বৃহস্পতিবার ● ৮ নভেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » বিটিসিএলের ২০ কর্মকর্তা আত্মগোপনে
বিটিসিএলের ২০ কর্মকর্তা আত্মগোপনে
অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে প্রায় ২০৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রমনা থানায় পাঁচটি মামলা করে। এসব মামলায় আসামি করা হয় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির (বিটিসিএল) ছয় কর্মকর্তা ও বিদেশী ক্যারিয়ার-সংশ্লিষ্ট আটজনকে। কিন্তু দুদকের এ মামলার পর থেকে বিটিসিএলের প্রায় ২০ কর্মকর্তা আত্মগোপন করেছেন। পলাতক এসব কর্মকর্তার আশঙ্কা, তাদের বিরুদ্ধেও দুদক মামলা করতে পারে।
আত্মগোপনে যাওয়া কর্মকর্তারা হলেন- মোহাম্মদ আনোয়ারুল আলম (মহাব্যবস্থাপক ওটিআর), সরকার মোহাম্মদ জাবেদ রব্বানী (পরিচালক), গিয়াসউদ্দিন আহমেদ (পরিচালক), রফিকুল মতিন (পরিচালক), মো. শাহজাহান (পরিচালক), মো. হাবিবুর রহমান প্রামাণিক (বিভাগীয় প্রকৌশলী), মো. নুরুজ্জামান খান (বিভাগীয় প্রকৌশলী), বিদ্যুৎ চন্দ্র আইচ (বিভাগীয় প্রকৌশলী), মো. মাসুদ রানা (বিভাগীয় প্রকৌশলী), সাধন কুমার দাস (বিভাগীয় প্রকৌশলী), মো. শাহাদৎ হোসেন (বিভাগীয় প্রকৌশলী), মো. আবদুল ওয়াহাব (বিভাগীয় প্রকৌশলী), হাম্মান মুজিব (বিভাগীয় প্রকৌশলী), রোনেল চাকমা (উপবিভাগীয় প্রকৌশলী), মনিরা বেগম (উপবিভাগীয় প্রকৌশলী), আবদুর রাজ্জাক (সহকারী প্রকৌশলী) প্রমুখ।
জানা গেছে, এসব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক একাধিকবার নোটিস দেয়। কিন্তু তারা কেউ সাড়া দেননি। আত্মগোপনে থাকা অধিকাংশ কর্মকর্তার ব্যবহূত টেলিফোন এখন বন্ধ। এদের মধ্যে কেবল রোনেল চাকমার ফোন খোলা পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন কানাডায় পালিয়ে ছিলেন, সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রোনেল চাকমা বলেন, ‘দীর্ঘদিন কানাডায় ছিলাম ছুটি নিয়ে। গত অক্টোবরে সরকার আমার ছুটি বাতিল করলে দেশে ফিরে আসি। আমি পালিয়ে নেই। পোস্টিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছি।’
এদিকে দুদক মামলার ১৪ আসামিকে গ্রেফতারের প্রস্তুতি শুরু করেছে। যেকোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে। তদন্তের প্রয়োজনে আত্মগোপনে থাকা বিটিসিএলের কর্মকর্তাদেরও গ্রেফতার করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, কমিশন থেকে বিটিসিএলের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে, প্রয়োজন মনে করলে তিনি অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেন। এখন তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রয়োজন মনে করলেই আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হবে।
রমনা থানায় করা মামলায় অভিযুক্ত বিটিসিএলের কর্মকর্তারা হলেন- সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. আবু সাইদ খান, সাবেক পরিচালক (আন্তর্জাতিক) মো. মাহফুজার রহমান, সদস্য (রক্ষণাবেক্ষণ ও চলাচল) মো. মাহাবুবুর রহমান, প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌফিক, বিভাগীয় প্রকৌশলী (আইটিএস) একেএম আসাদুজ্জামান ও সাবেক বিভাগীয় প্রকৌশলী (আইটিএস) মো. আবদুল হালিম। এদের মধ্যে মো. মাহফুজার রহমান টেলিটকে, মাহবুবর রহমান বিটিসিএলের পরিচালক (পরিদর্শন) ও ড. মো আবু সাইদ খান টেশিসে কর্মরত। মামলা হওয়ার পর মোহাম্মদ তৌফিককে টেলিকমিউনিকেশন স্টাফ কলেজের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘দুদকের মামলার পর আমরা নথিপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছি। দুদক থেকে কাগজপত্র পেলে তা বিশ্লেষণ করা হবে। এরপর আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে অভিযুক্তদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানা গেছে, ফৌজদারি মামলা হলে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শুরুতে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সরকারি চাকরি বিধিতে সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞাঁ জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ ফৌজদারি মামলার আসামি হলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, তা সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঐচ্ছিক বিষয়। সাধারণত এমন মামলা হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখে, অভিযুক্ত কর্মকর্তা মামলাকে প্রভাবিত করবেন কি না অথবা নথিপত্র সরিয়ে ফেলবে কি না- এসবের ভিত্তিতে তাকে
বরখাস্ত বা স্বপদে বহাল রাখা হয়। তবে কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট হলে তাকে বরখাস্ত করতেই হবে।
দুদক অনুসন্ধান করে দেখেছে, বিদেশ থেকে প্রতিদিন আসা ফোনের মাত্র ১৩ শতাংশের তথ্য সিডিআরে (কল ডাটা রেকর্ড) সংরক্ষণ করা হয়। বাকি ৮৭ শতাংশের কোনো রেকর্ডই নেই। দুদক মনে করে, সিংহভাগ তথ্য সংরক্ষণ না করার মাধ্যমে অভিযুক্তরা প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বা তারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। বৈদেশিক ক্যারিয়ারের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগসাজশে অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তা বিদেশ থেকে আসা কলের সিংহভাগ তথ্য সংরক্ষণ করেননি বলে দুদক প্রমাণ পেয়েছে।