চিত করতে পারবে।’
উদ্ভাবনী সমস্যার পাশাপাশি আইফোন৫ নিয়েও সমস্যায় রয়েছে অ্যাপল। আইফোনের যন্ত্রাংশ সংযোজনের কাজ করে তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান ফক্সকন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান টেরি গাউ সম্প্রতি জানান, অ্যাপল যে পরিমাণ আইফোন৫ চাচ্ছে, তা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত মাসে অ্যাপল জানিয়েছিল, চলতি প্রান্তিকে তাদের মুনাফা কমতে পারে। আইফোন৫ ও অন্যান্য ডিভাইস তৈরিতে অ্যাপলের খরচ বাড়ছে।
এ সম্পর্কে সোলারিস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা টিম গিরস্কেই বলেন, এখন অ্যাপলের সব পণ্যই বিক্রি হয়ে গেছে। নতুন কিছু আপাতত তারা দিতে পারছেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, কখন তারা আগের মতো ভালো করতে শুরু করবে।
তৃতীয় প্রান্তিকে অ্যাপলের ফলাফল ওয়াল স্ট্রিটের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়। গত বুধবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৫৫৮ ডলারে পৌঁছে।
সরবরাহ ও প্রশাসনিক সমস্যা ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়েও সমস্যা হচ্ছে অ্যাপলের। স্যামসাং, গুগল ও অ্যামাজন অ্যাপলের আইফোন ও আইপ্যাডকে চ্যালেঞ্জ করে ট্যাবলেট তৈরি করছে। এতে বাজার দখল কমছে অ্যাপলের। আইডিসির হিসাব অনুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিকে ট্যাবলেটের বাজারে অ্যাপলের বাজার দখল কমে ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর বিপরীতে স্যামসাংয়ের বাজার দখল প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এসব কারণে অ্যাপলকে আর বিনিয়োগের আদর্শ ক্ষেত্র হিসেবে মনে করছেন না ফান্ড ম্যানেজাররা। এ বিষয়ে ডেসটিনেশন ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্লেষক মাইকেল ইওশিকামি বলেন, অ্যাপলে বিনিয়োগের সময় এখন সবারই চিন্তা করা উচিত। কিছু না বুঝে অ্যাপলে বিনিয়োগ করলে চলবে না। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে, তাই এটির শেয়ার কেনার আগে অবশ্যই ভাবতে হবে।