বুধবার ● ৭ নভেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ইন্টারনেটে নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ
ইন্টারনেটে নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ
ইন্টারনেট ছাড়া আজকের যুগ, ভাবাই যায় না। কিন্তু ইন্টারনেটের ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন অপরাধের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটছে। ইন্টারনেটে নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অপরিচিত মানুষকে বিশ্বাসের শাস্তি হিসেবে অনেক সময় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন তারা। খবর দ্য টেলিগ্রাফের।
এদের মধ্যে কম বয়সীর সংখ্যাই বেশি। এমনই একজনের নাম আমান্ডা টড। ১৫ বছর বয়সী কানাডার এ কিশোরী গত ১০ অক্টোবর নিজ বাড়িতে আত্মহননের পথ বেছে নেন। ইন্টারনেটে স্পর্শকাতর চিত্র প্রকাশের সূত্র ধরে শারীরিক ও মানসিক নিযার্তনের শিকার হয় মেয়েটি। মৃত্যুর তিন দিন আগে সে ইউটিউবে আপলোড করা একটি ভিডিওতে ফ্ল্যাশ কার্ডের মাধ্যমে তার হতাশা ও ক্ষোভ সবার কাছে প্রকাশ করে। আমান্ডা টডের আত্মঘাতী হওয়ার পেছনে তার পরিবার ও গণমাধ্যম সাইবার বুলিংকে দায়ী করছে। কাউকে হেনস্থা করার জন্য অপরাধীরা ওয়েবসাইট ব্যবহার করলে তাকে বলা হয় সাইবার বুলিং। এ ক্ষেত্রে অপরাধীরা সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হিসেবে ফেসবুক বা টুইটারের মতো জনপ্রিয় সোশাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে।
শুধু সাইবার বুলিংই নয়, ইন্টারনেটের বেশ কিছু ওয়েবসাইট কম বয়সীদের অনেককে আত্মঘাতী হওয়ার ব্যাপারে উত্সাহ দিচ্ছে। ১৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ কিশোরী তাল্লুলাহ উইলসন আনোরেক্সিয়ায় ভুগছিল। গত ১৯ অক্টোবর লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাস স্টেশনের রেলপথের ওপর তাকে মৃত দেহ উদ্ধার করা হয়। চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয়া এ মেয়েটির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও আত্মঘাতী হওয়ার লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু স্কুলের অনেকের কাছে এ মেয়ে সৃষ্টিশীল, বুদ্ধিমতী ও মিশুক বলে পরিচিত ছিল। প্রতি বছর ১১ হাজার ডলার পরিশোধ করা একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়ুয়া এ মেয়ের জীবনে কোনো অভাব না থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু তালুল্লাহর আত্মঘাতী হওয়ার পেছনে আত্মবিশ্বাসহীনতা ও মানসিক অত্যাচার মূল কারণ ছিল বলে অনেকে মনে করছেন। মেয়েটির টুইটার মেসেজেও এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ‘আমি কখনোই সুন্দর ও চিকন হতে পারব না’- টুইটারে এভাবেই তালুল্লাহ উইলসন হতাশা প্রকাশ করেছিল। তালুল্লাহ উইলসনের মতো একইভাবে গত জুনে যুক্তরাজ্যের কেন্টে রোজি হুইটেকার নামে ১৫ বছর বয়সী কিশোরী আত্মহত্যা করেন। সমবয়সীদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে সে হতাশ ছিল। ইন্টারনেটে আত্মহত্যাবিষয়ক ওয়েবসাইট তাকে ট্রেনের তলায় ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারাতে উত্সাহ দিয়েছে বলে তার পরিবার ও গণমাধ্যম মনে করছে। এর সূত্র ধরে অনেকে যুক্তরাজ্যে আত্মহত্যা প্ররোচনাবিষয়ক ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন।
যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় মনোবিজ্ঞানীদের একজন জুলি লি ইভান্স। প্রতিদিন তার কাছে অনেক রোগী আসেন। এর মধ্যে তিনজন কমবয়সী রোগী আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মানসিকভাবে শক্ত বলে পরিচিত এ নারীও তালুল্লাহ উইলসনের আত্মঘাতী হওয়ার খবরটি পড়ে চোখের জল সামলাতে পারেননি। আজকের যুগের ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজেদের শেষ করে দেয়ার মতো কাজে উত্সাহিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি রীতিমতো আতঙ্কিত। তালুল্লাহ যেভাবে আত্মঘাতী হয়েছে, ঠিক একই পথ তার রোগীরাও বেছে নিতে পারেন বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সে কারণে কম বয়সীদের বাবা-মাকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে জুলি লি ইভান্স তত্পর হয়েছেন। ইন্টারনেটের অপকারিতা সম্পর্কে তার লেখা বই আগামী বছর প্রকাশিত হওয়ার কথা। এ বিষয়ে তার চিন্তাধারা ও কার্যক্রমের বিশদ বিবরণ বইটিতে প্রকাশিত হবে। এ বইটি লেখার উদ্দেশ্যে তিনি টিনএজারদের ইন্টারনেট চ্যাট রুমেও ঢুকেছিলেন। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তাদের কার্যক্রম ও কথোপকথন ইভান্সকে গবেষণার কাজে ব্যাপক সাহায্য করেছে। ইভান্সের বক্তব্য অনুযায়ী, কম বয়সীরা নিজেদের রক্ষাকর্তা হিসেবে এমন কাউকে চ্যাটরুমে পায় না, যাদের উপস্থিতি তাদের জন্য খুবই জরুরি। খাদ্যভীতি রয়েছে এমন মেয়েদের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ বলে জানালেন তিনি। তার মতে, কম বয়সী মেয়েদের আত্মহননের পেছনে খাদ্যভীতি বা আনোরেক্সিয়া দায়ী। চ্যাটরুমে এদেরই বেশি দেখা মেলে। একে অপরের কাছ থেকে উত্সাহ পেয়েই এরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।
টিনএজারদের অনেকেই বড়দের চমকে দেয়া বা আতঙ্কিত করে দেয়ার মতো কাজ করে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট তাদের কাছে এখন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ইউটিউবের অনেক ভিডিওতে ব্লেড দিয়ে কাটা হাত ও সেখান থেকে রক্ত বের হওয়ার মতো ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখা যায়। ইভান্সের মতে, ইন্টারনেট চ্যাটরুমে হতাশ কিশোর ও কিশোরীদের কীভাবে আত্মঘাতী হতে হবে, তা শেখানো হয়। যে করেই হোক, তাদের এ প্রচেষ্টা সফল করার দায়িত্বও চ্যাটরুমগুলো তুলে নিয়েছে। এ রকম নেতিবাচক কাজে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে হতাশ টিনএজাররা একতাবদ্ধ।