রবিবার ● ৪ নভেম্বর ২০১২
প্রথম পাতা » আইসিটি আপডেট » ইলেকট্রনিক সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শার্প বিলুপ্ত হওয়ার আতঙ্কে
ইলেকট্রনিক সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শার্প বিলুপ্ত হওয়ার আতঙ্কে
জাপানের ওসাকাভিত্তিক ইলেকট্রনিক সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শার্প বিলুপ্ত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে। পুরো বছরের জন্য ৫৬০ কোটি ডলার নিট লোকসানের পূর্বাভাস দেয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটি এ কথা জানায়। একই পথে যাচ্ছে জাপানের আরও দুই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সনি ও প্যানাসনিক। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
ভিডিও ক্যাম, টেলিভিশন, সেলফোন তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে শার্পের। বিশ্বের প্রথম ক্যামেরা সেলফোন এ প্রতিষ্ঠানের কারখানা থেকে বের হয়। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির এক শতাব্দী পূর্ণ হলো। আর এ সময়ই প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে। ফলে টিকে থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানটি এখন একীভূতকরণের কথা ভাবছে। এ লক্ষ্যে তাইওয়ানের হন হাইকে শেয়ারহোল্ডার বানানোর উদ্দেশ্যে কয়েক মাস ধরে আলোচনায় রয়েছে তারা। আগামী মার্চে এ-বিষয়ক চুক্তি হতে পারে বলে জানিয়েছে শার্প।
গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট তাকাসি ওকুদা জানান, ‘আমাদের করপোরেট গ্রুপ দ্বিতীয় প্রান্তিকে নিট এবং পরিচালনায় বড় আকারের লোকসান করেছে। অর্থপ্রবাহের মানও ঋণাত্মক হবে বলে আমাদের ধারণা। এ কারণে শার্প টিকে থাকতে পারবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা হচ্ছে।’
শার্পের মতো শতাব্দীপ্রাচীন প্রতিষ্ঠানের এ অবস্থা কেন হলো, তা নিয়ে ফুকোকু ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ুকি সাকুরাই বলেন, ভোক্তাদের চাহিদার ধরন সময়ের সঙ্গে বদলেছে। আর শার্পের মতো জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ববর্তী সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ফলে বর্তমান বাজারের হালচালের সঙ্গে
যত দ্রুত মানিয়ে নেয়া উচিত, সেটা তারা করতে পারেনি।
শার্পকে নিয়ে বিশ্লেষকরাও বেশ চিন্তিত। তাদের একজন টোকিওর কমন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী টেটসুরো আই বলেন, ‘এ বছর হয়তো শার্প বিলুপ্ত হবে না। তবে আগামী ৩ থেকে ৫ বছর প্রতিষ্ঠানটি টিকবে কি না, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ শার্পের হাতে বেশি সময় নেই। তারা যদি টিকে থাকতে চায়, তাহলে
ব্যবসার আকার ছোট করা, নগদ অর্থ সংরক্ষণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্য পণ্য প্রস্তুত ছাড়া
ভিন্ন উপায় নেই।’
এ অবস্থায় অর্থসংস্থানের জন্য শার্প কর্মী ছাঁটাই করছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইসহ টেলিভিশনের যন্ত্রাংশ সংযোজন কারখানা বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া জাপানে থাকা বিভিন্ন কার্যালয়ও ব্যাংকে বন্ধক রেখেছে শার্প। এসবের বিনিময়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এসব পদক্ষেপ শার্পের টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মিয়োজো অ্যাসেটের প্রধান নির্বাহী মাকোতো কিকুচি বলেন, ‘আমার মনে হয় না শার্পের কোনো ভবিষ্যৎ আছে। এখনো প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পাচ্ছে। তবে আগামী অর্থবছরে ঋণ নেয়ার জন্য কোনো সম্পদ সম্ভবত থাকবে না তাদের।’
জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শার্প ৭ হাজার ৪৮০ কোটি ইয়েন লোকসান করে। আগের বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল ৩ হাজার ১০ কোটি ইয়েন।
শুধু শার্প নয়, জাপানের ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠান সনি ও প্যানাসনিকের আর্থিক পরিস্থিতিও ভালো যাচ্ছে না। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সনি পরিচালনায় মুনাফা অর্জন করলেও তার পরিমাণ বেশি নয়। পুরো বছরের জন্য প্রতিষ্ঠানটি আনুমানিক ১৬৩ কোটি ডলার মুনাফা অর্জন করবে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটি এর আগে ১ কোটি প্লেস্টেশন পোর্টাল এবং প্লেস্টেশন ভিটা বিক্রি হবে বলে আশা করেছিল। কিন্তু বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিক্রির পরিমাণ কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া টেলিভিশন বিক্রির পরিমাণ আনুমানিক ১ কোটি ৪৫ লাখ ও কমপ্যাক্ট ডিজিটাল ক্যামেরার পরিমাণ আনুমানিক ১ কোটি ৬০ লাখ হবে। তবে সনির মতে প্লেস্টেশন কনসোল আগের মতোই আনুমানিক ১ কোটি ৬০ লাখ বিক্রি হবে।
এদিকে প্যানাসনিক এ বছর কম করে হলেও ১ হাজার কোটি ডলার হারানোর আশঙ্কা করছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন অবকাঠামো পুনর্বিন্যাসের কথা ভাবছে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির টেলিভিশন শাখা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পুরো বছরে আনুমানিক ৯০ লাখ টিভি বিক্রি করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। ৩৬ হাজার কর্মী এরই মধ্যে এ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে গেছেন। ছয় দশকের মধ্যে এবারই প্রথম শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারেনি প্যানাসনিক।